ঢাকা ১০:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যিশুর জন্মদিন- সান্তা ক্লজ কে?

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১০:২৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 20

বড়দিন

ডিসেম্বর মাসের পঁচিশ তারিখ বিশ্বজুড়ে পালিত হয় যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে। কিন্তু এই দিনটি আদৌ যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন কিনা, তা নিয়ে কিন্তু বিস্তর মতপার্থক্য আছে। তারিখের কথা ছেড়েই দিন, প্রথম খ্রিস্টাব্দকেও তো কেউ কেউ যিশুখ্রিস্টের জন্মসাল বলে অস্বীকার করেছেন। মানে তাঁদের দাবি, খ্রিস্টাব্দের শুরুটাই ভুল সময় থেকে গণ্য হয়ে আসছে। যিশুর জন্মদিন পালন না করলেও মুসলমানরা তাদের ধর্ম বিশ্বাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে খ্রিস্টানদের যিশুকে গভীরভাবে সম্মান করেন।
নবী মোহাম্মদের আগে অবতীর্ণদের মধ্যে যিশুকে সবচেয়ে সম্মানিতদের অন্যতম বলে স্থান দিয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফ। সত্যি কথা হলো, কোরআনে অসংখ্যবার উল্লিখিত হয়েছে যিশুর (যাকে আরবিতে বলা হয় ঈসা) নাম, নবী মোহাম্মদের নামের চেয়েও বেশিবার।
ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থে নাম ধরে উল্লেখ করা হয়েছে এমন নারী আছেন মাত্র একজন। তিনি হচ্ছেন কুমারী মেরি । আরবিতে তার নাম মরিয়ম। মেরি বা মরিয়মের নামে কোরানের একটি পূর্ণাঙ্গ সুরার নামকরণ হয়েছে – যাতে কুমারীর গর্ভ থেকে যিশুর জন্মের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
তবে ইসলামের এই কাহিনিতে কোনো জোসেফের উল্লেখ নেই, নেই কোন যিশুর জন্মের বার্তাবাহী জ্ঞানী ব্যক্তি বা পশুর আস্তাবলের কথাও।
এখানে আছে, মেরি একাই যিশুর জন্ম দিয়েছিলেন মরুভূমিতে, একটি মরা খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিয়ে। সেখানে তার খাবার জন্য গাছ থেকে পাকা খেজুর পড়ে, এবং তার পায়ের কাছে পানির ধারার সৃষ্টি হয়।

একজন অবিবাহিত নারী সন্তান জন্ম দেবার ফলে তাকে নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু যিশু – নবজাত শিশু অবস্থা থেকেই ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ হিসেবে কথা বলতে শুরু করেন।

এই যাদুকরী ঘটনার পর তার মায়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা থেমে যায়। এটি হচ্ছে সংস্কারের ওপর বিজয়ের এক গল্প।

তবে, একদল গবেষক অনুমান করেছেন, ২৫শে ডিসেম্বর দিনটিকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে নির্বাচন করেছে রোমান ক্যাথলিক চার্চ। এর কারণ সম্ভবত এই দিনটি শীতকালীন অয়নকাল এবং প্রাচীন রোমান উৎসব স্যাটার্নালিয়ার মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে। পণ্ডিত ইগনাসিও এল গোটজ তাঁর ‘Jesus the Jew: Reality, Politics, and Myth-A Personal Encounter’ বইতে বলেছেন, চার্চের এই দিনটি নির্বাচন করার আরও একটি কারণ হল এই সময়ে বিভিন্ন পৌত্তলিক ধর্মের শীতকালীন উৎসব চলে, তার মধ্যে এটিও একটি বড়ো উৎসব হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

কিছু পণ্ডিত মনে করেন যিশু জন্মেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক ও খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। বাইবেলের রাজা হেরোড দ্য গ্রেটের গল্প অনুসরণ করেই এমন অনুমান। গল্প অনুসারে, যিশুকে হত্যা করার অভিপ্রায়ে রাজা হেরোড বেথলেহেম এবং আশপাশের দুই বছরের কম বয়সী সমস্ত পুরুষ শিশুদের হত্যা করার নির্দেশ দেন, এই ঘটনা ‘ম্যাসাকার অফ ইনোসেন্টস’ নামে পরিচিত।

গবেষকদের মতে এই ঘটনা ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে হেরোডের মৃত্যুর আগে। সেক্ষেত্রে যিশুর জন্মসময় হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক ও খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়কে স্বীকার করে নিতে হয়। তবে অনেক ইতিহাসবিদের মতে হেরোডের এই গণ-শিশুহত্যা একটি মিথ মাত্র, এর কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। তাছাড়া হেরোডের মৃত্যুর সময় নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, তাই এই ঘটনাকে ভিত্তি করে যিশুখ্রিস্টের জন্মসাল নির্ধারণ করা যায় না।

যিশুর জন্মসম্পর্কিত আরেকটি বিতর্কিত উপাদান হল বেথলেহেমের নক্ষত্র। প্রচলিত কিংবদন্তি অনুযায়ী, তিনজন সন্ত দৈবাদেশ পেয়ে একটি নক্ষত্রকে অনুসরণ করে বেথলেহেম নগরে পৌঁছেছিলেন সদ্যোজাত যিশুকে দেখার জন্য। এই চলমান নক্ষত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জ্যোতর্বিদরা যিশুর জন্মের প্রকৃত সময় বার করার চেষ্টা করেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানী কলিন হামফ্রের মতে এই নক্ষত্র অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন একটি ধূমকেতু, যা চৈনিক পর্যবেক্ষকরা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। কারও কারও মতে, শুক্র গ্রহ এবং বৃহস্পতি গ্রহ কাছাকাছি আসার ফলে আকাশে অতি উজ্জ্বল আলোর সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই কিংবদন্তির চলমান নক্ষত্র। এই ঘটনা ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর জুন মাসে। প্রায় অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর অক্টোবর মাসে, তবে এক্ষেত্রে শনি গ্রহ আর বৃহস্পতি গ্রহ কাছাকাছি এসেছিল।

তবে এর মধ্যে কোনো অনুমানের সপক্ষেই নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই যিশুখ্রিস্টের জন্মের সময় নিয়ে বিতর্কের অবসানও হয়নি।

বড়দিন সমগ্র বিশ্বের খ্রিস্টবিশ্বাসীদের জন্য বড় আনন্দের দিন। অনেক সময় আমরা আনন্দ ও সুখ শব্দ দুটিকে একই অর্থে ব্যবহার করি। কিন্তু বড়দিনের কিছু ইতিহাস গোপন করা হয় বলেই মনে করেন ইতিহাসবিদরা।
এই বড়দিন আধ্যাত্মিক অর্থে আনন্দ শব্দটি একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সুখের সঙ্গে জাগতিক অর্থ-সম্পদের বিষয়টি জড়িত থাকে অর্থাৎ জাগতিক অর্থ-সম্পদ দিয়েই আমরা সুখের মাপকাঠি নির্ধারণ করি।

কিন্তু আনন্দ শব্দটি একেবারেই ঐশ্বরিক। আমরা যখন ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করি, তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা উপলব্ধি করি, তখনই আনন্দিত হই। যিশুখ্রিস্ট বিশ্বের ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে এ আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন।

সান্তা ক্লজ
সান্তা ক্লজ

কোথা থেকে আসলো সান্তা ক্লজ?

সান্তা ক্লজ! একটি নাম যা শুধু শোনা মাত্রই শিশুদের মুখে হাসি এনে দেয়। কিন্তু এই রহস্যময় চরিত্রের উৎপত্তি কীভাবে হলো? সান্তা ক্লজের গল্পের শুরুর জন্য আমাদের ফিরতে হবে চতুর্থ শতকের দিকে। তুরস্কের মাইরা শহরে জন্ম নেন একজন পাদরি, তার নাম ছিল সেন্ট নিকোলাস। দানশীলতা এবং শিশুদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার জন্য তিনি বিখ্যাত হন।

কথিত আছে, তিনি তার সম্পদ ব্যবহার করে দরিদ্র পরিবারকে সাহায্য করতেন, এমনকি গোপনে উপহারও রেখে যেতেন। এই কাজগুলোই পরবর্তীতে তাকে প্রেরণা দেয় “গিভার অফ গিফটস” হিসেবে পরিচিত হতে।”

সেন্ট নিকোলাসের কাহিনী ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সান্তা ক্লজ নামে তার পরিচিতি আসে ডাচ সংস্কৃতির মাধ্যমে। ডাচরা সেন্ট নিকোলাসকে ডাকত ‘সিন্টার ক্লাস’ নামে। ১৭শ শতাব্দীতে যখন ডাচরা আমেরিকার নিউ ইয়র্ক এলাকায় বসতি স্থাপন করে, তখন তারা তাদের এই প্রিয় লোকগাথা সঙ্গে নিয়ে আসে।”

আমাদের পরিচিত আধুনিক সান্তা ক্লজের রূপটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। ১৮২৩ সালে ক্লিমেন্ট ক্লার্ক মুরের কবিতা “এ ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস” প্রকাশিত হয়, যেখানে সান্তাকে একটি হাসিখুশি, লাল পোশাক পরা বৃদ্ধ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
১৮৮১ সালে কার্টুনিস্ট থমাস নাস্ট এই চিত্রটিকে আরও প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর ২০শ শতাব্দীতে কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনে সান্তার উজ্জ্বল লাল-সাদা রঙের পোশাক তাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে।”

সান্তা ক্লজ এখন আর শুধু একটি চরিত্র নয়; এটি ভালোবাসা, আনন্দ এবং দানের প্রতীক। বিভিন্ন দেশে সান্তার গল্পের নিজস্ব সংস্করণ রয়েছে। ফ্রান্সে তাকে বলা হয় ‘পের নোয়েল,’ ফিনল্যান্ডে ‘জোলুপুক্কি,’ এবং রাশিয়ায় ‘ডেড মরোজ।’ প্রত্যেক সংস্কৃতিতে সান্তা একটি বিশেষ বার্তা বহন কওে প্রেম এবং উদারতার।”

সান্তা ক্লজ কেবল শিশুদের উপহার দেন না; তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন যে দানের আনন্দ সর্বজনীন। ইতিহাস যতই পরিবর্তন হোক, সান্তার বার্তা থেকে যায় একই- ভালোবাসা, আনন্দ, এবং একে অপরের প্রতি উদারতা।

শেয়ার করুন

যিশুর জন্মদিন- সান্তা ক্লজ কে?

সময় ১০:২৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ডিসেম্বর মাসের পঁচিশ তারিখ বিশ্বজুড়ে পালিত হয় যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে। কিন্তু এই দিনটি আদৌ যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন কিনা, তা নিয়ে কিন্তু বিস্তর মতপার্থক্য আছে। তারিখের কথা ছেড়েই দিন, প্রথম খ্রিস্টাব্দকেও তো কেউ কেউ যিশুখ্রিস্টের জন্মসাল বলে অস্বীকার করেছেন। মানে তাঁদের দাবি, খ্রিস্টাব্দের শুরুটাই ভুল সময় থেকে গণ্য হয়ে আসছে। যিশুর জন্মদিন পালন না করলেও মুসলমানরা তাদের ধর্ম বিশ্বাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে খ্রিস্টানদের যিশুকে গভীরভাবে সম্মান করেন।
নবী মোহাম্মদের আগে অবতীর্ণদের মধ্যে যিশুকে সবচেয়ে সম্মানিতদের অন্যতম বলে স্থান দিয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফ। সত্যি কথা হলো, কোরআনে অসংখ্যবার উল্লিখিত হয়েছে যিশুর (যাকে আরবিতে বলা হয় ঈসা) নাম, নবী মোহাম্মদের নামের চেয়েও বেশিবার।
ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থে নাম ধরে উল্লেখ করা হয়েছে এমন নারী আছেন মাত্র একজন। তিনি হচ্ছেন কুমারী মেরি । আরবিতে তার নাম মরিয়ম। মেরি বা মরিয়মের নামে কোরানের একটি পূর্ণাঙ্গ সুরার নামকরণ হয়েছে – যাতে কুমারীর গর্ভ থেকে যিশুর জন্মের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
তবে ইসলামের এই কাহিনিতে কোনো জোসেফের উল্লেখ নেই, নেই কোন যিশুর জন্মের বার্তাবাহী জ্ঞানী ব্যক্তি বা পশুর আস্তাবলের কথাও।
এখানে আছে, মেরি একাই যিশুর জন্ম দিয়েছিলেন মরুভূমিতে, একটি মরা খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিয়ে। সেখানে তার খাবার জন্য গাছ থেকে পাকা খেজুর পড়ে, এবং তার পায়ের কাছে পানির ধারার সৃষ্টি হয়।

একজন অবিবাহিত নারী সন্তান জন্ম দেবার ফলে তাকে নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু যিশু – নবজাত শিশু অবস্থা থেকেই ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ হিসেবে কথা বলতে শুরু করেন।

এই যাদুকরী ঘটনার পর তার মায়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা থেমে যায়। এটি হচ্ছে সংস্কারের ওপর বিজয়ের এক গল্প।

তবে, একদল গবেষক অনুমান করেছেন, ২৫শে ডিসেম্বর দিনটিকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে নির্বাচন করেছে রোমান ক্যাথলিক চার্চ। এর কারণ সম্ভবত এই দিনটি শীতকালীন অয়নকাল এবং প্রাচীন রোমান উৎসব স্যাটার্নালিয়ার মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে। পণ্ডিত ইগনাসিও এল গোটজ তাঁর ‘Jesus the Jew: Reality, Politics, and Myth-A Personal Encounter’ বইতে বলেছেন, চার্চের এই দিনটি নির্বাচন করার আরও একটি কারণ হল এই সময়ে বিভিন্ন পৌত্তলিক ধর্মের শীতকালীন উৎসব চলে, তার মধ্যে এটিও একটি বড়ো উৎসব হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

কিছু পণ্ডিত মনে করেন যিশু জন্মেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক ও খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। বাইবেলের রাজা হেরোড দ্য গ্রেটের গল্প অনুসরণ করেই এমন অনুমান। গল্প অনুসারে, যিশুকে হত্যা করার অভিপ্রায়ে রাজা হেরোড বেথলেহেম এবং আশপাশের দুই বছরের কম বয়সী সমস্ত পুরুষ শিশুদের হত্যা করার নির্দেশ দেন, এই ঘটনা ‘ম্যাসাকার অফ ইনোসেন্টস’ নামে পরিচিত।

গবেষকদের মতে এই ঘটনা ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে হেরোডের মৃত্যুর আগে। সেক্ষেত্রে যিশুর জন্মসময় হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক ও খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়কে স্বীকার করে নিতে হয়। তবে অনেক ইতিহাসবিদের মতে হেরোডের এই গণ-শিশুহত্যা একটি মিথ মাত্র, এর কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। তাছাড়া হেরোডের মৃত্যুর সময় নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, তাই এই ঘটনাকে ভিত্তি করে যিশুখ্রিস্টের জন্মসাল নির্ধারণ করা যায় না।

যিশুর জন্মসম্পর্কিত আরেকটি বিতর্কিত উপাদান হল বেথলেহেমের নক্ষত্র। প্রচলিত কিংবদন্তি অনুযায়ী, তিনজন সন্ত দৈবাদেশ পেয়ে একটি নক্ষত্রকে অনুসরণ করে বেথলেহেম নগরে পৌঁছেছিলেন সদ্যোজাত যিশুকে দেখার জন্য। এই চলমান নক্ষত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জ্যোতর্বিদরা যিশুর জন্মের প্রকৃত সময় বার করার চেষ্টা করেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানী কলিন হামফ্রের মতে এই নক্ষত্র অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন একটি ধূমকেতু, যা চৈনিক পর্যবেক্ষকরা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। কারও কারও মতে, শুক্র গ্রহ এবং বৃহস্পতি গ্রহ কাছাকাছি আসার ফলে আকাশে অতি উজ্জ্বল আলোর সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই কিংবদন্তির চলমান নক্ষত্র। এই ঘটনা ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর জুন মাসে। প্রায় অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর অক্টোবর মাসে, তবে এক্ষেত্রে শনি গ্রহ আর বৃহস্পতি গ্রহ কাছাকাছি এসেছিল।

তবে এর মধ্যে কোনো অনুমানের সপক্ষেই নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই যিশুখ্রিস্টের জন্মের সময় নিয়ে বিতর্কের অবসানও হয়নি।

বড়দিন সমগ্র বিশ্বের খ্রিস্টবিশ্বাসীদের জন্য বড় আনন্দের দিন। অনেক সময় আমরা আনন্দ ও সুখ শব্দ দুটিকে একই অর্থে ব্যবহার করি। কিন্তু বড়দিনের কিছু ইতিহাস গোপন করা হয় বলেই মনে করেন ইতিহাসবিদরা।
এই বড়দিন আধ্যাত্মিক অর্থে আনন্দ শব্দটি একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সুখের সঙ্গে জাগতিক অর্থ-সম্পদের বিষয়টি জড়িত থাকে অর্থাৎ জাগতিক অর্থ-সম্পদ দিয়েই আমরা সুখের মাপকাঠি নির্ধারণ করি।

কিন্তু আনন্দ শব্দটি একেবারেই ঐশ্বরিক। আমরা যখন ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করি, তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা উপলব্ধি করি, তখনই আনন্দিত হই। যিশুখ্রিস্ট বিশ্বের ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে এ আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন।

সান্তা ক্লজ
সান্তা ক্লজ

কোথা থেকে আসলো সান্তা ক্লজ?

সান্তা ক্লজ! একটি নাম যা শুধু শোনা মাত্রই শিশুদের মুখে হাসি এনে দেয়। কিন্তু এই রহস্যময় চরিত্রের উৎপত্তি কীভাবে হলো? সান্তা ক্লজের গল্পের শুরুর জন্য আমাদের ফিরতে হবে চতুর্থ শতকের দিকে। তুরস্কের মাইরা শহরে জন্ম নেন একজন পাদরি, তার নাম ছিল সেন্ট নিকোলাস। দানশীলতা এবং শিশুদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার জন্য তিনি বিখ্যাত হন।

কথিত আছে, তিনি তার সম্পদ ব্যবহার করে দরিদ্র পরিবারকে সাহায্য করতেন, এমনকি গোপনে উপহারও রেখে যেতেন। এই কাজগুলোই পরবর্তীতে তাকে প্রেরণা দেয় “গিভার অফ গিফটস” হিসেবে পরিচিত হতে।”

সেন্ট নিকোলাসের কাহিনী ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সান্তা ক্লজ নামে তার পরিচিতি আসে ডাচ সংস্কৃতির মাধ্যমে। ডাচরা সেন্ট নিকোলাসকে ডাকত ‘সিন্টার ক্লাস’ নামে। ১৭শ শতাব্দীতে যখন ডাচরা আমেরিকার নিউ ইয়র্ক এলাকায় বসতি স্থাপন করে, তখন তারা তাদের এই প্রিয় লোকগাথা সঙ্গে নিয়ে আসে।”

আমাদের পরিচিত আধুনিক সান্তা ক্লজের রূপটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। ১৮২৩ সালে ক্লিমেন্ট ক্লার্ক মুরের কবিতা “এ ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস” প্রকাশিত হয়, যেখানে সান্তাকে একটি হাসিখুশি, লাল পোশাক পরা বৃদ্ধ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
১৮৮১ সালে কার্টুনিস্ট থমাস নাস্ট এই চিত্রটিকে আরও প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর ২০শ শতাব্দীতে কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনে সান্তার উজ্জ্বল লাল-সাদা রঙের পোশাক তাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে।”

সান্তা ক্লজ এখন আর শুধু একটি চরিত্র নয়; এটি ভালোবাসা, আনন্দ এবং দানের প্রতীক। বিভিন্ন দেশে সান্তার গল্পের নিজস্ব সংস্করণ রয়েছে। ফ্রান্সে তাকে বলা হয় ‘পের নোয়েল,’ ফিনল্যান্ডে ‘জোলুপুক্কি,’ এবং রাশিয়ায় ‘ডেড মরোজ।’ প্রত্যেক সংস্কৃতিতে সান্তা একটি বিশেষ বার্তা বহন কওে প্রেম এবং উদারতার।”

সান্তা ক্লজ কেবল শিশুদের উপহার দেন না; তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন যে দানের আনন্দ সর্বজনীন। ইতিহাস যতই পরিবর্তন হোক, সান্তার বার্তা থেকে যায় একই- ভালোবাসা, আনন্দ, এবং একে অপরের প্রতি উদারতা।