ঢাকা ১০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম

নুরুল বশর, উখিয়া (কক্সবাজার)
  • সময় ১০:২৫:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 26

নতুন করে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় না এনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফেরতদান, অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ রোধসহ সাত দফা দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়ায় মাঠে নেমেছে স্থানীয় বাংলাদেশিরা। একই সাথে আগামী এক মাসের মধ্যে এসব দাবি পূরণ না করলে সড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলন করার আল্টিমেটামও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান সড়কের (কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক) উখিয়া উপজেলার পালংখালী স্টেশনে ‘অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি-পালংখালী’ এর উদ্যোগে এ কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

আয়োজনকারী সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ স্থানীয় কয়েক শত মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন।

স্থানীয়দের উত্থাপিত দাবিগুলো হল- ১. আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মায়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে হবে। ২. রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্তে কঠিন নিরাপত্তা বলয় জোরদার করতে হবে। ৩. অবৈধভাবে ২০২৪ সালে অনুপ্রবেশ করা লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদেরকে এফডিএমএন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে (বায়োমেট্রিক) তাদেরকে পুশব্যাকের জন্য কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। ৪. স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৫. চাকরিসহ ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়দের প্রাধান্য (নূন্যতম ৫০%) নিশ্চিত করতে হবে। ৬. কাঁটাতারের বাহিরে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে হবে এবং ক্যাম্পের বাহিরে রোহিঙ্গাদের বাসাভাড়া বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৭. ক্যাম্পের চাকরির নিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আরআরআরসি প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম

অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি-পালংখালী’র সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হওয়ায় স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। চুরি-ডাকাতি, অপহরণ বাণিজ্য এবং খুন-খারাবিসহ নানা অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলছে। প্রায় ৮ বছর হতে চললেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে আরাকানে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আরও লাখের কাছাকাছি নতুন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে উখিয়া ও টেকনাফসহ স্থানীয়দের জীবনযাত্রার পাশাপাশি নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

সীমান্তে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারি অব্যাহত না থাকলে সাধারণ রোহিঙ্গাসহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের অনুপ্রবেশের আশংকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় এ রাজনৈতিক নেতা।

রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন, নতুন করে অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং ক্যাম্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকারসহ ৭দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, “রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে স্থানীয়রা নানাভাবে দুর্ভোগ ও বৈষম্যের শিকার। তাই দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোতে স্থানীয়দের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। এই জন্য জেলা প্রশাসন ও আরআরআরসি কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।”

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম

মানববন্ধন শেষ করে সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী রবিউল হোসেন আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে স্থানীয়দের উত্থাপিত ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। আর দাবি বাস্তবায়ন না হলে সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এম. মোক্তার আহমদ, জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এড. রেজাউল করিম, শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, আবুল আলা রোমান, পালংখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হেলাল উদ্দিন মেম্বার, সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন চৌধুরী, ব্যারিষ্টার সাফফাত ফারদিন রামিম, শিক্ষক মোক্তার আহমদ ও স্থানীয় জামায়াত ইসলামী নেতা আব্দুর জব্বার সহ স্থানীয় নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ।

শেয়ার করুন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম

সময় ১০:২৫:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

নতুন করে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় না এনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফেরতদান, অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ রোধসহ সাত দফা দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়ায় মাঠে নেমেছে স্থানীয় বাংলাদেশিরা। একই সাথে আগামী এক মাসের মধ্যে এসব দাবি পূরণ না করলে সড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলন করার আল্টিমেটামও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান সড়কের (কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক) উখিয়া উপজেলার পালংখালী স্টেশনে ‘অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি-পালংখালী’ এর উদ্যোগে এ কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

আয়োজনকারী সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ স্থানীয় কয়েক শত মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন।

স্থানীয়দের উত্থাপিত দাবিগুলো হল- ১. আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মায়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে হবে। ২. রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্তে কঠিন নিরাপত্তা বলয় জোরদার করতে হবে। ৩. অবৈধভাবে ২০২৪ সালে অনুপ্রবেশ করা লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদেরকে এফডিএমএন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে (বায়োমেট্রিক) তাদেরকে পুশব্যাকের জন্য কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। ৪. স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৫. চাকরিসহ ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়দের প্রাধান্য (নূন্যতম ৫০%) নিশ্চিত করতে হবে। ৬. কাঁটাতারের বাহিরে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে হবে এবং ক্যাম্পের বাহিরে রোহিঙ্গাদের বাসাভাড়া বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৭. ক্যাম্পের চাকরির নিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আরআরআরসি প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম

অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি-পালংখালী’র সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হওয়ায় স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। চুরি-ডাকাতি, অপহরণ বাণিজ্য এবং খুন-খারাবিসহ নানা অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলছে। প্রায় ৮ বছর হতে চললেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে আরাকানে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আরও লাখের কাছাকাছি নতুন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে উখিয়া ও টেকনাফসহ স্থানীয়দের জীবনযাত্রার পাশাপাশি নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

সীমান্তে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারি অব্যাহত না থাকলে সাধারণ রোহিঙ্গাসহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের অনুপ্রবেশের আশংকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় এ রাজনৈতিক নেতা।

রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন, নতুন করে অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং ক্যাম্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকারসহ ৭দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, “রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে স্থানীয়রা নানাভাবে দুর্ভোগ ও বৈষম্যের শিকার। তাই দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোতে স্থানীয়দের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। এই জন্য জেলা প্রশাসন ও আরআরআরসি কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।”

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশী আল্টিমেটাম

মানববন্ধন শেষ করে সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী রবিউল হোসেন আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে স্থানীয়দের উত্থাপিত ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। আর দাবি বাস্তবায়ন না হলে সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এম. মোক্তার আহমদ, জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এড. রেজাউল করিম, শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, আবুল আলা রোমান, পালংখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হেলাল উদ্দিন মেম্বার, সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন চৌধুরী, ব্যারিষ্টার সাফফাত ফারদিন রামিম, শিক্ষক মোক্তার আহমদ ও স্থানীয় জামায়াত ইসলামী নেতা আব্দুর জব্বার সহ স্থানীয় নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ।