রোমাঞ্চকর দেবতাখুমে প্রকৃতিপ্রেমীদের ঢল | Bangla Affairs
০৪:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোমাঞ্চকর দেবতাখুমে প্রকৃতিপ্রেমীদের ঢল

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান
  • সময় ০৩:১৫:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 51

দেবতাখুম

বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এ জায়গাটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। “খুম” মানে জলাধার, আর দেবতাখুমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি দেশের বৃহত্তম এবং সুন্দরতম খুমগুলোর মধ্যে একটি। রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় অবস্থিত এই খুমটি প্রকৃতির এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত।

বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করা দেবতাখুম একটি পাহাড়ি নদী এবং বিশাল পাথরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণা নদীর দৃশ্য একেবারে কল্পনাকে হার মানায়। খুমটির গভীরতা প্রায় ৫০-৭০ ফুট, যা আরো অধিক রোমাঞ্চকর। এখানে পৌঁছাতে হলে ট্রেইলটি পাড়ি দিতে হয়, যা কখনও পাহাড়ের উপরে চড়ে আবার কখনো খালের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। ট্রেকিংয়ের এই পথটি যেমন সুন্দর, তেমনি চ্যালেঞ্জিং।

দেবতাখুমে পৌঁছানোর জন্য প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটতে হয়, এবং এই পথের সৌন্দর্য সত্যিই মনে রাখার মতো। এই এলাকাটি নেটওয়ার্কের বাইরে হওয়ায় শান্ত পরিবেশ এবং পাখির কলরবের মাঝে প্রকৃতির গন্ধে মাতোয়ারা হওয়া যায়। খুমের ভিতরে যখন প্রবাহিত ঝর্ণার পানি শুনতে পাওয়া যায়, তখন সে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণভাবে এক অন্যরকম। এখানে ভেলা চড়িয়ে বা পাহাড়ি নদীতে কায়াকিং করার অভিজ্ঞতাও একেবারে অদ্বিতীয়।

দেবতাখুমে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলেন, এর সৌন্দর্য কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটি দেখতে হলে একবার অবশ্যই এখানে আসতে হবে। বাংলাদেশের অন্যান্য সুন্দর স্থানগুলো তো আছেই, তবে দেবতাখুমের সৌন্দর্য একেবারে ভিন্ন। এখানে চারদিকে পাহাড়, পাথর, শান্ত পরিবেশ এবং ঝর্ণার শব্দ মিলিয়ে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। বিশেষ করে ভেলা চড়িয়ে পানিতে ভেসে চলা এবং পাহাড়ি পথের ট্রেকিং পর্যটকদের জন্য এক উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা।

রোমাঞ্চকর দেবতাখুমে প্রকৃতিপ্রেমীদের ঢল
রোমাঞ্চকর দেবতাখুমে প্রকৃতিপ্রেমীদের ঢল

উম্মে সুবাসুম, একজন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর, বলেন, “বাংলাদেশে এত সুন্দর জায়গা থাকতে দেবতাখুমের মত সৌন্দর্য একেবারে অনন্য। ভিডিওতে যা দেখেছি তার থেকেও আরো অনেক সুন্দর।”

এছাড়া, দেবতাখুমের দিকে যাওয়ার পথে বিশাল দুটি পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট একটি পথ পাড়ি দিতে হয়, যেখানে কাঠের ভেলা বা ছোট নৌকা ব্যবহার করা হয়। খুমের চারপাশে থাকা পাথরগুলো এক নিখুঁত নকশায় সজ্জিত, যা সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। পাহাড়ি এলাকার শীতল বাতাস এবং ঝর্ণার শব্দ এটি আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

কিছু বছর আগে পর্যন্ত এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে এতটা পরিচিত ছিল না। তবে এখন প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় জমাচ্ছেন। রোয়াংছড়ি কচ্ছপতলী বাজার থেকে দেবতাখুমে আসার জন্য অনেকেই বাইক বা গাড়ি ব্যবহার করেন, আবার কেউ কেউ ছোট পরিবার নিয়ে ট্রেকিং করতে আসেন।

দেবতাখুমের পরিবহন ব্যবস্থা দিন দিন উন্নত হচ্ছে, এবং এটি পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৮২ জন গাইড কাজ করছেন, যারা পর্যটকদের সহায়তা করেন। এছাড়াও, এখানে ৫টি নৌকা এবং ২০টির বেশি বাঁশের ভেলা রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত হয়।

সর্বোপরি, দেবতাখুম প্রকৃতির এক অমুল্য রত্ন, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক অপরিহার্য অভিজ্ঞতা।

শেয়ার করুন

রোমাঞ্চকর দেবতাখুমে প্রকৃতিপ্রেমীদের ঢল

সময় ০৩:১৫:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এ জায়গাটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। “খুম” মানে জলাধার, আর দেবতাখুমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি দেশের বৃহত্তম এবং সুন্দরতম খুমগুলোর মধ্যে একটি। রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় অবস্থিত এই খুমটি প্রকৃতির এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত।

বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করা দেবতাখুম একটি পাহাড়ি নদী এবং বিশাল পাথরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণা নদীর দৃশ্য একেবারে কল্পনাকে হার মানায়। খুমটির গভীরতা প্রায় ৫০-৭০ ফুট, যা আরো অধিক রোমাঞ্চকর। এখানে পৌঁছাতে হলে ট্রেইলটি পাড়ি দিতে হয়, যা কখনও পাহাড়ের উপরে চড়ে আবার কখনো খালের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। ট্রেকিংয়ের এই পথটি যেমন সুন্দর, তেমনি চ্যালেঞ্জিং।

দেবতাখুমে পৌঁছানোর জন্য প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটতে হয়, এবং এই পথের সৌন্দর্য সত্যিই মনে রাখার মতো। এই এলাকাটি নেটওয়ার্কের বাইরে হওয়ায় শান্ত পরিবেশ এবং পাখির কলরবের মাঝে প্রকৃতির গন্ধে মাতোয়ারা হওয়া যায়। খুমের ভিতরে যখন প্রবাহিত ঝর্ণার পানি শুনতে পাওয়া যায়, তখন সে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণভাবে এক অন্যরকম। এখানে ভেলা চড়িয়ে বা পাহাড়ি নদীতে কায়াকিং করার অভিজ্ঞতাও একেবারে অদ্বিতীয়।

দেবতাখুমে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলেন, এর সৌন্দর্য কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটি দেখতে হলে একবার অবশ্যই এখানে আসতে হবে। বাংলাদেশের অন্যান্য সুন্দর স্থানগুলো তো আছেই, তবে দেবতাখুমের সৌন্দর্য একেবারে ভিন্ন। এখানে চারদিকে পাহাড়, পাথর, শান্ত পরিবেশ এবং ঝর্ণার শব্দ মিলিয়ে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। বিশেষ করে ভেলা চড়িয়ে পানিতে ভেসে চলা এবং পাহাড়ি পথের ট্রেকিং পর্যটকদের জন্য এক উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা।

রোমাঞ্চকর দেবতাখুমে প্রকৃতিপ্রেমীদের ঢল
রোমাঞ্চকর দেবতাখুমে প্রকৃতিপ্রেমীদের ঢল

উম্মে সুবাসুম, একজন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর, বলেন, “বাংলাদেশে এত সুন্দর জায়গা থাকতে দেবতাখুমের মত সৌন্দর্য একেবারে অনন্য। ভিডিওতে যা দেখেছি তার থেকেও আরো অনেক সুন্দর।”

এছাড়া, দেবতাখুমের দিকে যাওয়ার পথে বিশাল দুটি পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট একটি পথ পাড়ি দিতে হয়, যেখানে কাঠের ভেলা বা ছোট নৌকা ব্যবহার করা হয়। খুমের চারপাশে থাকা পাথরগুলো এক নিখুঁত নকশায় সজ্জিত, যা সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। পাহাড়ি এলাকার শীতল বাতাস এবং ঝর্ণার শব্দ এটি আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

কিছু বছর আগে পর্যন্ত এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে এতটা পরিচিত ছিল না। তবে এখন প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় জমাচ্ছেন। রোয়াংছড়ি কচ্ছপতলী বাজার থেকে দেবতাখুমে আসার জন্য অনেকেই বাইক বা গাড়ি ব্যবহার করেন, আবার কেউ কেউ ছোট পরিবার নিয়ে ট্রেকিং করতে আসেন।

দেবতাখুমের পরিবহন ব্যবস্থা দিন দিন উন্নত হচ্ছে, এবং এটি পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৮২ জন গাইড কাজ করছেন, যারা পর্যটকদের সহায়তা করেন। এছাড়াও, এখানে ৫টি নৌকা এবং ২০টির বেশি বাঁশের ভেলা রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত হয়।

সর্বোপরি, দেবতাখুম প্রকৃতির এক অমুল্য রত্ন, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক অপরিহার্য অভিজ্ঞতা।