সংঘাতের সৃষ্টি করতে পারে
সমুদ্রের পর পার্বত্য অঞ্চলে বিদেশি কোম্পানি!
- সময় ১০:৪২:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
- / 43
ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ব মোড়লদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ওপর তীক্ষ্ম নজরদারি ছিল পরাশক্তির কয়েকটি দেশের। সমুদ্রের পাশাপাশি অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে চোখ রয়েছে বিদেশি কোম্পানির।
প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তবু দেশের পার্বত্য অঞ্চল রয়ে গেছে অপেক্ষাকৃত অনাবিষ্কৃত। বর্তমানে পেট্রোবাংলা নতুন করে পার্বত্য অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ কি দেশের জ্বালানি খাতের জন্য আশার আলো দেখাবে, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে?
পার্বত্য অঞ্চল, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য মেলে ধরেছে তার সুষমা। এই এলাকায় রয়েছে গ্যাসের বিপুল সম্ভাবনা। পেট্রোবাংলা এবার ব্লক ২২বি অঞ্চলকে লক্ষ্য করে কাজ শুরু করতে চায়। এই ব্লকটি বান্দরবান, কক্সবাজার ও কাপ্তাইয়ের কিছু অংশজুড়ে বিস্তৃত।
পাশের দেশ ভারতের ত্রিপুরায় মাত্র ১৬০টি কূপ খননের মাধ্যমে ১১টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪টি কূপ খনন করেছে বাংলাদেশ। অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অঞ্চল দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূতাত্ত্বিক গঠন গ্যাসের সন্ধানের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিদেশি কোম্পানিকে এই অঞ্চলে কাজ করতে উৎসাহিত করা উচিত।
পেট্রোবাংলা জানায়, প্রায় তিন দশক পর অনশোরের জন্য প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট বা পিএসসি হালনাগাদ করা হয়েছে। নতুন চুক্তিতে এমন প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বাড়াবে।
ব্লক ২২বি অঞ্চলটি ঘিরে উচ্চাশা বেশি। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন অ্যাসোসিয়েটস একটি গবেষণায় উল্লেখ করেছিল, এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় গ্যাসের সম্ভাবনা প্রবল।
বরকল, মাতামুহুরী, গিলাছড়ি – এমন এলাকায় অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করা হলেও, সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি।
দেশে গত এক দশকে গ্যাস উৎপাদন ক্রমশ কমেছে। উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি করেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ফলে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার এখন সময়ের দাবি।
তবে নতুন উদ্যোগের সাথে রয়েছে চ্যালেঞ্জ। পাহাড়ি এলাকায় পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব এড়ানো বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, তারা ইতোমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ কার্যক্রম চূড়ান্ত করেছে। আগামী মার্চের মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুতই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিদ্যমান।
গ্যাস অনুসন্ধানের মতো প্রকল্পগুলো এই গোষ্ঠীগুলোর জন্য নতুন লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ বা সহিংসতার মাধ্যমে এই কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া অনুসন্ধান কার্যক্রমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভূমি এবং জীবিকায় প্রভাব পড়তে পারে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জমি অধিগ্রহণ, পরিবেশগত ক্ষতি বা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের অভাবে অসন্তুষ্ট হতে পারে, যা স্থানীয় সংঘাতের সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া ব্লক ২২বি সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলের গ্যাস ক্ষেত্রের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। এটি বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদের উপর আন্তর্জাতিক স্বার্থ তৈরি করতে পারে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে জটিলতা বাড়াতে পারে।