ঢাকা ১০:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুসলিম বিশ্বের হিরো!

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৯:৫৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • / 225

Ramzan Kadyrov

রমজান কাদিরভ, চেচনিয়ার নেতা, একজন বিশিষ্ট এবং আলোচিত চরিত্র। তার নাম শুনলেই যেন মনে হয় রাশিয়ার কক্ষপথে ঘুরতে থাকা একজন শক্তিশালী যোদ্ধার কথা। আর পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি পুতিনের তৈরি ওয়ারলর্ড।

রমজান কাদিরভের জন্ম ১৯৭৬ সালে চেচনিয়ার একটি সামরিক পরিবারে। তার বাবা আখমাদ কাদিরভ ১৯৯০-এর দশকে চেচনিয়ার একজন মুফতি ছিলেন। তিনি ছিলেন চেচনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের কট্টর সমর্থক। ১৯৯৪-৯৬ সালে প্রথম চেচনিয়া যুদ্ধে স্বাধীনতাপন্থী সরকারের সঙ্গে আখমাদের বিরোধ হয়। সেই বিরোধের সূত্র ধরে তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের বলয়ে ঢুকে পড়েন।

১৯৯৯ থেকে ২০০৯; দ্বিতীয় চেচনিয়া যুদ্ধের সময় পুতিন চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতায় বসান আখমাদকে। ২০০৪ সালে আখমাদ খুনের শিকার হন। সে সময় রমজানের বয়স ছিল ২৭ বছর।

চেচনিয়ার বৈধভাবে ক্ষমতায় বসার জন্য তার বয়স তখনো তিন বছর কম ছিল। এই তিন বছরে তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দেন, যারা তার বাবার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কয়েকজনকে নীরব করে দেন, কয়েকজনকে নির্বাসনে পাঠান, আর অন্যদের খুন করা হয়।

২০০৭ সালে বয়স ৩০ হলে রমজানকে চেচনিয়ার সরকার প্রধান করা হয়। সে সময় রাশিয়া তাদের কেন্দ্রীয় বাহিনীকে চেচনিয়ার সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে পাঠিয়েছিল। ক্ষমতায় বসেই একটি অনুগত সেনাবাহিনী গঠন করেন তিনি।

২০১১ সালে কাদিরভ খুব বলিষ্ঠভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমিই বস! আমিই স্টিয়ারিংয়ের চাকা!’ এই ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার চার বছরের মাথায়। এরপর থেকে তিনি বারবার মানবাধিকার ও আইনের শাসন লঙ্ঘন করে আসছেন। তার সমর্থকেরা অপহরণ, নির্যাতন এবং চেচনিয়ার লোকজনের কাছ থেকে অর্থ লুণ্ঠনে জড়িত।

কাদিরভকে বলা হয় পুতিনের “যোদ্ধা“। পুতিনের প্রতি কাদিরভের আনুগত্য অটুট এবং এই কারণে তিনি চেচনিয়ায় প্রায় একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করছেন। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন এবং সমকামীদের প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

রমজান কাদিরভের সবচেয়ে আলোচিত দিকটি হলো তার ভয়ভীতির শাসনব্যবস্থা। তিনি নিজেকে চেচনিয়ার রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তার বিশ্বাস, শক্তি প্রয়োগই চেচনিয়াকে স্থিতিশীল রাখতে পারে। আর পুতিনের চোখে কাদিরভ একজন বিশ্বস্ত সহযোগী, যিনি চেচনিয়াকে রাশিয়ার প্রতি অনুগত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এই সম্পর্কই কাদিরভকে রাশিয়ার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে দিয়েছে।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর কাদিরভের ভূমিকা আরও বেড়েছে। এই যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে।

উচ্চ পেশাদারিত্বের কারণে তার আধাসামরিক বাহিনী স্থানীয়ভাবে ‘কাদিরভিত্সি’ নামে পরিচিত। তারা প্রাইভেট সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করে। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সমর্থনে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে কাদিরভ তার সেনাদের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে পাঠান।

সম্প্রতি এই নেতা চেচনিয়ার রাস্তায় ফিলিস্তিনের পক্ষে কোনো প্রতিবাদ হলে পুলিশকে গুলি করার অনুমতি দিয়েছেন।

শেয়ার করুন

মুসলিম বিশ্বের হিরো!

সময় ০৯:৫৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

রমজান কাদিরভ, চেচনিয়ার নেতা, একজন বিশিষ্ট এবং আলোচিত চরিত্র। তার নাম শুনলেই যেন মনে হয় রাশিয়ার কক্ষপথে ঘুরতে থাকা একজন শক্তিশালী যোদ্ধার কথা। আর পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি পুতিনের তৈরি ওয়ারলর্ড।

রমজান কাদিরভের জন্ম ১৯৭৬ সালে চেচনিয়ার একটি সামরিক পরিবারে। তার বাবা আখমাদ কাদিরভ ১৯৯০-এর দশকে চেচনিয়ার একজন মুফতি ছিলেন। তিনি ছিলেন চেচনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের কট্টর সমর্থক। ১৯৯৪-৯৬ সালে প্রথম চেচনিয়া যুদ্ধে স্বাধীনতাপন্থী সরকারের সঙ্গে আখমাদের বিরোধ হয়। সেই বিরোধের সূত্র ধরে তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের বলয়ে ঢুকে পড়েন।

১৯৯৯ থেকে ২০০৯; দ্বিতীয় চেচনিয়া যুদ্ধের সময় পুতিন চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতায় বসান আখমাদকে। ২০০৪ সালে আখমাদ খুনের শিকার হন। সে সময় রমজানের বয়স ছিল ২৭ বছর।

চেচনিয়ার বৈধভাবে ক্ষমতায় বসার জন্য তার বয়স তখনো তিন বছর কম ছিল। এই তিন বছরে তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দেন, যারা তার বাবার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কয়েকজনকে নীরব করে দেন, কয়েকজনকে নির্বাসনে পাঠান, আর অন্যদের খুন করা হয়।

২০০৭ সালে বয়স ৩০ হলে রমজানকে চেচনিয়ার সরকার প্রধান করা হয়। সে সময় রাশিয়া তাদের কেন্দ্রীয় বাহিনীকে চেচনিয়ার সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে পাঠিয়েছিল। ক্ষমতায় বসেই একটি অনুগত সেনাবাহিনী গঠন করেন তিনি।

২০১১ সালে কাদিরভ খুব বলিষ্ঠভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমিই বস! আমিই স্টিয়ারিংয়ের চাকা!’ এই ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার চার বছরের মাথায়। এরপর থেকে তিনি বারবার মানবাধিকার ও আইনের শাসন লঙ্ঘন করে আসছেন। তার সমর্থকেরা অপহরণ, নির্যাতন এবং চেচনিয়ার লোকজনের কাছ থেকে অর্থ লুণ্ঠনে জড়িত।

কাদিরভকে বলা হয় পুতিনের “যোদ্ধা“। পুতিনের প্রতি কাদিরভের আনুগত্য অটুট এবং এই কারণে তিনি চেচনিয়ায় প্রায় একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করছেন। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন এবং সমকামীদের প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

রমজান কাদিরভের সবচেয়ে আলোচিত দিকটি হলো তার ভয়ভীতির শাসনব্যবস্থা। তিনি নিজেকে চেচনিয়ার রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তার বিশ্বাস, শক্তি প্রয়োগই চেচনিয়াকে স্থিতিশীল রাখতে পারে। আর পুতিনের চোখে কাদিরভ একজন বিশ্বস্ত সহযোগী, যিনি চেচনিয়াকে রাশিয়ার প্রতি অনুগত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এই সম্পর্কই কাদিরভকে রাশিয়ার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে দিয়েছে।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর কাদিরভের ভূমিকা আরও বেড়েছে। এই যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে।

উচ্চ পেশাদারিত্বের কারণে তার আধাসামরিক বাহিনী স্থানীয়ভাবে ‘কাদিরভিত্সি’ নামে পরিচিত। তারা প্রাইভেট সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করে। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সমর্থনে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে কাদিরভ তার সেনাদের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে পাঠান।

সম্প্রতি এই নেতা চেচনিয়ার রাস্তায় ফিলিস্তিনের পক্ষে কোনো প্রতিবাদ হলে পুলিশকে গুলি করার অনুমতি দিয়েছেন।