শ্বশুরকে পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ বছর চাকরি
- সময় ০৮:৩৩:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
- / 46
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাফিয়া খাতুন(মিতু) শ্বশুরকে পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি কর্মরত আছেন ৯ বছর ধরে। একাধিক তদন্তে প্রমাণিত হলেও নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা। তবে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে গতকাল শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামান জানিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ভাটারা ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ডের জুলারখুপি গ্রামের বাসিন্দা।তার পরিবারে রয়েছে দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় মেয়ে নাম রহিমা আক্তার ও দ্বিতীয় ছেলের নাম শফিকুল ইসলাম (খোরশেদ) এবং ছোট ছেলের নাম খায়রুল ইসলাম (খোকন মিয়া)। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের ছোট ছেলে খায়রুল ইসলাম ওরফে খোকন মিয়া মাদারগঞ্জ উপজেলার সরদাবাড়ী গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে মাফিয়া খাতুন মিতু’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিবাহের সময় মাফিয়া খাতুন মিতু রায়েরছড়া সরদাবাড়ী মডেল একাডেমী স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। নবম শ্রেণীতে পড়াশোনাকালীন সময়ে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফরমে (নং- ৬৫১৮৯৯) তাহার পিতার নাম (হাসান আলীর) পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা শশুর (আব্দুর রহমান)শাশুড়ি শরিফা এর নাম লিপিবদ্ধ করেন। এদিকে শুরুতে তিনি ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন তার আপন পিতা মো. হাসান আলী মাতা মালেকা বেগম পরিচয়ে। পরে তারপর মাফিয়া আক্তার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রেও তাহার পিতা মাতার নামে পরিবর্তে শ্বশুর শাশুড়ির নাম ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র করেন। যাহার জাতীয় পরিচয়পত্র (নং-৮২২২০৯৫৬১৭)। পরে ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তখন থেকে সার্টিফিকেট অনুযায়ী সে জন্মদাতা পিতা হাসান আলীর পরিবর্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ও মাতা শরিফা বেগম এদের জন্মদাতা মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়।
সেই সুবাদে মাফিয়া খাতুন (মিতু) মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৭/০১/১৬ ইং তারিখে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন।তিনি বর্তমানে উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ৬১ নং মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ৯ বছর ধরে কর্মরত আছেন। কাগজপত্রের সেই সূত্রে ইসলামিক ভাবে আপন ভাইয়ের সাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন যাপন করছেন তারা। এতে তাদের ঘরে দুটি সন্তানের জন্ম হয়। জন্মদাতা পিতা বানিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যে শিক্ষক মহৎ পেশায় নিয়োজিত আছে তার কাছ থেকে কোমলমতি শিশুরা কি শিখতে পারে। জালিয়াতির এমন ঘটনার ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও স্থানীয় পত্রিকা টিভি এবং অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা ইয়াসমিন সরোজমিনে তদন্ত করে ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করেন।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন আবারো জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।পরে ৩ ডিসেম্বর জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তদন্ত গিয়ে সত্যতা পেয়ে ৯ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
এ বিষয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর ভাসুর মো. শফিকুল ইসলাম খোরশেদ মুঠোফোনে বলেন, মাফিয়া খাতুন মিতু আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী।সে তার কাগজপত্রে আমার বাবার নাম ব্যবহার করতে পারে না। আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তার জন্মদাতা হতে পারে না।বিষয়টি আমি যেদিন থেকে জানতে পেরেছি সেদিন থেকে নিজেই নিজের বাড়ীতে লজ্জায় যায় না।
এ বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ জানান,এ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা থাকায় অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামান জানান, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।আপনার থেকেই মাত্র অবগত হলাম। প্রতিবেদন আসা মাত্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।