জমি অধিগ্রহণে অর্থ লোপাট
সক্রিয় প্রকৌশলী-সার্ভেয়ার-কানুনগো-দালাল সিন্ডিকেট
- সময় ০৫:০১:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি ২০২৫
- / 168
প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে সরকারকে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদের বাইরেও অধিগ্রহণ করতে হয় ব্যক্তিগত জমি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ভূমি মন্ত্রণালয় এর বাইরে নয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেই গড়ে উঠেছে প্রকৌশলী-সার্ভেয়ার, কানুনগো- দালালদের সমন্বয়ে ভঙ্ককর সিন্ডিকেট। এই অশুভ সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকায় জমির প্রকৃত মালিক নায্য দাম পাচ্ছে না। কারসাজির মাধ্যমে সওজ-গণপূর্তের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং বহিরাগত কয়েকজন দালালের কারণে জিম্মি হয়ে পরেছেন অনেকে। তাদের হাত অনেক লম্বা হওয়াতে সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলেন অদৃশ্য এক জাদুবলে। সংশ্লিষ্টরা দোষীদের শাস্তিও দাবি করেছেন।
ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে এই অশুভ সিন্ডিকেট নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন বাংলা অ্যাফেয়ার্সের আব্দুস সালাম মিতুল এবং এস এম আর শহিদ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণের এই প্রক্রিয়ার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কয়েকটি ধাপে জরিপ সমীক্ষা ও ফাইল চালাচালির পর স্থাপনা, জমি, কিংবা সম্পদ অধিগ্রহণে পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরে এল.এ বিল দেওয়া হয়।
আর এই অধিকগ্রহণ কর্মযজ্ঞের ধাপে-ধাপে চলে টাকার খেলা। টাকা দিলেই আপনার সম্পদের দাম বেড়ে হবে দ্বিগুণ! নগদ অর্থ না থাকলে দালাল সপন চুক্তি করবে আপনার সাথে। ব্যাপারটা যেন সাপও মরলো- লাঠিও ভাঙলো না! নজরদারীর অভাবে দীর্ঘদিন চক্রটি সরকারি অর্থ ও রাজস্ব লোপাটে ব্যস্ত।
গাজীপুরের স্বপন ওরফে দালাল স্বপন ও তার বিশ্বস্ত সহযোগী সুমন। বিভিন্ন দপ্তরে বড় বড় কর্মকর্তা তাদের জানাশোনা। ধরুন সরকারের সড়ক ও জনপদের রাস্তা নির্মাণে জমির প্রয়োজন। দপ্তরের মন্ত্রী, সচিব বা প্রধান প্রকৌশলীর জানার আগেই স্বপন খবর রেখেছে কোথা থেকে কোন পর্যন্ত, কার কতটুকু জমি অধিগ্রহণ হবে।
জেলা প্রশাসক সার্ভেয়ার শহিদুলের দরজায় ফাইল নিয়ে দালাল স্বপনের তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে। সরেজমিনে জায়গা পরে দেখলেও চলবে! টাকার অংক বুঝে পেলেই নাকি নয় ছয় করতে সিদ্ধহস্ত তিনি। পরের ধাপে রয়েছেন কানুনগো মো. বিল্লাল হোসেন। স্বপনের নগদ অর্থে বড় বাবুরা ম্যানেজ অন্যদিকে মালিক ঝামেলাবিহীনভাবে বেশি দাম পেয়ে মিলেমিশে সবাই খুশি।
২৩ শে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ১৪ ই অক্টোবর ২০২৪। যানজট নিরসন ও ভোগান্তি কমাতে পরিকল্পনা কমিশন ১৩ কিলোমিটার মহাসড়ক পিপিপি ভিত্তিতে হাতিরঝিল রামপুরা সেতু, বনশ্রী- শেখেরজায়গা- আমুলিয়া, ডেমরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। ১ হাজার ২০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করা হবে অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণে।
কিভাবে সরকারি টাকা লুটে খাওয়া হয় জেনেছে বাংলা অ্যাফেয়ার্স। মিতুল এবং শহিদের অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে এসেছে, নিয়ম হলো এলাইনমেন্ট ব্যক্তির যত ফিট অংশ লাগবে ঠিক ততটুকুর বিল পাবে জমির মালিক। সড়ক ও জনপদের প্রধান কার্যালয়ের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন, গণপূর্তের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ও দালাল স্বপন ৩০ শতাংশ ও মালিকের ৭০ শতাংশ হিসেবে দীর্ঘদিন চলছে এমন অর্থ লোপাট। প্রকল্প পরিচালক মো.এনামুল হক ও প্রকল্প ব্যাবস্থাপক মো. মাইদুল ইসলাম সহ উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন ৮/১০ ফিট জায়গার বিপরীতে পুরো ভবন, জমি ও স্থাপনার ক্ষতিপুরণের দৃশ্যমান দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা কামাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগে স্বপনের গাজীপুর বিআরটিএ প্রকল্প ও সড়ক বিভাগ নরসিংদী সার্ভেয়ার থাকার সময়ে উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন, ডিসি অফিসের অপর এক সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর আলমসহ সিন্ডিকেটের অর্থ লোপাটে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও বহাল তবিয়তে চলছে সবই।
উক্ত বিষয়ে উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন এর মুঠোফোনে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ওই অফিস থেকে পোস্টিং হয়েছে আপনি অফিসে গিয়ে যারা দায়িত্ব আছে তাদের সঙ্গে কথা বলুন।
বাংলা অ্যাফেয়ার্সের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সম্প্রতি ২৫৩ কোটি টাকার এল.এ কেস ডিসি অফিস ঢাকায় অধিগ্রহণ পাশের জন্য জমা হয়েছে। ০৩.১৫.০৪/২০২২-২০২৩ নম্বর এল.এ কেসটি আমুলিয়া মৌজার আইটি মডেল কলেজ ও হাসপাতালের ২৫০৮ নম্বর দাগের ০.০০৬৪ শতাংশের ০.০০১১ শতাংশ অধিগ্রহণ বিল পাশের অপেক্ষায়। যাহার টি.আই.এন নম্বর -৭৩১৩৮৪৩৭২৪৫। সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর আলমের যোগসাজশে ১৬ কোটি টাকার আরো একটি অধিগ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এল.এ কেস নম্বর- ০৩.১৫.০৫/২০২২-২০২৩, নন্দীপাড়া মৌজার ১২৭৮৮ নং দাগের ০.৫৬৪৮ শতাংশের জমিটির ০.০৬৩০ শতাংশের ভূমিমুল্যের যে ক্ষতিপূরণ আদায় হচ্ছে তার সবই নির্ধারণ হচ্ছে স্বপন গংদের ইশারায়। কেস নম্বরটির মন্তব্যের কলামে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে স্থাপনা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রকৃত মূল্যের অধিক দাম বা ভ্যালুয়েশনের অপচেষ্টার বিষয়ে। নন্দী পাড়ার মরহুম সিরাজ মিয়ার ছেলে মো. আজগর হোসেনের এ জমির অধিগ্রহণে দেখানো সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমি ডিসি অফিসে আছি পরে কথা বলব।
উক্ত অভিযোগের বিষয়ে সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অভিযোগ বিষয়ে স্বপনের বক্তব্য জানতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করলেও পাওয়া যাইনি কোন প্রতিক্রিয়া।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারী অর্থ লোপাটের এসব অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর জানতে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান বলেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে নেওয়া হবে ব্যাবস্থা।
বহুদিন ধরে চলমান এল.এ শাখার সিন্ডিকেট ও সরকারি অর্থ হাতিয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ ও জোরালো নজরদারির অভাবে একদিকে কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো ফুলেফেঁপে উঠছে তাদের সম্পদ। অন্যদিকে অপচয়কৃত এমন অর্থে খরচ বাড়ছে প্রকল্প সমুহে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজস্ব খাত।
উক্ত বিষয়ে সার্ভেয়ার শামসুল এর কাছে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনারা অফিসে আসুন চা খেতে খেতে কথা বলি।
কানুনগো বেলাল হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সার্ভেয়ার শামসুল হক এবং কানুনগো জাহাঙ্গীর আলম এর সাথে কথা বলুন।