৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য
যে কারণে জনতা ব্যাংক এস আলমের সম্পত্তি নিলাম

- সময় ০৮:০২:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
- / 238
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একচেটিয়া ব্যাংকিং খাতে দাপট দেখিয়েছে এস আলম গ্রুপ। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। সরকার পরিবর্তনের পর বৃহৎ এই শিল্পগোষ্ঠীর সম্পত্তি নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড।
মূলতা, বকেয়া ঋণের টাকা আদায়ে এস আলমের সম্পত্তি নিলামে তুলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। এস আলম গ্রুপের কাছ থেকে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক গ্রুপটির অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের জামানত সম্পত্তি নিলাম করার ঘোষণা দিয়েছে।
গত ১ নভেম্বর জনতা ব্যাংক পত্রিকায় নিলাম সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২০ নভেম্বর নিলামের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী, এ ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে এস আলম গ্রুপের ১৮৬০ শতাংশ জমি, যার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৩৫৮ কোটি টাকা। এ দাম পাওনা টাকার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ কম। এ সম্পত্তি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব নয়। বকেয়া বাকি টাকা আদায়ে আরও আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে।
অর্থঋণ আদালত আইনের ১২(৩) ধারা অনুযায়ী, ব্যাংক মামলা করার আগেই জামানতের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আদায় সম্ভব।
বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর ২০২১ সালের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকা না মেনে ঋণসীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে সাধারণ বিমা ভবনে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম করপোরেট শাখা থেকে গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন প্রাথমিকভাবে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এই ঋণ ২০২১ সাল পর্যন্ত সুদে আসলে মোট এক হাজার ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৬১৭.৪৭ কোটি টাকা পিএডি (পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট), ২২৩.১৮ কোটি টাকা এলটিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট) ঋণ এবং ২২৯.৯৯ কোটি টাকা সিসি হাইপো ঋণ। সুদাসল মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্যাংক দখলের জন্য দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের আরও ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যার পরিমাণ ১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের তদন্তে ভ্যাট ফাঁকির এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এস আলমের যেসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে, সেগুলো হলো এস আলম স্টিলস, চেমন ইস্পাত, এস আলম রিফাইন্ড সুগার, এস এস পাওয়ার, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট, এস আলম প্রোপার্টিজ, এস আলম কোল্ড রি-রোলিং মিলস, মাসুদ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস, এস আলম সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ।
এ ছাড়া কয়েক মাসে একই ভ্যাট কমিশনারেট এই শিল্পগোষ্ঠীর অপর দুই প্রতিষ্ঠান এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছিল। বিষয়টি এখন আদালতে গড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে এই পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের ১২ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পেয়েছেন ভ্যাট কর্মকর্তারা।