সয়াবিন তেলের বাজারে উত্তাপ কমছে না
- সময় ০৬:০০:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 19
সয়াবিন তেলের বাজারে উত্তাপ বেড়েই চলেছে। রাজধানী ও আশেপাশের শহরতলি থেকে গ্রামেও একই অবস্থা। কিছুতেই যেন কমছে না সয়াবিন তেলের দাম।
গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন রোডসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সৈকত পিপুল। সব সময় নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির বোতলজাত ভোজ্যতেল কেনেন তিনি। কিন্তু দুই-তিন দিন আগে দোকানে দোকানে ঘুরেও সেসব ব্র্যান্ড না পেয়ে ভোজ্যতেলের বাজারে নতুন নাম লেখানো এক কোম্পানির তেল কিনতে হয় তাকে; দামও গুনতে হয় বেশি।
সৈকত বলেন, আমি যেসব কোম্পানির সয়াবিন তেল কিনি, সেগুলো এক লিটার ১৬৭ থকে ১৭০ টাকায় পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ‘অখ্যাত’ কোম্পানির এই এক লিটার তেল কিনতে লাগল ১৯০ টাকা।
রাজধানীর মহাখালী কাঁচা বাজারে তার মত একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর কামাল। তিনি বলেন, আমি বোতলজাত তেল পাচ্ছি না। দুই-একটি দোকানে পেলেও সেগুলো অপরিচিত কোম্পানির; দামও বেশি। বিকল্প হিসেবে সরিষার তেল কিনলাম। এই তেলের দামও তুলনামূলক বেশি।
রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ বাজারেই দুই-তিন মাস ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে, যা সম্প্রতি আরও তীব্র হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে কাজে আসছে না শুল্ক কমানোসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগও।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ানোর যুক্তিতে কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়াতে চাইছে। কিন্তু বাড়াতে পারছে না। এ কারণে তারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। সরকার দাম না বাড়ানো পর্যন্ত এ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
রাজধানীর কিছু কিছু দোকানে এমন বোতলজাত তেল মিলছে, যেগুলোর মূল্য ঘষে তুলে ফেলা হয়েছে, যেন বেশি দামে বিক্রি করা যায়। এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ক্রেতা-বিক্রেতারা বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন।
দাম কমানোর লক্ষ্যে গত অক্টোবরে সয়াবিনের উৎপাদন ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ মওকুফ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
একই মাসে সয়াবিন আমদানিতে ভ্যাট কমানো হয় ১০ শতাংশীয় পয়েন্ট। কিন্তু সরকারের এসব উদ্যোগও বাজারে বোতলজাত তেলের সরবরাহ বাড়াতে পারেনি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রূপচাঁদা এক লিটার সয়াবিন তেলের গায়ের দাম ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮১৮ টাকা। কোনো কোনো দোকানে এ কোম্পানির তেল মিললেও লিটারে বেশি নেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
বাজারে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ১৭০-১৭৫ টাকা।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের ভোজ্যতেলের পাইকারি বিক্রেতা মহিউদ্দিন বলেন, তেলের বাজারে সংকট চলছে। ডিলাররা আমাদের ঠিকমত তেল দিতে পারছে না। তারা অর্ডার নিলেও আমাদের না দিয়ে বাইরে বেশি দামে তেল বিক্রি করে। ফলে আমরা চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছি না।
সরকারের সঙ্গে তেলের দাম নিয়ে বড় কোম্পানিগুলোর হয়ত বনিবনা হচ্ছে না। শুনেছি তারা দাম বাড়াতে চায়। সেটা সমাধান করা গেলে একদিনেই সংকট কেটে যাবে।
একই মার্কেটের সোনালী ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী আবুল কাসেম বলেন, ডিলাররাও মাল পাচ্ছেন না ঠিকমত। তারা না পেলে বাজারে সরবরাহ করবে কীভাবে? এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
দেশে ভোজ্যতেলের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও সয়াবিন তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। রোববার সেখানে ফ্রেশ গ্রুপের খোলা সয়াবিনের লিটারপ্রতি দাম ছিল ১৭৪ টাকা ৭০ পয়সা, সিটি গ্রুপের ১৭৪ টাকা ১৬ পয়সা এবং কর্ণফুলীর দাম ছিল ১৭৩ টাকা ১৬ পয়সা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, এসব কোম্পানির তেলের দাম এক দিনের ব্যবধানে প্রতি মণে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে।
খোলা বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকটের বিষয়ে এদিন সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের মুখোমুখি হন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তারা বিস্তারিত জানাবে।কিন্তু আমরা মনে করছি না বাজারে সয়াবিন তেলের কোনো সংকট আছে; যথেষ্ট সয়াবিন তেল আছে।’
তিনি বলেন, সামনে রমজান মাসে সরবরাহ সংকট যেন না হয়, সেজন্য সরকার এলসি খোলা সহজ করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারদর মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে।