যুদ্ধবিরতির মুক্তি পাবে ৩৩ জিম্মি
- সময় ০৮:৩৭:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
- / 26
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার অগ্রগতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। কাতারের মধ্যস্ততা ও আমেরিকার প্রচেষ্টায় হওয়া এই চুক্তির প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
হামাস গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি দিতে খসড়া চুক্তি গ্রহণ করেছে বলে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) বরাতে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যমটি। আজই চুক্তিটি হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন আলোচনায় জড়িত ইসরায়েলি দুই কর্মকর্তা।
এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, চুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। তবে বিস্তারিত চূড়ান্ত করা হচ্ছে। পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় জমা দিতে হবে।
এপি প্রস্তাবিত চুক্তির একটি অনুলিপি পেয়েছে। একজন মিশরীয় কর্মকর্তা ও হামাসের একজন কর্মকর্তাও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিন কর্মকর্তাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুদ্ধদ্বার আলোচনার বিষয়ে কথা বলেছেন।
এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি আসন্ন হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পরে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনার বিশদ বিবরণ চূড়ান্ত করার আশায় আলোচকরা কাতারে বৈঠক করছেন।
মধ্যস্থতাকারীরা গতকাল ইসরায়েল ও হামাসকে একটি চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া দিয়েছিল। কাতারের রাজধানী দোহায় জো বাইডেন ও আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়ের দূতদের উপস্থিতিতে আলোচনায় ‘বাধা অতিক্রমের’ পর এক কর্মকর্তা আলোচনার বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে উল্লেখ করে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি… অবশ্যই আমরা আশাবাদী এটি খুব শিগগিরই একটি চুক্তিতে নিয়ে যাবে। একটি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত… আমাদের উচিত এখন যা ঘটছে তা নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজিত হবেন না।’
আলোচনার ঘনিষ্ঠ একটি ফিলিস্তিনি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘সব ঠিকঠাক থাকলে’ মঙ্গলবার চুক্তিটি চূড়ান্ত হবে বলে তিনি আশা করছেন।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ ও বাইডেনের দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক উভয়েই কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি আয়োজিত আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ইসরায়েলের প্রতিনিধিত্ব করছেন গোয়েন্দা সংস্থার মোসাদের পরিচালক ডেভিড বার্নিয়া ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের পরিচালক রনেন বার।
এপির হাতে আসা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা করা চুক্তির খসড়া অনুসারে, ইসরায়েলকে জিম্মি করে রাখা নারী সৈন্যদের মুক্তির জন্য বড় ছাড় দিতে হবে।
তিন-পর্যায়ের চুক্তিতে ইসরায়েলের হাতে বন্দি শত শত ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুর বিনিময়ে নারী, শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক ও আহত বেসামরিক নাগরিকসহ ৩৩ জিম্মিকে ধীরে ধীরে মুক্তি দিয়ে শুরু হবে।
৩৩ জনের মধ্যে পাঁচ নারী ইসরায়েলি সৈন্য থাকবে, যাদের প্রত্যেককে ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনের সম্ভাব্য মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩০ জন দোষী সাব্যস্ত নিরাপত্তা বন্দি রয়েছে, যারা যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ৪২ দিনের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার জনবহুল এলাকা থেকে প্রত্যাহার করা হবে। ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেওয়া হবে। প্রতিদিন মানবিক সহায়তার প্রায় ৬০০ ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
এই চুক্তিটি প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলকে ফিলাডেলফি করিডোরের নিয়ন্ত্রণে থাকার অনুমতি দেবে, যেটি হামাস প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলকে প্রত্যাহারের দাবি করেছিল। তবে ইসরায়েল নেটজারিম করিডোর থেকে সরে আসবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, হামাস অবশিষ্ট জীবিত বন্দিদের, প্রধানত পুরুষ সৈন্যদের, আরও বন্দির বিনিময়ে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর ‘সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের’ বিনিময়ে মুক্তি দেবে। কিন্তু হামাস বলেছে যে তারা যুদ্ধের অবসান এবং সম্পূর্ণ ইসরায়েলি প্রত্যাহার ছাড়া বাকি জিম্মিদের মুক্ত করবে না।
তৃতীয় পর্যায়ে, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গাজায় তিন থেকে পাঁচ বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনার বিনিময়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
শেয়ার করুন
যুদ্ধবিরতির মুক্তি পাবে ৩৩ জিম্মি
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার অগ্রগতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। কাতারের মধ্যস্ততা ও আমেরিকার প্রচেষ্টায় হওয়া এই চুক্তির প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
হামাস গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি দিতে খসড়া চুক্তি গ্রহণ করেছে বলে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) বরাতে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যমটি। আজই চুক্তিটি হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন আলোচনায় জড়িত ইসরায়েলি দুই কর্মকর্তা।
এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, চুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। তবে বিস্তারিত চূড়ান্ত করা হচ্ছে। পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় জমা দিতে হবে।
এপি প্রস্তাবিত চুক্তির একটি অনুলিপি পেয়েছে। একজন মিশরীয় কর্মকর্তা ও হামাসের একজন কর্মকর্তাও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিন কর্মকর্তাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুদ্ধদ্বার আলোচনার বিষয়ে কথা বলেছেন।
এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি আসন্ন হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পরে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনার বিশদ বিবরণ চূড়ান্ত করার আশায় আলোচকরা কাতারে বৈঠক করছেন।
মধ্যস্থতাকারীরা গতকাল ইসরায়েল ও হামাসকে একটি চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া দিয়েছিল। কাতারের রাজধানী দোহায় জো বাইডেন ও আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়ের দূতদের উপস্থিতিতে আলোচনায় ‘বাধা অতিক্রমের’ পর এক কর্মকর্তা আলোচনার বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে উল্লেখ করে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি… অবশ্যই আমরা আশাবাদী এটি খুব শিগগিরই একটি চুক্তিতে নিয়ে যাবে। একটি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত… আমাদের উচিত এখন যা ঘটছে তা নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজিত হবেন না।’
আলোচনার ঘনিষ্ঠ একটি ফিলিস্তিনি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘সব ঠিকঠাক থাকলে’ মঙ্গলবার চুক্তিটি চূড়ান্ত হবে বলে তিনি আশা করছেন।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ ও বাইডেনের দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক উভয়েই কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি আয়োজিত আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ইসরায়েলের প্রতিনিধিত্ব করছেন গোয়েন্দা সংস্থার মোসাদের পরিচালক ডেভিড বার্নিয়া ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের পরিচালক রনেন বার।
এপির হাতে আসা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা করা চুক্তির খসড়া অনুসারে, ইসরায়েলকে জিম্মি করে রাখা নারী সৈন্যদের মুক্তির জন্য বড় ছাড় দিতে হবে।
তিন-পর্যায়ের চুক্তিতে ইসরায়েলের হাতে বন্দি শত শত ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুর বিনিময়ে নারী, শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক ও আহত বেসামরিক নাগরিকসহ ৩৩ জিম্মিকে ধীরে ধীরে মুক্তি দিয়ে শুরু হবে।
৩৩ জনের মধ্যে পাঁচ নারী ইসরায়েলি সৈন্য থাকবে, যাদের প্রত্যেককে ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনের সম্ভাব্য মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩০ জন দোষী সাব্যস্ত নিরাপত্তা বন্দি রয়েছে, যারা যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ৪২ দিনের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার জনবহুল এলাকা থেকে প্রত্যাহার করা হবে। ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেওয়া হবে। প্রতিদিন মানবিক সহায়তার প্রায় ৬০০ ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
এই চুক্তিটি প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলকে ফিলাডেলফি করিডোরের নিয়ন্ত্রণে থাকার অনুমতি দেবে, যেটি হামাস প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলকে প্রত্যাহারের দাবি করেছিল। তবে ইসরায়েল নেটজারিম করিডোর থেকে সরে আসবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, হামাস অবশিষ্ট জীবিত বন্দিদের, প্রধানত পুরুষ সৈন্যদের, আরও বন্দির বিনিময়ে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর ‘সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের’ বিনিময়ে মুক্তি দেবে। কিন্তু হামাস বলেছে যে তারা যুদ্ধের অবসান এবং সম্পূর্ণ ইসরায়েলি প্রত্যাহার ছাড়া বাকি জিম্মিদের মুক্ত করবে না।
তৃতীয় পর্যায়ে, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গাজায় তিন থেকে পাঁচ বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনার বিনিময়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।