‘শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামকে কলুষিত করছে’

- সময় ১১:০৬:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 38
সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রদলকে দোষী প্রমাণের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথিত কিছু শিক্ষার্থী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীরা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের নেতারা। তাদের অভিযোগ, কুয়েট শাখায় এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ওমর ফারুক এবং কেন্দ্রীয়ভাবে এটি মনিটর করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) গেমস রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা এসব অভিযোগ করেন। তারা দাবি করেন, ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মব তৈরি ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। বিকেলে নেতা-কর্মীরা টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্যে সমবেত হন।

সংঘর্ষের পেছনে কারা?
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, “গতকাল মঙ্গলবারের সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তারা কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও নেই।”
ছাত্রদল নেতারা আরও অভিযোগ করেন, “‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারের আড়ালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মী এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদলের সমর্থক কিছু শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে হেনস্তার উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত করেন।”
তারা দাবি করেন, “কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদল আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। তবে ষড়যন্ত্রকারীরা ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ পরিচয়ে ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিশাল ব্যানার টাঙিয়ে উসকানি দেয়। এরপর মিছিল বের করে বিনা উসকানিতে ছাত্রদল সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়।”
সংঘর্ষের সূত্রপাত
কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হন, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
ছাত্রদল সভাপতি দাবি করেন, “এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে। মিছিল থেকে ছাত্রদল সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়।”
তিনি আরও বলেন, “এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ভুক্তভোগী ছাত্রদল সমর্থকরা যখন ক্লাস শেষে যাচ্ছিলেন, তখন মিছিলের নেতৃত্বে থাকা ওমর ফারুক প্রথম হামলার নির্দেশ দেন। এরপর মিছিলকারীরা তাদের দিকে তেড়ে গিয়ে হামলা চালায়।”
ভুক্তভোগীদের বয়ান
ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেন,”ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে ফটকের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা ফটকের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। এরপর দোকানমালিকের পরিচিত কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি মিছিলকারীদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এতে কুয়েট ফটকের সামনে ঘণ্টাখানেক ধরে সহিংসতা চলে।”
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, “দেশে বড় বড় অগ্নিকাণ্ড ছোট ছোট শর্টসার্কিট থেকে তৈরি হয়। কুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে, তার পেছনেও তেমনই এক বিশৃঙ্খল মবের উসকানি ছিল। এটি নেতৃত্ব দিয়েছেন ওমর ফারুক এবং কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।”
তিনি আরও বলেন, “যদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রথমে ছাত্রদলের ওপর হামলা না চালাতেন, তাহলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ত না।”
শিবিরের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
ছাত্রদল সভাপতি আরও অভিযোগ করেন,”ইসলামী ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসগুলোতে কুলষিত করে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছে।”

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “যখন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে অসংখ্য শিক্ষার্থী আকৃষ্ট হচ্ছেন, তখনই আন্ডারগ্রাউন্ড অপরাজনীতির মাধ্যমে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন গুপ্ত সংগঠন ও নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগ এই সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “ছাত্রলীগ যেমন অতীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করত, এখন ইসলামী ছাত্রশিবিরও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম কলুষিত করছে। তারা ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।”
কুয়েটের ঘটনায় ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার?
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতারা দাবি করেন, “কুয়েটের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর অনলাইন-অফলাইনে অপপ্রচার চালিয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। সত্য ঘটনাকে আড়াল করা হচ্ছে এবং ছাত্রদলকে দোষারোপ করা হচ্ছে।”
ছাত্রদল নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান,”বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”