ঢাকা ০৩:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে যে সংকট রয়েছে!

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৩:২৮:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / 238

Mohammed Shahabuddin

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে এক মন্তব্য ঘিরে রাষ্ট্রপতির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারা। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদের অনেক সদস্যও। তারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ অথবা তাকে অপসারণের দাবি তুলেছেন।

 

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবীতে বঙ্গভবনে আন্দোলনকারীরা

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চাইলেই কি রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে বাধ্য কিংবা অপসারণ করা সম্ভব? তাছাড়া তিনি পদত্যাগই বা করবেন কার কাছে?

বাংলাদেশের সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির কার্যকাল এবং পদত্যাগের নিয়মাবলী নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সংবিধানের ভাষায় অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সাধারণত পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন, তবে তিনি তার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেও পদত্যাগ করতে পারেন।

কিন্তু রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কোন সাধারণ বা সহজ সিদ্ধান্ত নয়। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ করার প্রক্রিয়াটি সংবিধানে খুব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করতে চান, তবে তাকে একটি লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। এই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার জন্য একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে মনোনীত করা হয়েছে, সেটি হলো জাতীয় সংসদের স্পিকার।

যে মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি তার পদত্যাগপত্র স্পিকারকে জমা দেন, তাৎক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই পদত্যাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কার্যকাল শেষ হয়ে যায়। তবে এর পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত, রাষ্ট্রপতির সব দায়িত্ব কে পালন করবেন?

সংবিধান অনুসারে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে বা তিনি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, স্পিকার বা প্রধান বিচারপতি কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে।

সংবিধানের ৫২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এটি দেশের সাংবিধানিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি অপরিহার্য বিধান।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে – পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ফৌজদারি মামলা করা যাবে না, যদি তিনি তার কার্যকালীন কোনও কাজের জন্য সুরক্ষিত থাকেন। এটি সংবিধানের ৫১ নং অনুচ্ছেদে উল্লিখিত। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার গৃহীত সকল পদক্ষেপের জন্য তিনি দায়মুক্তি লাভ করেন, যদি না তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা কোন গুরুতর অপরাধের মধ্যে পড়ে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্রপতির আগেই পদত্যাগ করেছেন স্পিকার। স্পিকার অবর্তমানে দায়িত্বে থাকেন ডেপুটি স্পিকার। তিনিও কারাগারে। তাহলে রাষ্ট্রপতি কার কাছে পদত্যাগ করবেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ বলে সর্বোচ্চ আদালতকে এর মীমাংসা করতে হবে। হয়তো তা-ই হবে। কিন্তু তারপর রাষ্ট্রপতি কে হবেন? নতুন কেউ নাকি ড. মুহাম্মদ ইউনূসই রাষ্ট্রপতি হয়ে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা চালু করবেন? এ প্রশ্ন এখন অনেকেরই।

শেয়ার করুন

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে যে সংকট রয়েছে!

সময় ০৩:২৮:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে এক মন্তব্য ঘিরে রাষ্ট্রপতির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারা। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদের অনেক সদস্যও। তারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ অথবা তাকে অপসারণের দাবি তুলেছেন।

 

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবীতে বঙ্গভবনে আন্দোলনকারীরা

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চাইলেই কি রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে বাধ্য কিংবা অপসারণ করা সম্ভব? তাছাড়া তিনি পদত্যাগই বা করবেন কার কাছে?

বাংলাদেশের সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির কার্যকাল এবং পদত্যাগের নিয়মাবলী নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সংবিধানের ভাষায় অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সাধারণত পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন, তবে তিনি তার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেও পদত্যাগ করতে পারেন।

কিন্তু রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কোন সাধারণ বা সহজ সিদ্ধান্ত নয়। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ করার প্রক্রিয়াটি সংবিধানে খুব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করতে চান, তবে তাকে একটি লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। এই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার জন্য একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে মনোনীত করা হয়েছে, সেটি হলো জাতীয় সংসদের স্পিকার।

যে মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি তার পদত্যাগপত্র স্পিকারকে জমা দেন, তাৎক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই পদত্যাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কার্যকাল শেষ হয়ে যায়। তবে এর পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত, রাষ্ট্রপতির সব দায়িত্ব কে পালন করবেন?

সংবিধান অনুসারে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে বা তিনি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, স্পিকার বা প্রধান বিচারপতি কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে।

সংবিধানের ৫২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এটি দেশের সাংবিধানিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি অপরিহার্য বিধান।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে – পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ফৌজদারি মামলা করা যাবে না, যদি তিনি তার কার্যকালীন কোনও কাজের জন্য সুরক্ষিত থাকেন। এটি সংবিধানের ৫১ নং অনুচ্ছেদে উল্লিখিত। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার গৃহীত সকল পদক্ষেপের জন্য তিনি দায়মুক্তি লাভ করেন, যদি না তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা কোন গুরুতর অপরাধের মধ্যে পড়ে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্রপতির আগেই পদত্যাগ করেছেন স্পিকার। স্পিকার অবর্তমানে দায়িত্বে থাকেন ডেপুটি স্পিকার। তিনিও কারাগারে। তাহলে রাষ্ট্রপতি কার কাছে পদত্যাগ করবেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ বলে সর্বোচ্চ আদালতকে এর মীমাংসা করতে হবে। হয়তো তা-ই হবে। কিন্তু তারপর রাষ্ট্রপতি কে হবেন? নতুন কেউ নাকি ড. মুহাম্মদ ইউনূসই রাষ্ট্রপতি হয়ে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা চালু করবেন? এ প্রশ্ন এখন অনেকেরই।