শবে বরাত: গুরুত্ব, করণীয় ও বর্জনীয়
![](https://banglaaffairs.com/storage/2025/02/2025-02-13-at-23.22.38_3f3ed98d.jpg)
- সময় ১১:২৫:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 62
শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়, যা ফারসি শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি, অর্থাৎ মুক্তির রাত। ইসলামী পরিভাষায় একে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বলা হয়। হাদিস শরিফে এই রাতকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্যরজনী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ অনেক দেশে এটি ‘শবে বরাত’ নামেই পরিচিত।
কোরআনুল কারিমে এই রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে: “হা-মিম! শপথ উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।” (সুরা দুখান, আয়াত: ১-৫)। তাফসিরবিদগণ এই আয়াতে বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী দ্বারা শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন।
হাদিস শরিফেও শবে বরাতের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “এটি হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন এবং বিদ্বেষপোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।” (শুআবুল ঈমান)।
একটি বর্ণনায় এসেছে, হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে নবী করিম (সা.) বলেছেন, “অর্ধশাবানের রাতে আল্লাহ তাআলা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করেন।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)।
হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, নবীজি (সা.) একবার এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন বলে ধারণা হয়। পরে তিনি সিজদা থেকে উঠে বললেন, “তুমি কি জানো এটি কোন রাত?” আয়শা (রা.) বললেন, “আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।” তখন নবীজি (সা.) বললেন, “এটি অর্ধ শাবানের রাত, এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং বিদ্বেষপোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।”
শবে বরাত রমজানের প্রস্তুতির রাত হিসেবে বিবেচিত হয়। হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। (তিরমিজি: ৭৩৯)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যখন শাবানের মধ্য দিবস আসে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করো ও দিনে রোজা পালন করো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে এসে আহ্বান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’” (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)।
শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়:
শবে বরাতে নফল নামাজ, দোয়া, ইস্তিগফার ও কোরআন তিলাওয়াত করা উত্তম। রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি নফল রোজা রাখতেন। শবে বরাতের দিনে রোজা রাখা মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য করা হয়।
তবে শবে বরাত উপলক্ষে কোনো কুসংস্কার বা বিদআত পালন করা উচিত নয়। মূলত, এই রাতটি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটানো এবং আত্মশুদ্ধির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।