সচিবালয় কেন্দ্রিক বিক্ষোভ থামছেই না
- সময় ০৫:৩৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫
- / 30
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সচিবালয় যেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আগুনের ঘটনার পর আবারও সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। এর আগে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষীও হয়েছিল সচিবালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে সরাসরি প্রবেশ করে আন্দোলন করেছিল দাবি আদায়ের লক্ষ্যে।
তবে বছরের প্রথম দিনেই অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়া ৪৩তম বিসিএসের চাকরিপ্রার্থীরা। ফলে সচিবালয় কেন্দ্রিক বিক্ষোভ আন্দোলন কোনোভাবেই থামছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (০১ জানুয়ারি) দুপুরে তারা সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন। এরপর সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইছেন এবং অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে গত ৩০ ডিসেম্বর নতুন করে আবার প্রজ্ঞাপন জারি হয়। নতুন এ প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়েন ১৬৮ জন। এর আগে এই বিসিএস থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া ২ হাজার ১৬৩ জনের মধ্যে থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্যাডারে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ১৫ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন করে নিয়োগ দিয়েছিল।
সবশেষ প্রজ্ঞাপনের পর ৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়লেন মোট ২৬৭ জন। পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর পিএসসি চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করেছিল।
৩০ ডিসেম্বরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসির সুপারিশ পাওয়া ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীকে সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের প্রবেশ পদে নিয়োগ দেওয়া হল।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বরে, যাতে অংশ নিতে বিসিএসের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আবেদন ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জনের জমা পড়েছিল। আর পরীক্ষায় মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী অংশ নেন।
এদিকে, বাদ পড়া প্রার্থীদের কয়েকজন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে গিয়ে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সবার আবেদন জমা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সচিবালয়ের ভিতরেই আন্দোলন হয়েছে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ আমলে অবসরে যাওয়া বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার পর বঞ্চিত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা সচিবের দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। তাদের অনেকেই মেঝেতে বসেছিলেন।
সেদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জনপ্রশাসন সচিব তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দপ্তরের বাইরে বের হয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন।
এ সময় বিক্ষুব্ধ বঞ্চিত কর্মকর্তারা উচ্চস্বরে সচিবের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। কেউ কেউ জনপ্রশাসন সচিবকে পদত্যাগ করতে বলেন।
তখন জনপ্রশাসন সচিব তাদের জানান, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তার কাছ থেকে কোনো ফাইল আসেনি। ওই ফাইল আসার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তা প্রসেস করবেন।
এরপরও সচিবের সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন অবস্থান নেওয়া কর্মকর্তারা। পরে জনপ্রশাসন সচিব নিজের দপ্তরে ঢুকে পারেন।
গত ১০ ডিসেম্বর পদোন্নতিবঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন পেশ করে। কমিটির প্রধান ও সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান কমিটির অন্য সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করেন।
কমিটি ৭৬৪ জনকে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে।
এরমধ্যে সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা এবং সর্বশেষ বিসিএস ক্যাডারদের এই আন্দোলন ঘিরে সচিবালয় কেন্দ্রিক বিক্ষোভ আন্দোলন থামার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।