মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কড়া প্রতিবাদ
- সময় ০৭:০৯:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 24
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু বীর প্রতীককে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দায়ীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আজ (২৩ ডিসেম্বর, সোমবার) এই দাবি জানানো হয়েছে।
লিখিত প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে যে, “কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্তৃক জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু বীর প্রতীককে প্রকাশ্য লাঞ্ছিত করে এলাকা থেকে জোরপূর্বক বের করা দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি হামলাকারী সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রদানের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। একাত্তরে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় মদদে পরিকল্পিত ভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর একের পর হামলা, হত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবে।
প্রতিবাদ লিপিতে আরো বলা হয়, পুরো ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি কর্তৃক শতশত বীর মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা ও নির্যাতন করা হচ্ছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ও বিচার করা হয়নি। অতীতের ঘটনাগুলোর বিচার হলে আজকে এধরণের ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা আমাদেরকে দেখতে হতো না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্রকে এসব হামলার দায় নিতে হবে। দেশে এখন আইনের শাসন ও মানবাধিকার বলতে কিছু নেই।
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবির প্রতিনিয়ত আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। লাখো শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা আবার খামচে ধরেছে একাত্তরের পরাজিত শকুনরা। রাজাকার শাবকদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও আস্ফালন কখনোই মেনে নিবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অবৈধ ও অসাংবিধানিক অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাসীদেরকে বিভিন্নভাবে দায়মুক্তি দিয়ে দেশকে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মদাতা বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অসম্মান ও লাঞ্ছিত করার মাধ্যমে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি রাজাকারের বংশধররা পরিকল্পিত ভাবে পরাজিত পাকিস্তানের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। যাঁদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র পেয়েছি আজ তাঁদের জীবন হুমকির মুখে।
সম্প্রতি জামাতের বি টিম এবি পার্টির নেতা আসাদুজ্জামান ফুয়াদ কর্তৃক ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে অস্বীকার এবং জামাত-শিবির কর্তৃক মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বারবার অবমাননা করার মাধ্যমে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির প্রকৃত চেহারা আবার জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে স্থানীয় জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্তৃক একজন বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে প্রকাশ্য ন্যাক্কারজনকভাবে লাঞ্ছিত করে গ্রাম থেকে বের করে দেয়ার পরেও এখনো পর্যন্ত কোন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়নি। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার সময় নেতৃত্ব দিয়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জামাত নেতা প্রবাসী আবুল হাশেম। তার সাথে ছিল শিবির কর্মী অহিদ, পলাশ, রাসেলসহ আরও দশ-বারজন। এই হামলার সুস্পষ্ট ভিডিও ফুটেজে প্রমাণ থাকার পরেও পুলিশ কোন মামলা গ্রহণ করেনি এবং আসামী ধরেনি। এদ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, রাষ্ট্রীয় মদদে পরিকল্পিত ভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এসব ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা ঘটানো হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি, অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু বীর প্রতীকের ওপর হামলাকারী প্রতিটি সন্ত্রাসীকে দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সারাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলাকারী সকল সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবাররা রাজপথে নেমে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়ার পাশাপাশি কঠোর কর্মসূচী পালন করতে বাধ্য হবে।