০৩:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শহীদ মিনার নিয়ে আ.লীগ সরকারের প্রতারণা

এস এম জাহাঙ্গীর, রাজশাহী
  • সময় ১২:২৮:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 54

শহীদ মিনার নিয়ে আ.লীগ সরকারের প্রতারণা

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পুরো পৃথিবীজুড়েই যেখানে ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে, সেখানে ব্যতিক্রম খোদ বাংলাদেশের রাজশাহী !

বিভাগটিতে কেন্দ্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কোনো শহীদ মিনার নেই। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীর সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে বারবার দাবী তোলা হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো শহীদ মিনার গড়ে তুলতে কাজ করেনি কোনো সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ২০২০ সালে রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরির জন্য স্থান নির্ধারণ করে, ভিত্তিপ্রস্থরও স্থাপন করা হয়েছিল। সাবেক রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের শাসনামলেও সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ নিয়ে রাজশাহীবাসী সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের দিকে।

তারা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওমায়ী লীগ সরকার প্রতারণা করেছে রাজশাহীবাসীর সঙ্গে। শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি, সাড়ে চার বছরেও, এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর হতেই পারে না।

এদিকে, রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নির্মিত শহীদ মিনারকে দেশের প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি

ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। (ফাইল ফটো)
ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। (ফাইল ফটো)

বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে তিনি বলেন, দেশের প্রথম শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ রাজশাহীতে নির্মিত হয়েছিল। আমরা কয়েকজন মিলে রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোস্টেলে ভাষা শহীদদের স্মরণে সেই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করি। সে সময় ঢাকা থেকে ট্রেনে আসা এক কর্মীর কাছ থেকে জানতে পারি, ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়েছে, যেখানে রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকেই শহীদ হন। তখন রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নির্মাণের পর পরই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেটি ভেঙে দিয়েছিল।

ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে ভাষা সৈনিক আখুঞ্জি বলেন, তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার বাঙালিদের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। আমরা স্বাধীনতা অর্জনের পরও প্রকৃত স্বাধীনতা পাইনি, বরং পেয়েছি বাকস্বাধীনতা হরণকারী স্বৈরাচারী সরকার। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্ররা নতুন করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে হবে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। মাতৃভাষা বাংলাকে গুরুত্ব দিতে হবে, পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে টিকে থাকতে ইংরেজিতেও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

৭৩ বছর আগে মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক বীর সন্তান। তাঁদের আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ আজ আমরা স্বাধীনভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি, আর সেই আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও একুশের প্রথম প্রহর থেকেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্ট চত্বরের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

রাজশাহীর শহরের মালোপাড়া সষ্টিতলার বাসিন্দা আমেনা বেগম বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, দুঃখের বিষয়; ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও রাজশাহীতে এখনো কেন্দ্রীয় কোনো শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। ২০২০ সালে নগরীর সোনাদীঘি মোড়ে সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, রাজশাহীতে দ্রুত একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক, যেখানে নগরবাসী একসঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন।

তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার না থাকলেও থেমে নেই রাজশাহীবাসীর শ্রদ্ধা নিবেদন। প্রতি বছরের মতো এবারও রাজশাহীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ করেছেন।

একুশের প্রথম প্রহরে রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনারে প্রথমে কলেজ কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে, এরপর তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। পরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এদিকে, রাজশাহী কোর্ট চত্বরের শহীদ মিনারে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। অন্যদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবসহ শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

রাজশাহীবাসী আশা করছে, খুব শিগগিরই একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেখানে সমগ্র নগরবাসী একসঙ্গে একুশের চেতনায় শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।

শেয়ার করুন

শহীদ মিনার নিয়ে আ.লীগ সরকারের প্রতারণা

সময় ১২:২৮:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পুরো পৃথিবীজুড়েই যেখানে ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে, সেখানে ব্যতিক্রম খোদ বাংলাদেশের রাজশাহী !

বিভাগটিতে কেন্দ্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কোনো শহীদ মিনার নেই। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীর সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে বারবার দাবী তোলা হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো শহীদ মিনার গড়ে তুলতে কাজ করেনি কোনো সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ২০২০ সালে রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরির জন্য স্থান নির্ধারণ করে, ভিত্তিপ্রস্থরও স্থাপন করা হয়েছিল। সাবেক রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের শাসনামলেও সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ নিয়ে রাজশাহীবাসী সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের দিকে।

তারা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওমায়ী লীগ সরকার প্রতারণা করেছে রাজশাহীবাসীর সঙ্গে। শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি, সাড়ে চার বছরেও, এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর হতেই পারে না।

এদিকে, রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নির্মিত শহীদ মিনারকে দেশের প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি

ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। (ফাইল ফটো)
ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। (ফাইল ফটো)

বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে তিনি বলেন, দেশের প্রথম শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ রাজশাহীতে নির্মিত হয়েছিল। আমরা কয়েকজন মিলে রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোস্টেলে ভাষা শহীদদের স্মরণে সেই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করি। সে সময় ঢাকা থেকে ট্রেনে আসা এক কর্মীর কাছ থেকে জানতে পারি, ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়েছে, যেখানে রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকেই শহীদ হন। তখন রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নির্মাণের পর পরই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেটি ভেঙে দিয়েছিল।

ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে ভাষা সৈনিক আখুঞ্জি বলেন, তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার বাঙালিদের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। আমরা স্বাধীনতা অর্জনের পরও প্রকৃত স্বাধীনতা পাইনি, বরং পেয়েছি বাকস্বাধীনতা হরণকারী স্বৈরাচারী সরকার। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্ররা নতুন করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে হবে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। মাতৃভাষা বাংলাকে গুরুত্ব দিতে হবে, পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে টিকে থাকতে ইংরেজিতেও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

৭৩ বছর আগে মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক বীর সন্তান। তাঁদের আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ আজ আমরা স্বাধীনভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি, আর সেই আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও একুশের প্রথম প্রহর থেকেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্ট চত্বরের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

রাজশাহীর শহরের মালোপাড়া সষ্টিতলার বাসিন্দা আমেনা বেগম বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে বলেন, দুঃখের বিষয়; ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও রাজশাহীতে এখনো কেন্দ্রীয় কোনো শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। ২০২০ সালে নগরীর সোনাদীঘি মোড়ে সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, রাজশাহীতে দ্রুত একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক, যেখানে নগরবাসী একসঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন।

তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার না থাকলেও থেমে নেই রাজশাহীবাসীর শ্রদ্ধা নিবেদন। প্রতি বছরের মতো এবারও রাজশাহীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ করেছেন।

একুশের প্রথম প্রহরে রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনারে প্রথমে কলেজ কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে, এরপর তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। পরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এদিকে, রাজশাহী কোর্ট চত্বরের শহীদ মিনারে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। অন্যদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবসহ শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

রাজশাহীবাসী আশা করছে, খুব শিগগিরই একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেখানে সমগ্র নগরবাসী একসঙ্গে একুশের চেতনায় শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।