মেঘনা আলম আটক ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ স্টাইলে | Bangla Affairs
০৩:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাষ্ট্রচিন্তার উদ্বেগ ও প্রতিবাদ

মেঘনা আলম আটক ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ স্টাইলে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ১০:০৮:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • / 39

মেঘনা আলম

উদ্যোক্তা ও মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে রাষ্ট্রনৈতিক বিশ্লেষণমূলক জার্নাল রাষ্ট্রচিন্তা। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে তারা ঘটনাটিকে নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক অঙ্গীকারের প্রতি গুরুতর প্রশ্ন হিসেবে উপস্থাপন করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “মেঘনা আলমকে যেভাবে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ স্টাইলে রাতের আঁধারে আটক করা হয়েছে, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহির অভাব এবং আইনের শাসনের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতাকে বিপরীত চিত্রে উপস্থাপন করেছে। প্রথমে পুলিশ পরিচয় গোপন করে তাকে তুলে নেওয়া হয়, পরে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য আসে বিভিন্ন সংস্থা থেকে—থানা জানে না, ডিবি অস্বীকার করে, শেষে ডিবি-ই স্বীকার করে। এটা প্রমাণ করে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাব এবং স্বচ্ছতা সংকট।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মেঘনা আলমকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় আটক করা হয়েছে, যা স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে বিতর্কিত ও অপব্যবহৃত আইনগুলোর অন্যতম। “এই আইনটি এক সময় স্বৈরশাসনের প্রধান হাতিয়ার ছিল। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও এই আইনের অপব্যবহার করে হাজারো মানুষকে গুম, আটক ও হত্যা করা হয়েছিল। এখনো এটি ‘আইনানুগ গুমের’ কাঠামো হিসেবে টিকে আছে—প্রথমে কাউকে গায়েব করা হয়, পরে তাকে আইনি প্রক্রিয়ার নামে কারাগারে পাঠানো হয়। এটি রাষ্ট্রীয় বর্বরতার ভয়ংকর রূপ।”

রাষ্ট্রচিন্তার দাবি, “এই কালো আইন গণতন্ত্রের চরম প্রতিপক্ষ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। বর্তমানে যখন বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, তখন এই ধরনের আইন টিকে থাকা আত্মবিরোধিতার নামান্তর।”

বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, এ ঘটনায় একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উঠেছে। “রাষ্ট্র যদি এই অভিযোগে নীরব থাকে, তাহলে তা শুধু কূটনৈতিক দুর্বলতা নয়, বরং সার্বভৌমত্বের আত্মঘাতী বিসর্জন,” বলে মন্তব্য করা হয়।

রাষ্ট্রচিন্তার পক্ষ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:

মেঘনা আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রচলিত ফৌজদারি আইনের আওতায় স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করতে হবে। এটি একটি অগণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার-বিরোধী আইন, যার আর কোনো বৈধতা নেই।

ঘটনায় জড়িত বাহিনী ও ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কূটনৈতিক তোষণের হাতিয়ার হতে পারে না।

বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে হবে। তার আচরণ কূটনৈতিক সীমালঙ্ঘন হয়ে থাকলে, তার অবস্থান পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়।

বিবৃতির শেষাংশে রাষ্ট্রচিন্তা বলেছে, “একটি রাষ্ট্রের প্রকৃত মর্যাদা তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন সে তার দুর্বলতম নাগরিকের অধিকার রক্ষা করতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার শুধু আইনত অন্যায় নয়—এটি একটি নৈতিক দেউলিয়াত্ব, যার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”

শেয়ার করুন

রাষ্ট্রচিন্তার উদ্বেগ ও প্রতিবাদ

মেঘনা আলম আটক ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ স্টাইলে

সময় ১০:০৮:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

উদ্যোক্তা ও মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে রাষ্ট্রনৈতিক বিশ্লেষণমূলক জার্নাল রাষ্ট্রচিন্তা। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে তারা ঘটনাটিকে নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক অঙ্গীকারের প্রতি গুরুতর প্রশ্ন হিসেবে উপস্থাপন করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “মেঘনা আলমকে যেভাবে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ স্টাইলে রাতের আঁধারে আটক করা হয়েছে, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহির অভাব এবং আইনের শাসনের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতাকে বিপরীত চিত্রে উপস্থাপন করেছে। প্রথমে পুলিশ পরিচয় গোপন করে তাকে তুলে নেওয়া হয়, পরে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য আসে বিভিন্ন সংস্থা থেকে—থানা জানে না, ডিবি অস্বীকার করে, শেষে ডিবি-ই স্বীকার করে। এটা প্রমাণ করে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাব এবং স্বচ্ছতা সংকট।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মেঘনা আলমকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় আটক করা হয়েছে, যা স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে বিতর্কিত ও অপব্যবহৃত আইনগুলোর অন্যতম। “এই আইনটি এক সময় স্বৈরশাসনের প্রধান হাতিয়ার ছিল। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও এই আইনের অপব্যবহার করে হাজারো মানুষকে গুম, আটক ও হত্যা করা হয়েছিল। এখনো এটি ‘আইনানুগ গুমের’ কাঠামো হিসেবে টিকে আছে—প্রথমে কাউকে গায়েব করা হয়, পরে তাকে আইনি প্রক্রিয়ার নামে কারাগারে পাঠানো হয়। এটি রাষ্ট্রীয় বর্বরতার ভয়ংকর রূপ।”

রাষ্ট্রচিন্তার দাবি, “এই কালো আইন গণতন্ত্রের চরম প্রতিপক্ষ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। বর্তমানে যখন বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, তখন এই ধরনের আইন টিকে থাকা আত্মবিরোধিতার নামান্তর।”

বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, এ ঘটনায় একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উঠেছে। “রাষ্ট্র যদি এই অভিযোগে নীরব থাকে, তাহলে তা শুধু কূটনৈতিক দুর্বলতা নয়, বরং সার্বভৌমত্বের আত্মঘাতী বিসর্জন,” বলে মন্তব্য করা হয়।

রাষ্ট্রচিন্তার পক্ষ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:

মেঘনা আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রচলিত ফৌজদারি আইনের আওতায় স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করতে হবে। এটি একটি অগণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার-বিরোধী আইন, যার আর কোনো বৈধতা নেই।

ঘটনায় জড়িত বাহিনী ও ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা কূটনৈতিক তোষণের হাতিয়ার হতে পারে না।

বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে হবে। তার আচরণ কূটনৈতিক সীমালঙ্ঘন হয়ে থাকলে, তার অবস্থান পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়।

বিবৃতির শেষাংশে রাষ্ট্রচিন্তা বলেছে, “একটি রাষ্ট্রের প্রকৃত মর্যাদা তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন সে তার দুর্বলতম নাগরিকের অধিকার রক্ষা করতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার শুধু আইনত অন্যায় নয়—এটি একটি নৈতিক দেউলিয়াত্ব, যার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”