ঢাকা ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দালালের খপ্পর

রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশি নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর
  • সময় ০৪:৫০:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 27

রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হুমায়ূন কবির

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি। নাটোরের সিংড়ার হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ূন কবির ড্রোন হামলায় নিহত হলেও তার দুলাভাই রহমত আলী জীবিত আছেন। দেশে ফিরতে চান রহমত আলী।

নিহত হুমায়ূন কবিরের পরিবার সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

হুমায়ূন ও রহমতের পরিবারের সদস্যরা বলেন, সাইপ্রাসে প্রতিমাসে আড়াই লাখ টাকার বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে হাসান নামের এক দালালের মধ্যস্থতায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড টুরস লিমিটেড নামের ঢাকার একটি কোম্পানির মাধ্যমে তারা পাড়ি জমিয়েছিলেন রাশিয়ায়।

প্রলোভনে জমিজমা, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে এবং উচ্চ সুদে ঋণ সেখানে যাবার পর তাদেরকে জোর করে বাধ্য করা হয় রাশিয়া ইউক্রেনের চলা যুদ্ধে অংশ নিতে। ২৬ জানুয়ারি ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় হুমায়ুন কবিরের।

এক বছরের কন্যা প্রীতিকে নিয়ে স্বামীহারা তারা বেগম বলেন, স্বামীকে হারিয়ে আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার স্বামী স্বর্ণ বিক্রি করে, টাকা পয়সা গুছিয়ে বিদেশ গিয়েছিল। কিন্তু কোনো স্বপ্ন পূরণ হলো না। সঙ্গে আমার ননদের জামাইও গিয়েছিল। সে বাঁচার জন্য বারবার ফোন করে আকুতি জানাচ্ছেন। কিন্তু আমরা দালালদের বললে তারা শুধু আশ্বাসে দিচ্ছেন, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমি সরকারের কাছে দাবি করছি আমার স্বামীর লাশসহ ননদের জামাইকে যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

একমাত্র ছেলের মৃত্যু আর জামাইকে ফিরে পেতে অসহায় কারিমুন বেগমের আহাজারি যেন থামছেই না, চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে।

রহমত আলীর স্ত্রী বলেন, হাসান নামে এক দালালের মাধ্যমে সাইপ্রাস যাওয়ার কথা হয় আমার স্বামী এবং ভাইয়ের। কিন্তু তিনি সাইপ্রাসের ভিসা না দিয়ে বলেছেন রাশিয়া নিয়ে যাবেন। এর জন্য সৌদি আরবে গিয়ে দুই মাস থাকতে হবে, ওমরা করতে হবে। সেখান থেকে তাদের রাশিয়ার ভিসা দেবেন। আড়াই লাখ টাকার বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া পৌঁছানোর পর সেখানকার দালাল তাদেরকে বিক্রি করে দেয়। এরপর সেখানে ট্রেনিং করিয়ে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যুদ্ধে আমার একমাত্র ভাই মারা গেছে। আমার স্বামীর হাতের ওপর মারা গেছে। আমার স্বামী ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে বলে, আমাকে বাঁচাও। আমরা এখন কি করব? কার কাছে বলব?

এ বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় দালালদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। আর ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড কোম্পানিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গণমাধ্যম থেকেই জেনেছি। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ এখন মৌখিক বা লিখিতভাবে জানায়নি। তারা বিষয়টি জানালে আসল ঘটনা বুঝতে পারব।

শেয়ার করুন

দালালের খপ্পর

রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশি নিহত

সময় ০৪:৫০:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি। নাটোরের সিংড়ার হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ূন কবির ড্রোন হামলায় নিহত হলেও তার দুলাভাই রহমত আলী জীবিত আছেন। দেশে ফিরতে চান রহমত আলী।

নিহত হুমায়ূন কবিরের পরিবার সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

হুমায়ূন ও রহমতের পরিবারের সদস্যরা বলেন, সাইপ্রাসে প্রতিমাসে আড়াই লাখ টাকার বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে হাসান নামের এক দালালের মধ্যস্থতায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড টুরস লিমিটেড নামের ঢাকার একটি কোম্পানির মাধ্যমে তারা পাড়ি জমিয়েছিলেন রাশিয়ায়।

প্রলোভনে জমিজমা, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে এবং উচ্চ সুদে ঋণ সেখানে যাবার পর তাদেরকে জোর করে বাধ্য করা হয় রাশিয়া ইউক্রেনের চলা যুদ্ধে অংশ নিতে। ২৬ জানুয়ারি ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় হুমায়ুন কবিরের।

এক বছরের কন্যা প্রীতিকে নিয়ে স্বামীহারা তারা বেগম বলেন, স্বামীকে হারিয়ে আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার স্বামী স্বর্ণ বিক্রি করে, টাকা পয়সা গুছিয়ে বিদেশ গিয়েছিল। কিন্তু কোনো স্বপ্ন পূরণ হলো না। সঙ্গে আমার ননদের জামাইও গিয়েছিল। সে বাঁচার জন্য বারবার ফোন করে আকুতি জানাচ্ছেন। কিন্তু আমরা দালালদের বললে তারা শুধু আশ্বাসে দিচ্ছেন, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমি সরকারের কাছে দাবি করছি আমার স্বামীর লাশসহ ননদের জামাইকে যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

একমাত্র ছেলের মৃত্যু আর জামাইকে ফিরে পেতে অসহায় কারিমুন বেগমের আহাজারি যেন থামছেই না, চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে।

রহমত আলীর স্ত্রী বলেন, হাসান নামে এক দালালের মাধ্যমে সাইপ্রাস যাওয়ার কথা হয় আমার স্বামী এবং ভাইয়ের। কিন্তু তিনি সাইপ্রাসের ভিসা না দিয়ে বলেছেন রাশিয়া নিয়ে যাবেন। এর জন্য সৌদি আরবে গিয়ে দুই মাস থাকতে হবে, ওমরা করতে হবে। সেখান থেকে তাদের রাশিয়ার ভিসা দেবেন। আড়াই লাখ টাকার বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া পৌঁছানোর পর সেখানকার দালাল তাদেরকে বিক্রি করে দেয়। এরপর সেখানে ট্রেনিং করিয়ে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যুদ্ধে আমার একমাত্র ভাই মারা গেছে। আমার স্বামীর হাতের ওপর মারা গেছে। আমার স্বামী ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে বলে, আমাকে বাঁচাও। আমরা এখন কি করব? কার কাছে বলব?

এ বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় দালালদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। আর ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড কোম্পানিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গণমাধ্যম থেকেই জেনেছি। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ এখন মৌখিক বা লিখিতভাবে জানায়নি। তারা বিষয়টি জানালে আসল ঘটনা বুঝতে পারব।