আগামী ছয় মাস কবর দেয়া বন্ধ
মুক্তিযোদ্ধা-আধিবাসীদের কবরস্থান গুঁড়িয়ে দিচ্ছে রাজউক
- সময় ১২:২৭:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
- / 26
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচলের ২২ নম্বর সেক্টরে অধিগ্রহণকৃত ১৭টি মৌজায় বসবাস করা মুক্তিযোদ্ধা ও অধিবাসীদের জন্য নির্মাণ করা কালনী সামাজিক কবরস্থানটি রাতের আঁধারে বিনা নোটিশে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজউকের বিরুদ্ধে। বাধা দিয়েও হয়নি শেষ রক্ষা। এমনকি আগামী ৬ মাস এখানে কোনও কবর দিতে নিষেধ করেছে রাজউক কর্তৃপক্ষ।
অনেকে এসে স্বজনদের কবরের এমন অবস্থা দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তবে রাজউক বলছে, কবরস্থান সংস্কার করার জন্য এমনটা করা হয়েছে। কবরস্থান আরও বড় পরিসরে করা হবে। এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলছেন, বিষয়টি তদন্ত করে কীভাবে এর সমাধান করা যায় মন্ত্রণালয়ে এ ব্যাপারে কথা বলা হবে।
পূর্বাচলের গোবিন্দপুরে নিজ বাড়ি ছিল আব্দুল আজিজ মোল্লার। রাজউক কর্তৃক তার জমিজমা অধিগ্রহণের পর সেখান থেকে এসে বাড়ি করেন কালনী এলাকায়। কালনী সামাজিক কবরস্থান হওয়ার শুরু থেকে তিনি নিজে লোকজন নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন করার জন্য কবর খুঁড়ে আসছেন। হঠাৎ করে গত কয়েকদিন আগে রাজউক তার ঠিকাদার দিয়ে কবরস্থান গুঁড়িয়ে দেওয়ায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। কবরগুলোর দিকে চেয়ে ফেল ফেল কেঁদে ওঠেন আজিজ মোল্লা।
কবরস্থানে এসে কেউ স্ত্রীর, কেউ বাবার, কেউ ভাই, কেউবা আবার সন্তানের কবরের চিহ্ন ঠিক করতে দেখা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রাজউক কর্তৃক পূর্বাচল প্রকল্প তৈরি করার জন্য ১৯৯৫ সালে ১৭টি মৌজার জমি অধিগ্রহণ করে। ২০১২ সালের দিকে সেখানে বসবাসরত অধিবাসীদের মৃত্যুর পর কবর দেওয়ার জন্য পূর্বাচল ২২ নম্বর সেক্টর (কালনী) এলাকায় কবরস্থানের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় কালনী সামাজিক কবরস্থান। শুরু থেকে এ পর্যন্ত এ কবরস্থানে পূর্বাচলের ১৭ মৌজায় বসবাসরত প্রায় ৩০০ মৃত ব্যক্তির কবর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গত কয়েকদিন আগে কোনও প্রকার নোটিশ প্রদান না করে রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে কবরস্থান গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজউকের নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন। খবর পেয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা-কমান্ডারসহ সাধারণ লোকজন তাদের বাধা দিয়েও কোনও রেহাই মেলেনি। এমনকি আগামী ৬ মাস কোন মৃত ব্যক্তির কবর দেওয়া যাবে না বলেও নিষেধ করা হয়। বিনা নোটিশে কবরস্থান গুঁড়িয়ে দেওয়ায় অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের দাবি, কবরস্থান যেন এখানে থাকে। তবে কবরস্থান আরও বড় পরিসরে, সুন্দরভাবে করার জন্য সংস্কার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন রাজউকের নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কবরস্থান ভাঙচুরের বিষয়টি স্থানীয় লোকজন আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে কীভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে কথা বলবো।’
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্বাচল প্রকল্প বাস্তবায়ন) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কবরস্থানের কোনও কবর ওঠানো হয়নি। কবরস্থানে ঝোপ-জঙ্গল ছিল সেটা পরিষ্কার করা হয়েছে। কবরস্থান আরও সুন্দর করা হচ্ছে। বনানী কবরস্থানের মতো সুন্দর করে বাউন্ডারি দেয়াল করে দেওয়া হবে। ওয়াকওয়ে থাকবে যাতে করে চলাচল করা যায়। এ ছাড়া এখানে আরও বড় পরিসরে ১৬ একর জমিতে ১০ হাজার ৭৩৬টি কবর দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের ১৫টি কবর দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।’