ঢাকা ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন ড. ইউনূস !

আকাশ ইসলাম
  • সময় ০৫:১৭:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • / 315

মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নানা পট পরিবর্তন ঘটলেও দেশটির রাজনীতি এখনো আবর্তিত হচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। ১৯৭১ সালে কার কী ভূমিকা ছিল, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি কারা এরকম ইস্যুতে প্রধান রাজনৈতিকদলগুলো এখনও পরস্পর বিতর্কে জড়াচ্ছে।

নতুন করে এই বিতর্কে পড়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যিনি গত ৮ আগষ্ট বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই দিন আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন ছাত্রদের কথিত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। যদিও দিন যতোই যাচ্ছে; ওই আন্দোলনের পেছনে বাংলাদেশের স্বাধীণতাযুদ্ধের বিরোধীতাকারি দল জামায়াতে ইসলামীর বড় ধরনের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ছাত্র-জনতার ওই আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে অর্থাৎ ৫ আগষ্ট বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাংচুর চালানো হয়। সেই আক্রমন থেকে রক্ষা পায়নি মুক্তযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত নানা স্মারকও। যদিও সেই আক্রমনকে মানুষের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ বলা হচ্ছে।

কিন্তু নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের চীরশক্র পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছে। জামায়াতের তৎপরতাও বেশ লক্ষ্যনীয়। মূলত এর পর থেকেই অন্তবর্তীকালিন সরকারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের ‘মুক্তিযুদ্ধে অবদান’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হওয়ার জন্য যে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছিলো; তখন মুহাম্মদ ইউনূসের বয়স ৩১ বছর। তিনি ১৯৪০ সালের ২৮ জুন বৃটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির চট্টগ্রামের হাটহাজারি এলাকার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয় ততদিনে তিনি স্নাতক শেষ করে কর্মজীবন শুরু করে। ১৯৬৫ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন।

বাংলাদেশে যুদ্ধকালিন সময়ে ১৯৭১ সালে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ইউনুস মার্ফ্রিসবোরোতে মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। অর্থাৎ যুদ্ধের পুরো সময়টাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন।

তবে বিভিন্ন নথি বিশ্লেষন করে জানা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশে জনমত গড়ে তোলা। তার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিলো গভীর সম্পর্ক। প্রবাসে থাকাকালিন তিনি একটি নাগরিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং অন্যান্য বাংলাদেশিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পরিচালনা করেন।

ওই সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিলের তার বাড়ি থেকে তার সম্পাদনায় ‘বাংলাদেশ নিউজলেটার’ প্রকাশ করতেন। যুদ্ধ শেষ হলে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে নিযুক্ত হন।

মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৭ সালে তিনি সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেয়া হয়।

মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন।

শেয়ার করুন

মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন ড. ইউনূস !

সময় ০৫:১৭:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নানা পট পরিবর্তন ঘটলেও দেশটির রাজনীতি এখনো আবর্তিত হচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। ১৯৭১ সালে কার কী ভূমিকা ছিল, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি কারা এরকম ইস্যুতে প্রধান রাজনৈতিকদলগুলো এখনও পরস্পর বিতর্কে জড়াচ্ছে।

নতুন করে এই বিতর্কে পড়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যিনি গত ৮ আগষ্ট বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই দিন আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন ছাত্রদের কথিত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। যদিও দিন যতোই যাচ্ছে; ওই আন্দোলনের পেছনে বাংলাদেশের স্বাধীণতাযুদ্ধের বিরোধীতাকারি দল জামায়াতে ইসলামীর বড় ধরনের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ছাত্র-জনতার ওই আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে অর্থাৎ ৫ আগষ্ট বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাংচুর চালানো হয়। সেই আক্রমন থেকে রক্ষা পায়নি মুক্তযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত নানা স্মারকও। যদিও সেই আক্রমনকে মানুষের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ বলা হচ্ছে।

কিন্তু নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের চীরশক্র পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছে। জামায়াতের তৎপরতাও বেশ লক্ষ্যনীয়। মূলত এর পর থেকেই অন্তবর্তীকালিন সরকারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের ‘মুক্তিযুদ্ধে অবদান’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হওয়ার জন্য যে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছিলো; তখন মুহাম্মদ ইউনূসের বয়স ৩১ বছর। তিনি ১৯৪০ সালের ২৮ জুন বৃটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির চট্টগ্রামের হাটহাজারি এলাকার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয় ততদিনে তিনি স্নাতক শেষ করে কর্মজীবন শুরু করে। ১৯৬৫ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন।

বাংলাদেশে যুদ্ধকালিন সময়ে ১৯৭১ সালে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ইউনুস মার্ফ্রিসবোরোতে মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। অর্থাৎ যুদ্ধের পুরো সময়টাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন।

তবে বিভিন্ন নথি বিশ্লেষন করে জানা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশে জনমত গড়ে তোলা। তার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিলো গভীর সম্পর্ক। প্রবাসে থাকাকালিন তিনি একটি নাগরিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং অন্যান্য বাংলাদেশিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পরিচালনা করেন।

ওই সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিলের তার বাড়ি থেকে তার সম্পাদনায় ‘বাংলাদেশ নিউজলেটার’ প্রকাশ করতেন। যুদ্ধ শেষ হলে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে নিযুক্ত হন।

মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৭ সালে তিনি সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেয়া হয়।

মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন।