রায়পুরাতে ম্যাজিস্ট্রেট-সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে গুলি
- সময় ০৬:১৩:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
- / 32
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে নরসিংদীর রায়পুরায় মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে বালু খেকোরা। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একাধিকবার জেল জরিমানা করা হলেও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছেনা এসব বালু দস্যুদের বালু উত্তোলন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে বিভিন্ন সময় রাতেও বালু কাটতে দেখা গেছে বালু দস্যুদের।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ ও স্থানীয়দের অভিযোগের পর বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ এক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে যায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানার নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় সাথে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিকুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন সহ স্থানীয় সাংবাদিক, ব্যাটালিয়ান পুলিশ ও থানা পুলিশ।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর ইউনিয়নের ধরাভাঙ্গা গ্রামের পাশের নদীতে কমপক্ষে ২০-৩০ টি ড্রেজার দিয়ে প্রায় অর্ধশতকের বেশি বালু বহনকারী ব্লালগ্রেট বোঝায় করে তোলা হচ্ছে বালু। সেখানে প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে ব্লালগ্রেড ও ড্রেজার সরাতে থাকে বালুখেকোরা। একপর্যায়ে ড্রেজার ও ব্লালগ্রেড বিভিন্ন দিকদিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। পরে সেখান থেকে ৬টি ড্রেজার আটক করতে সক্ষম হয় প্রশাসন। পরে সেগুলো সেখান থেকে নিয়ে আসার পরিকল্পনার পাশাপাশি বালু উত্তোলনের স্থান থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে রায়পুরা উপজেলার চরমধুয়া ইউনিয়নের একটি ইটের ভাটায় আরোকিছু বালু বোঝাই ব্লালগ্রেড ও ড্রেজার রেখে পালাতে থাকে বালু খেকোরা। সেসময় সেটি প্রশাসনের নজরে এলে সেগুলো ধরতে একটি প্রশাসন ও একটি সাংবাদিকদের স্পিড বোট নিয়ে সেই ইটের ভাটার দিকে রওনা হয় প্রশাসন।
এমতাবস্থায় ইটের ভাটায় পৌঁছানোর আগেই দুটি স্পিড বোটকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে বালু খেকোরা। পরে পরিস্থিতি অনিয়ন্ত্রনে থাকায় দ্রুত স্পিডবোট ঘুরিয়ে বালু উত্তোলনের স্থানে ফিরে আসে তারা। তবে এঘটনায় কেউ হতাহত বা কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এমতাবস্থায় পরিস্থিতির সকল দিক বিবেচনা করে ড্রেজার ৬টিকে সেখানেই ফেলে আসে প্রশাসন। তবে সেখান থেকে একটি ড্রেজারের ২জনকে আটক করে নিয়ে আসা হয়। ইতিমধ্যে তাদের ২জনকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার ঘোষণাও দিয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা।
জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রশাসনের অনুমতিতে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ইজারাদারেরা। তবে তাদের সীমানা পেরিয়ে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর ও চরমধুয়া ইউনিয়নের সীমানায় তারা ড্রেজার বসিয়ে মাটি কাটে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আজ সকালে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রশাসন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় অনেকেই জানান, ইজারা পাওয়া ড্রেজার মালিকদের সহযোগিতায় বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের যুবদল নেতা হারুনের মিলে এখানে অবৈধ চুম্বক ড্রেজার চালায়। প্রশাসন ও সাংবাদিকদের উপর ইটভাটা থেকে ছোঁড়া গুলিগুলো সে বা তার লোকজন করে থাকতে পারে। তার কাছে এখন অবৈধ অস্ত্রের বিপুল সমাহার রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবদল নেতা হারুনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সেখানে ছিলাম না। আমি শুনে ঘটনাস্থলে এসেছি। ইটভাটা থেকে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের উপর গুলি ছোঁড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি বাড়িতে ছিলাম। আমি ওইখানে ছিলাম না।
মোবাইল কোর্ট থেকে ফিরে রায়পুরা উপজেলার পান্থশালা ফেরীঘাটে এসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন মোবাইল কোর্টের নেতৃত্ব প্রদানকারী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা। তিনি বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে প্রতিনিয়তই ভালো উত্তোলন হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা আজ মোবাইল কোর্টে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে আমরা দেখতে পেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার সীমানা পেরিয়ে রায়পুরা উপজেলার মির্জাচরে এসে অনেক গুলো চুম্বক ড্রেজার দ্বারা তারা বালু উত্তোলন করছিল। সে সময় আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে আমরা একটি ড্রেজারে থাকা ২জনকে আটক করি।
ইতিমধ্যে তাদের ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে তাদের উপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অন্যদিকে তার পাশে চরমধুয়া ইউনিয়নে একটি অবৈধ ইটভাটার পাশে ড্রেজার লাগিয়ে একদল বালু খেকো বালু উত্তোলন করতেছিলো। সে খবর পেয়ে সেখানে যাওয়ার পথেই তারা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আমাদের উপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সে সময় আমাদের সাথে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স না থাকায় আমরা সেখান থেকে চলে আসি। ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহ করেছি কে বা কারা এর সাথে জরিত তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত মামলার ব্যবস্থা করছি। যাদেরকে সন্দেহ করেছি, আশাকরি যে তারা দ্রুত গ্রেপ্তার হবে।
এছাড়া আমরা যদি মেঘনা নদীসহ ফসলী জমি ও ঘরবাড়ি বাঁচাতে চাই তাহলে এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স যেমন কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ সহ অন্যান্য বাহিনীর সহযোগিতা লাগবে। বিষয়টি আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাবো।