ঢাকা ০১:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেসব দেশের মুদ্রায় নেতাদের ছবি

আকাশ ইসলাম
  • সময় ০৪:৫৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • / 238

২০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও এক হাজার টাকা মূলমানের নতুন নোট ছাপাবে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব নোটে বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে; যা বাতিল করা হবে নতুন নকশায়। পর্যায়ক্রমে টাকার নোট থেকেই বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলে দেওয়া হতে পারে। নতুন নোট বাজারে আসতে দেড় বছরের বেশি সময় লাগতে পারে।

তবে এমন  উদ্যোগ এবারই প্রথম না। এর আগেও বিভিন্ন সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নেয় এবং সমালোচিত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো বাজারে ১, ৫, ১০ ও ১০০ টাকার নোট ছাড়া হয়। এসব নোটের প্রতিটিতেই শেখ মুজিবের ছবি ছিল। ৭৫ পরবর্তী সরকার সেই নোট বাতিল করে নতুন নকশায় নোট বাজারে ছাড়ে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি সংবলিত ১০ ও ৫০০ টাকার নোট ছাপে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এরপর থেকে সব কাজেনোটেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছাপানোর রেওয়াজ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেবল বাংলাদেশ নয়; বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রায় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব কিংবা সংগ্রামী নেতাদের ছবি ব্যবহারের এ ধরনের রেওয়াজ রয়েছে।

ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৯ সাল ছিল ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মশতবর্ষ। সেবারই প্রথম দেশটির মুদ্রায় বা নোটে  স্থান পায় মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতি। যা এখনো বর্তমান আছে।

পাকিস্তানের নোট চিনতে হলে আগে চিনতে হয় পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছাড়া পাকিস্তনি নোট যেন অচল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষেরাও মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রতিকৃতি  সংবলিত টাকা পকেটে রাখতেন। নতুন নোট বাজারে না আনা পর্যন্ত জিন্নাহর ছবিওয়ালা টাকায় লেনদেন করতেন।

সারা দুনিয়া যাকে হো চি মিন নামে চেনে, ভিয়েতনামে তিনি ‘আঙ্কেল হো’। কারণ, সব ভিয়েতনামি তাকে পরিবারের বয়োজ্যোষ্ট সদস্য মনে করেন। ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা তিনি।

মঙ্গোলীয়ান জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন চেঙ্গিস খান। তাই তো দেশটির নোটে স্থান  পেয়েছে তাদের মহান নেতার ছবি। তিনি ছিলেন মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম খান।

চীন বিপ্লবের কিংবদন্তি মহানায়ক কমরেড মাও সেতুং। তার ছবি দেশটির কাগজে নোটে স্থান পেয়েছে।

১৯৬০ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ব্যাংক নোটের প্রচলন শুরু হয়। রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাংক নোট প্রচলনের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রানি এলিজাবেথ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ব্যাংক অব ইংল্যান্ড রানির ছবির বদলে রাজা চার্লসের ছবিওয়ালা নোট আনার সিদ্ধান্ত নেয়।

বলা হয়, রানির ছবি বদলালেও মুদধার নকশা তেমন পাল্টানো হয়নি। বৃটেনের পাশাপাশি কানাডার কিছু নোট, নিউজিল্যান্ডের মুদধা, কমনওয়েলথের কিছু অংশের সব নোট-মুদ্রাতে এলিজাবেথের ছবিও পাল্টায়। এদিকে,  কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের দেশটির নোটে রানি দ্বিতীয়
এলিজাবেথের ছবি স্থান পেয়েছে। একইভাবে জিবধাল্টার পাউন্ডেও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবি স্থান পেয়েছে।

থাইল্যান্ডের নোটে স্থান পেয়েছে দেশটির রাজা ভাজিরালংকর্নের ছবি। প্রতিটি নোটের উল্টো দিকে থাইল্যান্ডের রাজত্বকারী রাজার ছবি দিয়ে সঙ্গিত করা হয়েছে, যার সঙ্গে রাজকীয় সিলমোহরের মতো অন্যান্য চিহ্ন রয়েছে। বিপরীত দিকে থাইল্যান্ডের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন চিত্র রয়েছে।

ইরানের নোটে স্থান পেয়েছে দেশটির ধর্মীয় প্রথম সর্বোচ্চ নেতা রুহুল্লাহ খোমেনির ছবি। তিনি ছিলেন একজন ইরানি ইসলামি বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ এবং ধর্মীয় নেতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইরানের প্রথম সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

জর্ডানের নোটে দেশটির রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ৫০ জর্ডানিয়ান দিনারের নোটে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গনের পাশে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর ছবি রয়েছে।

শেয়ার করুন

যেসব দেশের মুদ্রায় নেতাদের ছবি

সময় ০৪:৫৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

২০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও এক হাজার টাকা মূলমানের নতুন নোট ছাপাবে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব নোটে বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে; যা বাতিল করা হবে নতুন নকশায়। পর্যায়ক্রমে টাকার নোট থেকেই বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলে দেওয়া হতে পারে। নতুন নোট বাজারে আসতে দেড় বছরের বেশি সময় লাগতে পারে।

তবে এমন  উদ্যোগ এবারই প্রথম না। এর আগেও বিভিন্ন সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নেয় এবং সমালোচিত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো বাজারে ১, ৫, ১০ ও ১০০ টাকার নোট ছাড়া হয়। এসব নোটের প্রতিটিতেই শেখ মুজিবের ছবি ছিল। ৭৫ পরবর্তী সরকার সেই নোট বাতিল করে নতুন নকশায় নোট বাজারে ছাড়ে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি সংবলিত ১০ ও ৫০০ টাকার নোট ছাপে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এরপর থেকে সব কাজেনোটেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছাপানোর রেওয়াজ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেবল বাংলাদেশ নয়; বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রায় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব কিংবা সংগ্রামী নেতাদের ছবি ব্যবহারের এ ধরনের রেওয়াজ রয়েছে।

ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৯ সাল ছিল ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মশতবর্ষ। সেবারই প্রথম দেশটির মুদ্রায় বা নোটে  স্থান পায় মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতি। যা এখনো বর্তমান আছে।

পাকিস্তানের নোট চিনতে হলে আগে চিনতে হয় পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছাড়া পাকিস্তনি নোট যেন অচল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষেরাও মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রতিকৃতি  সংবলিত টাকা পকেটে রাখতেন। নতুন নোট বাজারে না আনা পর্যন্ত জিন্নাহর ছবিওয়ালা টাকায় লেনদেন করতেন।

সারা দুনিয়া যাকে হো চি মিন নামে চেনে, ভিয়েতনামে তিনি ‘আঙ্কেল হো’। কারণ, সব ভিয়েতনামি তাকে পরিবারের বয়োজ্যোষ্ট সদস্য মনে করেন। ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা তিনি।

মঙ্গোলীয়ান জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন চেঙ্গিস খান। তাই তো দেশটির নোটে স্থান  পেয়েছে তাদের মহান নেতার ছবি। তিনি ছিলেন মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম খান।

চীন বিপ্লবের কিংবদন্তি মহানায়ক কমরেড মাও সেতুং। তার ছবি দেশটির কাগজে নোটে স্থান পেয়েছে।

১৯৬০ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ব্যাংক নোটের প্রচলন শুরু হয়। রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাংক নোট প্রচলনের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রানি এলিজাবেথ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ব্যাংক অব ইংল্যান্ড রানির ছবির বদলে রাজা চার্লসের ছবিওয়ালা নোট আনার সিদ্ধান্ত নেয়।

বলা হয়, রানির ছবি বদলালেও মুদধার নকশা তেমন পাল্টানো হয়নি। বৃটেনের পাশাপাশি কানাডার কিছু নোট, নিউজিল্যান্ডের মুদধা, কমনওয়েলথের কিছু অংশের সব নোট-মুদ্রাতে এলিজাবেথের ছবিও পাল্টায়। এদিকে,  কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের দেশটির নোটে রানি দ্বিতীয়
এলিজাবেথের ছবি স্থান পেয়েছে। একইভাবে জিবধাল্টার পাউন্ডেও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবি স্থান পেয়েছে।

থাইল্যান্ডের নোটে স্থান পেয়েছে দেশটির রাজা ভাজিরালংকর্নের ছবি। প্রতিটি নোটের উল্টো দিকে থাইল্যান্ডের রাজত্বকারী রাজার ছবি দিয়ে সঙ্গিত করা হয়েছে, যার সঙ্গে রাজকীয় সিলমোহরের মতো অন্যান্য চিহ্ন রয়েছে। বিপরীত দিকে থাইল্যান্ডের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন চিত্র রয়েছে।

ইরানের নোটে স্থান পেয়েছে দেশটির ধর্মীয় প্রথম সর্বোচ্চ নেতা রুহুল্লাহ খোমেনির ছবি। তিনি ছিলেন একজন ইরানি ইসলামি বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ এবং ধর্মীয় নেতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইরানের প্রথম সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

জর্ডানের নোটে দেশটির রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ৫০ জর্ডানিয়ান দিনারের নোটে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গনের পাশে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর ছবি রয়েছে।