শুটিং বন্ধ, কেউ চালাচ্ছেন চায়ের দোকান, কেউ বিক্রি করছেন সবজি ভ্যানে
- সময় ০৭:২২:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
- / 234
ঢাকার বেগুনবাড়ী এলাকায় হাতিরঝিলের পাশে চা বিক্রি করছেন হাফিজুর রহমান, তবে এটিই তার আসল পেশা নয়। তিনি আসলে শুটিংয়ের প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। শুটিং বন্ধ থাকায় জীবিকার তাগিদে তিনি এই দোকান চালাতে বাধ্য হয়েছেন। প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে নিবন্ধিত প্রায় ২৫০ জন সদস্যের মধ্যে এখন নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন মাত্র ২০-৩০ জন, বাকিরা মূলত বেকার। অনেকেই এখন চা বিক্রি, সবজি বিক্রি, কিংবা মোটরসাইকেল ভাড়া চালানোর মতো বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
১৯৯৭ সালে প্রোডাকশন বয় হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন হাফিজুর; পরে দক্ষতার ভিত্তিতে প্রোডাকশন ম্যানেজার হয়ে যান। আজিজুর রহমান, মতিন রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকসহ বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন নিয়মিত। একসময় পরিবারের সচ্ছলতা ছিল, তবে এখন জীবনে এসেছে বড় পরিবর্তন, এবং প্রতিদিন জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
হাফিজুর বললেন, ‘চার সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছি। কখনো ভাবিনি, এমন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। মাসে তিন থেকে চার দিন কাজ থাকলে বাকি সময় দোকান চালাই। পরিবারের জন্য মাস শেষে টাকা পাঠাতে হয়। অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’
তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আবু জাফর, যিনি বললেন, সংগঠনের ৮০ শতাংশেরও বেশি সদস্য বেকার। জুলাই মাস থেকে কাজ নেই বললেই চলে। অন্যান্য সেক্টর চালু হলেও প্রোডাকশন টিম পুরোপুরি শুটিংয়ে ফিরতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ প্রোডাকশন বয় এখন জীবিকার তাগিদে অন্য কাজে যুক্ত হয়েছেন। অনিয়মিত এই আয়ে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পেশায় কাজের সংকট এবং অনিশ্চয়তা বেড়েই চলেছে। অনেকে দিনভর হাসিমুখে থাকলেও, রাতে দুশ্চিন্তা কাটে না। শুটিংয়ের কাজ একেবারেই নেই, যা ভীষণ উদ্বেগের বিষয়।’
রিপন মিয়া, ২৫ বছর ধরে প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। একসময় নিয়মিত কাজ ছিল, তারকাদের সান্নিধ্যও ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কাজের অভাবে সঞ্চিত টাকাও শেষ। সাম্প্রতিক সময়ে শুটিং বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে উত্তরা এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। রিপন বলেন, ‘আমরা প্রোডাকশনের লোকেরা সবসময় অবহেলিত। ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেও আজ পরিবারের জন্য সংগ্রাম করছি। আমাদের কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই, দেখারও কেউ নেই। এমনকি এই কাজেও প্রতিযোগিতা বাড়ছে, টিকে থাকা কঠিন।’
মগবাজার এলাকায় কেউ কেউ চা বিক্রি করছেন, আবার কেউ এফডিসিতে কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন। এরশাদ মিয়া জানান, ‘কাজ না থাকায় অনেকেই গ্রামে ফিরে গেছে। আমরাও ধারদেনায় চলছি।’ একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, ‘করোনাকালীন পরিস্থিতির চেয়েও এখন অবস্থা খারাপ। তখন কিছু সহায়তা পেয়েছিলাম, কিন্তু এখন সেই সুযোগও নেই। হয়তো আমাদের এই পেশা একেবারেই তুলে দেওয়ার সময় এসেছে।’