ঢাকা ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে হত্যা করা হয় হামাস নেতা সিনওয়ারকে

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০২:৩৮:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / 227

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। অবশেষে এক বছরেরও বেশি সময় পর, ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে যে তারা সিনওয়ারকে হত্যা করেছে। যখন ৬১ বছর বয়সী এই হামাস নেতা গাজায় আত্মগোপনে চলে যান। বলা হয়, সিনওয়ার বেশিরভাগ সময় গাজার সুড়ঙ্গে লুকিয়ে ছিলেন।

সিনওয়ার, যিনি হামাসের সামরিক শাখার প্রধান এবং গাজার অন্যতম প্রভাবশালী নেতা, গত এক বছরে বেশ কিছু হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৭ অক্টোবরের ইসরায়েলের উপর হামলার পরিকল্পনা করার পর তিনি গাজার দক্ষিণে পালিয়ে যান। তবে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অবশেষে তাকে খুঁজে পায় এবং হত্যা করে।

বুধবার রাফাহ অঞ্চলের তাল আল-সুলতানে টহল দেওয়ার সময় ইসরায়েলি সেনাদের ৮২৮তম বিসলামাক ব্রিগেডের একটি ইউনিট তিনজন সশস্ত্র যোদ্ধাকে হত্যা করে। তখনও ইসরায়েলি সেনারা বুঝতে পারেনি যে তাঁদের একজন ছিল ইয়াহিয়া সিনওয়ার। বৃহস্পতিবার, ইসরায়েলি বাহিনী পুনরায় ঘটনাস্থলে ফিরে আসে এবং মৃতদেহগুলো পুনরায় পরীক্ষা করে। একটি মৃতদেহের চেহারার সঙ্গে সিনওয়ারের সাদৃশ্য দেখে তারা সন্দেহ করে যে সেটি সিনওয়ারের হতে পারে।

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সিনওয়ারকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছিল। তাকে চিহ্নিত করতে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয় এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তেল আবিবে পাঠানো হয়। নিশ্চিত হওয়ার পর, সিনওয়ারের মৃতদেহ গাজা থেকে বের করে ইসরায়েলে নিয়ে আসা হয়।

আইডিএফ-এর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, “আমরা জানতাম না যে তিনি (সিনওয়ার) সেখানে ছিলেন, তবে আমরা অভিযান চালিয়েছি।” ড্রোনের মাধ্যমে সিনওয়ারের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর, তিনি একটি ভবনের মধ্যে প্রবেশ করলে তাকে হত্যা করা হয়। তাঁর দেহ থেকে ফ্ল্যাক জ্যাকেট, বন্দুক এবং প্রায় ৪০ হাজার শেকেল উদ্ধার করা হয়।

হাগারি আরও জানান, ইসরায়েলি সেনারা ছয় সপ্তাহ আগে এক সুড়ঙ্গে ছয়জন জিম্মির মৃতদেহ খুঁজে পায়। সেখান থেকেই প্রথমবারের মতো সিনওয়ারের ডিএনএ পাওয়া যায়, যা ইসরায়েলকে তার পিছু নিতে সাহায্য করে। শেষ পর্যন্ত তার অবস্থান শনাক্ত করে, ইসরায়েলি বাহিনী সফল হয়।

হাগারি আরও উল্লেখ করেন, ইসরায়েল এখন সিনওয়ারের ভাই মুহাম্মদ সিনওয়ারসহ হামাসের অন্যান্য সামরিক কমান্ডারদের খুঁজছে। এতে বোঝা যায় যে ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ছিল হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধ্বংস করা।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, “তিনি একজন কমান্ডার হিসেবে মারা যাননি, বরং নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য পালাতে গিয়েছিলেন। এটি আমাদের শত্রুদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা।” গ্যালান্টের এই বক্তব্য ইসরায়েলের দৃঢ় অবস্থানকেই তুলে ধরে, যে তারা হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোন ছাড় দেবে না।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে, যেখানে সিনওয়ারের শেষ মুহূর্তগুলি ধারণ করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বিধ্বস্ত ভবনের জানালা দিয়ে একজন ব্যক্তি আহত অবস্থায় আর্মচেয়ারে বসে আছেন, তাঁর মুখ স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা। তিনি ড্রোনের দিকে একটি লাঠি ছুঁড়ে মারেন এবং ভিডিওটি শেষ হয়।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক ভিডিও বিবৃতিতে তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা করেন। নেতানিয়াহু বলেন, “সিনওয়ারের মৃত্যু গাজার যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, তবে এটি শেষের শুরু।”

এই ঘটনাটি ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সিনওয়ারের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার মৃত্যু হামাসের জন্য একটি বড় আঘাত, যা এই সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

শেয়ার করুন

যেভাবে হত্যা করা হয় হামাস নেতা সিনওয়ারকে

সময় ০২:৩৮:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। অবশেষে এক বছরেরও বেশি সময় পর, ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে যে তারা সিনওয়ারকে হত্যা করেছে। যখন ৬১ বছর বয়সী এই হামাস নেতা গাজায় আত্মগোপনে চলে যান। বলা হয়, সিনওয়ার বেশিরভাগ সময় গাজার সুড়ঙ্গে লুকিয়ে ছিলেন।

সিনওয়ার, যিনি হামাসের সামরিক শাখার প্রধান এবং গাজার অন্যতম প্রভাবশালী নেতা, গত এক বছরে বেশ কিছু হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৭ অক্টোবরের ইসরায়েলের উপর হামলার পরিকল্পনা করার পর তিনি গাজার দক্ষিণে পালিয়ে যান। তবে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অবশেষে তাকে খুঁজে পায় এবং হত্যা করে।

বুধবার রাফাহ অঞ্চলের তাল আল-সুলতানে টহল দেওয়ার সময় ইসরায়েলি সেনাদের ৮২৮তম বিসলামাক ব্রিগেডের একটি ইউনিট তিনজন সশস্ত্র যোদ্ধাকে হত্যা করে। তখনও ইসরায়েলি সেনারা বুঝতে পারেনি যে তাঁদের একজন ছিল ইয়াহিয়া সিনওয়ার। বৃহস্পতিবার, ইসরায়েলি বাহিনী পুনরায় ঘটনাস্থলে ফিরে আসে এবং মৃতদেহগুলো পুনরায় পরীক্ষা করে। একটি মৃতদেহের চেহারার সঙ্গে সিনওয়ারের সাদৃশ্য দেখে তারা সন্দেহ করে যে সেটি সিনওয়ারের হতে পারে।

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সিনওয়ারকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছিল। তাকে চিহ্নিত করতে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয় এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তেল আবিবে পাঠানো হয়। নিশ্চিত হওয়ার পর, সিনওয়ারের মৃতদেহ গাজা থেকে বের করে ইসরায়েলে নিয়ে আসা হয়।

আইডিএফ-এর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, “আমরা জানতাম না যে তিনি (সিনওয়ার) সেখানে ছিলেন, তবে আমরা অভিযান চালিয়েছি।” ড্রোনের মাধ্যমে সিনওয়ারের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর, তিনি একটি ভবনের মধ্যে প্রবেশ করলে তাকে হত্যা করা হয়। তাঁর দেহ থেকে ফ্ল্যাক জ্যাকেট, বন্দুক এবং প্রায় ৪০ হাজার শেকেল উদ্ধার করা হয়।

হাগারি আরও জানান, ইসরায়েলি সেনারা ছয় সপ্তাহ আগে এক সুড়ঙ্গে ছয়জন জিম্মির মৃতদেহ খুঁজে পায়। সেখান থেকেই প্রথমবারের মতো সিনওয়ারের ডিএনএ পাওয়া যায়, যা ইসরায়েলকে তার পিছু নিতে সাহায্য করে। শেষ পর্যন্ত তার অবস্থান শনাক্ত করে, ইসরায়েলি বাহিনী সফল হয়।

হাগারি আরও উল্লেখ করেন, ইসরায়েল এখন সিনওয়ারের ভাই মুহাম্মদ সিনওয়ারসহ হামাসের অন্যান্য সামরিক কমান্ডারদের খুঁজছে। এতে বোঝা যায় যে ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ছিল হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধ্বংস করা।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, “তিনি একজন কমান্ডার হিসেবে মারা যাননি, বরং নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য পালাতে গিয়েছিলেন। এটি আমাদের শত্রুদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা।” গ্যালান্টের এই বক্তব্য ইসরায়েলের দৃঢ় অবস্থানকেই তুলে ধরে, যে তারা হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোন ছাড় দেবে না।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে, যেখানে সিনওয়ারের শেষ মুহূর্তগুলি ধারণ করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বিধ্বস্ত ভবনের জানালা দিয়ে একজন ব্যক্তি আহত অবস্থায় আর্মচেয়ারে বসে আছেন, তাঁর মুখ স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা। তিনি ড্রোনের দিকে একটি লাঠি ছুঁড়ে মারেন এবং ভিডিওটি শেষ হয়।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক ভিডিও বিবৃতিতে তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা করেন। নেতানিয়াহু বলেন, “সিনওয়ারের মৃত্যু গাজার যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, তবে এটি শেষের শুরু।”

এই ঘটনাটি ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সিনওয়ারের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার মৃত্যু হামাসের জন্য একটি বড় আঘাত, যা এই সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।