০২:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি

নুরুল বশর, উখিয়া (কক্সবাজার)
  • সময় ০৫:৩৭:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • / 63

রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভেতরে অবস্থানরত স্থানীয় বাংলাদেশি রোহিঙ্গা আতঙ্কে নিজেদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট হোস্ট কমিউনিটি কমিটি গঠন করেছে।

রবিবার (৯ মার্চ) সকাল ১১ টায় উপজেলার থাইংখালী হাকিম পাড়াস্থ ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ এর কার্যালয়ের পাশে একটি এনজিওর অফিসের হলরুমে, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর সহযোগিতায় উক্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সাম্প্রতিক সময় ‘তহবিল ঘাটতির’ কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তায় খরচের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমাচ্ছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। যা আগে প্রতিমাসে একজন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য দেওয়া অনুদান ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হয়েছে। আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হবে।

স্থানীয় বাংলাদেশিরা জানান, “রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করছে ক্যাম্প জুড়ে। তাই রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ভেতরে অবস্থানরত স্থানীয় বাংলাদেশিরা নিরাপত্তাজনিত কারণে উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছে। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রোহিঙ্গাদের সাথে যে কোন ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে বাঁচতে হোস্ট কমিউনিটির সদস্যরা উক্ত কমিটির আত্মপ্রকাশ করেন।”

রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি
রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি

থাইংখালী হাকিম পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর সহযোগিতায় আমরা কমিটি গঠন করেছি। কারণ রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর কারণে তাঁরা আগের চেয়ে বেশি হিংস্র হতে পারে, চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, “রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। আবারো হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে। যা স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য হুমকি স্বরূপ। খাদ্য সহায়তা কমানোর কারণে তাঁরা আরো বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর পরামর্শে একটি সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “হঠাৎ করে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানো হয়েছে। যা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য হুমকি স্বরূপ। রোহিঙ্গাদের খাবার সংকট দেখা দিলে তারা আরো বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। মাদক পাচারকারী হিসেবে কাজ করবে। খাবারে সন্ধানে দেশের সবক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

তিনি বলেন, “যেহেতু হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে ৬২ টি বাংলাদেশি পরিবার রয়েছে তাদের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তাই হোস্ট কমিউনিটির লোকজনকে একতাবদ্ধ করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে নিজেরদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে।”

১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, “স্থানীয় বাংলাদেশি হোস্ট কমিউনিটির লোকজন অফিসে এসেছিল। তারা একটি কমিটি জমা দিয়ে গেছেন। আমি যে কোন বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করব বলেছি।”

রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি
রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি

কমিটিতে আব্দুল জলিল সভাপতি, জয়নাল আবেদীন সহ-সভাপতি, সাহাব উদ্দিন সহ-সভাপতি, মো. ইব্রাহিম সাধারণ সম্পাদক, মোহাম্মদ আলী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নুরুল হক যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক, নুরুল কবির সাংগঠনিক সম্পাদক, শফিকুর রহমান সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, আব্দুল গফুর মুন্না প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, আবছার উদ্দিন ক্রীড়া সম্পাদক, মমতাজ উদ্দিন দপ্তর সম্পাদক, আজিজুর রহমান ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক, বেবি আক্তার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, আব্দুর রহিম সদস্য, মাহমুদুল হক সদস্য, বেলাল উদ্দিন সদস্য ও ছৈয়দুল হক সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।

কমিটি গঠনের সময় ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থানরত বাংলাদেশি ৬২ টি পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় নানা শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে নবগঠিত কমিটির সদস্যরা ক্যাম্প ইনচার্জ মো. ফারুক আল মাসুদ এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে ৬২ পরিবারের সদস্যদের মাঝে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

শেয়ার করুন

রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি

সময় ০৫:৩৭:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভেতরে অবস্থানরত স্থানীয় বাংলাদেশি রোহিঙ্গা আতঙ্কে নিজেদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট হোস্ট কমিউনিটি কমিটি গঠন করেছে।

রবিবার (৯ মার্চ) সকাল ১১ টায় উপজেলার থাইংখালী হাকিম পাড়াস্থ ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ এর কার্যালয়ের পাশে একটি এনজিওর অফিসের হলরুমে, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর সহযোগিতায় উক্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সাম্প্রতিক সময় ‘তহবিল ঘাটতির’ কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তায় খরচের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমাচ্ছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। যা আগে প্রতিমাসে একজন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য দেওয়া অনুদান ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হয়েছে। আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হবে।

স্থানীয় বাংলাদেশিরা জানান, “রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করছে ক্যাম্প জুড়ে। তাই রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ভেতরে অবস্থানরত স্থানীয় বাংলাদেশিরা নিরাপত্তাজনিত কারণে উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছে। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রোহিঙ্গাদের সাথে যে কোন ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে বাঁচতে হোস্ট কমিউনিটির সদস্যরা উক্ত কমিটির আত্মপ্রকাশ করেন।”

রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি
রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি

থাইংখালী হাকিম পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর সহযোগিতায় আমরা কমিটি গঠন করেছি। কারণ রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর কারণে তাঁরা আগের চেয়ে বেশি হিংস্র হতে পারে, চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, “রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। আবারো হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে। যা স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য হুমকি স্বরূপ। খাদ্য সহায়তা কমানোর কারণে তাঁরা আরো বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর পরামর্শে একটি সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “হঠাৎ করে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানো হয়েছে। যা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য হুমকি স্বরূপ। রোহিঙ্গাদের খাবার সংকট দেখা দিলে তারা আরো বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। মাদক পাচারকারী হিসেবে কাজ করবে। খাবারে সন্ধানে দেশের সবক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

তিনি বলেন, “যেহেতু হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে ৬২ টি বাংলাদেশি পরিবার রয়েছে তাদের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তাই হোস্ট কমিউনিটির লোকজনকে একতাবদ্ধ করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে নিজেরদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে।”

১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, “স্থানীয় বাংলাদেশি হোস্ট কমিউনিটির লোকজন অফিসে এসেছিল। তারা একটি কমিটি জমা দিয়ে গেছেন। আমি যে কোন বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করব বলেছি।”

রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি
রোহিঙ্গা আতঙ্কে বাংলাদেশিদের সুরক্ষা কমিটি

কমিটিতে আব্দুল জলিল সভাপতি, জয়নাল আবেদীন সহ-সভাপতি, সাহাব উদ্দিন সহ-সভাপতি, মো. ইব্রাহিম সাধারণ সম্পাদক, মোহাম্মদ আলী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নুরুল হক যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক, নুরুল কবির সাংগঠনিক সম্পাদক, শফিকুর রহমান সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, আব্দুল গফুর মুন্না প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, আবছার উদ্দিন ক্রীড়া সম্পাদক, মমতাজ উদ্দিন দপ্তর সম্পাদক, আজিজুর রহমান ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক, বেবি আক্তার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, আব্দুর রহিম সদস্য, মাহমুদুল হক সদস্য, বেলাল উদ্দিন সদস্য ও ছৈয়দুল হক সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।

কমিটি গঠনের সময় ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থানরত বাংলাদেশি ৬২ টি পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় নানা শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে নবগঠিত কমিটির সদস্যরা ক্যাম্প ইনচার্জ মো. ফারুক আল মাসুদ এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে ৬২ পরিবারের সদস্যদের মাঝে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।