০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ১২:২৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
  • / 30

অগ্নিঝরা মার্চ

আজ ১ মার্চ, মহান স্বাধীনতার মাসের প্রথম দিন। বাঙালি জাতির গৌরবের মাস, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনার মাস। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসেই বাঙালির দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের পরিণতি হিসেবে শুরু হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। এই মাসেই পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং গর্জে ওঠে মুক্তিকামী জনতা।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণে পাকিস্তানি শাসকদের হুঁশিয়ারি দেন। তার সেই বজ্রকণ্ঠের আহ্বানে বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার আগুন। এর আগে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, এবং ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের ধাপে ধাপে এগিয়ে চলার পথ। একাত্তরের মার্চ মাস সেই সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বের সূচনা করে।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ দেশজুড়ে আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণে ঘোষণা দেন, ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, পিপলস পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অধিবেশনে অংশগ্রহণে অনাগ্রহী, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই ঘোষণার পরপরই ঢাকাজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়ার ঘোষণার পরপরই হাজার হাজার দর্শক খেলা ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। মুহূর্তেই পল্টন-গুলিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের আগুন, যা ধীরে ধীরে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।

এরপর একে একে পার হতে থাকে উত্তাল ২৫ দিন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে গণহত্যা শুরু করে। সেই রাতেই শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিজয়ের সূর্য উঁকি দেয় ১৬ ডিসেম্বর। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেয় স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

এই আগুন ঝরা মার্চ বাঙালির সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও গৌরবের প্রতীক— যা চিরকাল অনুপ্রেরণা জোগাবে মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে।

শেয়ার করুন

শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ

সময় ১২:২৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

আজ ১ মার্চ, মহান স্বাধীনতার মাসের প্রথম দিন। বাঙালি জাতির গৌরবের মাস, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনার মাস। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসেই বাঙালির দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের পরিণতি হিসেবে শুরু হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। এই মাসেই পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং গর্জে ওঠে মুক্তিকামী জনতা।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণে পাকিস্তানি শাসকদের হুঁশিয়ারি দেন। তার সেই বজ্রকণ্ঠের আহ্বানে বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার আগুন। এর আগে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, এবং ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের ধাপে ধাপে এগিয়ে চলার পথ। একাত্তরের মার্চ মাস সেই সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বের সূচনা করে।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ দেশজুড়ে আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণে ঘোষণা দেন, ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, পিপলস পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অধিবেশনে অংশগ্রহণে অনাগ্রহী, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই ঘোষণার পরপরই ঢাকাজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়ার ঘোষণার পরপরই হাজার হাজার দর্শক খেলা ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। মুহূর্তেই পল্টন-গুলিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের আগুন, যা ধীরে ধীরে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।

এরপর একে একে পার হতে থাকে উত্তাল ২৫ দিন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে গণহত্যা শুরু করে। সেই রাতেই শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিজয়ের সূর্য উঁকি দেয় ১৬ ডিসেম্বর। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেয় স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

এই আগুন ঝরা মার্চ বাঙালির সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও গৌরবের প্রতীক— যা চিরকাল অনুপ্রেরণা জোগাবে মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে।