ঢাকা ০২:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি রাস্তা ‘লিজ’ দিয়ে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়

এসএমআর শহিদ
  • সময় ১১:১৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 96

হাসান মটরস

রাজধানীর মিরপুরের সরকারি অন্তত সাতটি রাস্তা মৌখিকভাবে ইজারা বা লিজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লেগুনা মালিক সমিতির বিরুদ্ধে। কথিত এসব ইজারা থেকে স্থানীয় ওই সংগঠনটি মাসে অন্তত ১৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে!
লেগুনা চালকরা জানান, প্রতিদিন একেকটি লেগুনার জন্য রুট ভেদে দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা ‘রাস্তা খরচ’ বাবদ মালিক সমিতিকে দিতে হয়। এই টাকা দিয়ে মূলত রুটগুলোতে লেগুনা চালানোর অনুমতি নিতে হয়।

রুটগুলো হলো- মিরপুর- ১ নাম্বার ট্রাফিক পুলিশের বক্সের সামনে থেকে মাজার রোড। মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেটের সামনে থেকে পর্বত হল। শাহ আলী মার্কেটের প্রিন্স বেকারির সামনে থেকে আমিনবাজার। মিরপুর-১ মিতালী মার্কেটের সামনে থেকে সাভার চারাবাগ। মিরপুর-১ নম্বর ক্যাপিটাল মার্কেটের সামনে থেকে রূপনগর। মিরপুর মিতালী মার্কেটের সামনে থেকে বিরুলিয়া বাজার পর্যন্ত।

যাত্রীরা বলছেন, সরকার বদল ঘটলেও এসব লেগুনার ব্যবস্থাপনায় কোন পরিবর্তন আসেনি। রাস্তা দখল করে রাজধানীর অনান্য এলাকার মতো মিরপুর এলাকায়ও চলছে অবৈধ লেগুনার অবাধ দাপট। যেগুলোর নেই ফিটনেস, রুট পারমিট কিংবা চালকের বৈধ লাইসেন্স। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এসব যানবাহনে।

এসব অবৈধ লেগুনার বিরুদ্ধে পুলিশের ভূমিকাও ইঁদুর-বিড়ালের মতো। চোখের সামনে এসব লেগুনা চলাচল করলেও; লাগাম টানতে ব্যর্থ তারা।

জানা যায়, প্রতিদিন একটি লেগুনার জমা এক হাজার টাকা। মিরপুরের সাতটি রুটে দেড় শতাধিক লেগুনা চলাচল করে। বিগত সরকারের সময় এসব চাঁদার সংক্ষিপ্ত নাম ছিলো ‘জিপি’; সরকার পরিবর্তনের পর সেই জিপি পাল্টে হয়েছে ‘রাস্তার খরচ’।
লেগুনা চালকরা জানান, হাসান মটরস; এই ব্যানারে প্রতিদিন মিরপুর-১ থেকে মাজার রোড পর্যন্ত চলে গড়ে ৩০টি লেগুণা। প্রতিটি গাড়ির জমা এক হাজার টাকা; যা দিতে হয় সরাসরি মালিককে। আরো আছে ২শ’ টাকা; ‘রাস্তার খরচ’ বাবদ এই টাকা চলে যায় মালিক সমিতির কাছে।

প্রত্যাশা পরিবহন; এই ব্যানারে শাহ আলী মার্কেট থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত প্রতিদিন আপডাউন করে ১৫টি লেগুনা। এখানের ‘রাস্তার খরচ’ অন্য এলাকার চেয়ে কিছুটা বেশি। রাস্তায় চাকা গড়ালেই মালিকের জমার বাইরে আরো আড়াইশ’ টাকা দিতে হয় কথিত লাইনম্যানের কাছে।

গত সরকারের সময় মিরপুর থেকে সাভার রুটে দাপিয়ে বেড়ানো ‘ডাইমেনশন পরিবহন’ ভোল পাল্টে হয়ে গেছে ‘বিসমিল্লাহ লেগুনা’। এই ব্যানারে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩৫টি লেগুনা আপডাউন করানো হয় এই রুটে। এখানেও লেগুনা প্রতি মালিক সমিতির নামে দিতে হয় ২শ’ টাকার চাঁদা।

মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেটের সামনে থেকে পর্বত হল পর্যন্ত লেগুনা পরিচালনা করে এপার-ওপার ব্যানারে। প্রতিদিন গড়ে চলে ৫০টি লেগুনা। রাস্তার খরচ বাবদ এখানে গুণতে হয় অতিরিক্ত ২শ’ টাকা। সাতটি রুটে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার এবং মাসে গড়ে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেটের সামনে পর্বত হল রুটের খবর। এই রুটে মালিক সমিতির হয়ে টাকা তোলে আহম্মেদ সিন্ডিকেট। মিরপুর-১ নাম্বার ট্রাফিক পুলিশের বক্সের সামনে থেকে মাজার রোড; এই রুটে টাকা তোলার দায়িত্বে আছেন কাশেমের নেতৃত্বে লালকুঠির শাহীন। শাহ আলী মার্কেটের প্রিন্স বেকারির সামনে থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত রুটের দায়িত্বে সিরাজ ও মমিন। মিরপুর-১ নম্বরের দায়িত্বে আছেন দুই স্বপনের বাহিনী। মিরপুর-১ মিতালী মার্কেটের সামনে থেকে সাভার চারাবাগ; এই রুটের দায়িত্বে আছেন ইসমাইল হুজুর।

রাস্তা সরকারের তাহলে ‘রাস্তার খরচ’ নামে এসব অর্থ যায় কোথায়? এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্যাশা পরিবহনের মালিক সিরাজ উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

অভিযোগ রয়েছে, মালিক সমিতির নামে এসব খরচ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যার একটি অংশ মালিক সমিতির নেতারা, একটি অংশ ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় থানা পুলিশ আর একটি অংশ চলে যায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে।

টি আই মাহফুজ
টি.আই মাহফুজ

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পর্বত ও গাবতলী এলাকার ট্রাফিক পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বরং তিনি প্রতিবেদককে জানান, ‘নিউজ করতে মনে চাইলে করে দেন।’ এই টি. আই মাহফুজের বিষয়ে আরো বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মিরপুর দিয়াবাড়ি টিআই গোলাম মাওলার সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

সরকারি রাস্তা ‘লিজ’ দিয়ে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়

সময় ১১:১৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

রাজধানীর মিরপুরের সরকারি অন্তত সাতটি রাস্তা মৌখিকভাবে ইজারা বা লিজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লেগুনা মালিক সমিতির বিরুদ্ধে। কথিত এসব ইজারা থেকে স্থানীয় ওই সংগঠনটি মাসে অন্তত ১৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে!
লেগুনা চালকরা জানান, প্রতিদিন একেকটি লেগুনার জন্য রুট ভেদে দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা ‘রাস্তা খরচ’ বাবদ মালিক সমিতিকে দিতে হয়। এই টাকা দিয়ে মূলত রুটগুলোতে লেগুনা চালানোর অনুমতি নিতে হয়।

রুটগুলো হলো- মিরপুর- ১ নাম্বার ট্রাফিক পুলিশের বক্সের সামনে থেকে মাজার রোড। মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেটের সামনে থেকে পর্বত হল। শাহ আলী মার্কেটের প্রিন্স বেকারির সামনে থেকে আমিনবাজার। মিরপুর-১ মিতালী মার্কেটের সামনে থেকে সাভার চারাবাগ। মিরপুর-১ নম্বর ক্যাপিটাল মার্কেটের সামনে থেকে রূপনগর। মিরপুর মিতালী মার্কেটের সামনে থেকে বিরুলিয়া বাজার পর্যন্ত।

যাত্রীরা বলছেন, সরকার বদল ঘটলেও এসব লেগুনার ব্যবস্থাপনায় কোন পরিবর্তন আসেনি। রাস্তা দখল করে রাজধানীর অনান্য এলাকার মতো মিরপুর এলাকায়ও চলছে অবৈধ লেগুনার অবাধ দাপট। যেগুলোর নেই ফিটনেস, রুট পারমিট কিংবা চালকের বৈধ লাইসেন্স। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এসব যানবাহনে।

এসব অবৈধ লেগুনার বিরুদ্ধে পুলিশের ভূমিকাও ইঁদুর-বিড়ালের মতো। চোখের সামনে এসব লেগুনা চলাচল করলেও; লাগাম টানতে ব্যর্থ তারা।

জানা যায়, প্রতিদিন একটি লেগুনার জমা এক হাজার টাকা। মিরপুরের সাতটি রুটে দেড় শতাধিক লেগুনা চলাচল করে। বিগত সরকারের সময় এসব চাঁদার সংক্ষিপ্ত নাম ছিলো ‘জিপি’; সরকার পরিবর্তনের পর সেই জিপি পাল্টে হয়েছে ‘রাস্তার খরচ’।
লেগুনা চালকরা জানান, হাসান মটরস; এই ব্যানারে প্রতিদিন মিরপুর-১ থেকে মাজার রোড পর্যন্ত চলে গড়ে ৩০টি লেগুণা। প্রতিটি গাড়ির জমা এক হাজার টাকা; যা দিতে হয় সরাসরি মালিককে। আরো আছে ২শ’ টাকা; ‘রাস্তার খরচ’ বাবদ এই টাকা চলে যায় মালিক সমিতির কাছে।

প্রত্যাশা পরিবহন; এই ব্যানারে শাহ আলী মার্কেট থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত প্রতিদিন আপডাউন করে ১৫টি লেগুনা। এখানের ‘রাস্তার খরচ’ অন্য এলাকার চেয়ে কিছুটা বেশি। রাস্তায় চাকা গড়ালেই মালিকের জমার বাইরে আরো আড়াইশ’ টাকা দিতে হয় কথিত লাইনম্যানের কাছে।

গত সরকারের সময় মিরপুর থেকে সাভার রুটে দাপিয়ে বেড়ানো ‘ডাইমেনশন পরিবহন’ ভোল পাল্টে হয়ে গেছে ‘বিসমিল্লাহ লেগুনা’। এই ব্যানারে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩৫টি লেগুনা আপডাউন করানো হয় এই রুটে। এখানেও লেগুনা প্রতি মালিক সমিতির নামে দিতে হয় ২শ’ টাকার চাঁদা।

মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেটের সামনে থেকে পর্বত হল পর্যন্ত লেগুনা পরিচালনা করে এপার-ওপার ব্যানারে। প্রতিদিন গড়ে চলে ৫০টি লেগুনা। রাস্তার খরচ বাবদ এখানে গুণতে হয় অতিরিক্ত ২শ’ টাকা। সাতটি রুটে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার এবং মাসে গড়ে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেটের সামনে পর্বত হল রুটের খবর। এই রুটে মালিক সমিতির হয়ে টাকা তোলে আহম্মেদ সিন্ডিকেট। মিরপুর-১ নাম্বার ট্রাফিক পুলিশের বক্সের সামনে থেকে মাজার রোড; এই রুটে টাকা তোলার দায়িত্বে আছেন কাশেমের নেতৃত্বে লালকুঠির শাহীন। শাহ আলী মার্কেটের প্রিন্স বেকারির সামনে থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত রুটের দায়িত্বে সিরাজ ও মমিন। মিরপুর-১ নম্বরের দায়িত্বে আছেন দুই স্বপনের বাহিনী। মিরপুর-১ মিতালী মার্কেটের সামনে থেকে সাভার চারাবাগ; এই রুটের দায়িত্বে আছেন ইসমাইল হুজুর।

রাস্তা সরকারের তাহলে ‘রাস্তার খরচ’ নামে এসব অর্থ যায় কোথায়? এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্যাশা পরিবহনের মালিক সিরাজ উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

অভিযোগ রয়েছে, মালিক সমিতির নামে এসব খরচ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যার একটি অংশ মালিক সমিতির নেতারা, একটি অংশ ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় থানা পুলিশ আর একটি অংশ চলে যায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে।

টি আই মাহফুজ
টি.আই মাহফুজ

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পর্বত ও গাবতলী এলাকার ট্রাফিক পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বরং তিনি প্রতিবেদককে জানান, ‘নিউজ করতে মনে চাইলে করে দেন।’ এই টি. আই মাহফুজের বিষয়ে আরো বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মিরপুর দিয়াবাড়ি টিআই গোলাম মাওলার সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।