ঢাকা ০৯:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতি

মিরপুরে সমবায়ীদের টাকা লুটে কোটিপতি নেতারা

এস এম আর শহিদ
  • সময় ১১:৪৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 1038

আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড

ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ঢুবতে বসেছে রাজধানীর মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। গ্রাহকদের জামানত আত্মসাৎ করে নিজেদের নামে জমি ক্রয়, সরকারি খাস জমি দখল, সমিতির জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করেন চত্রুটি।

এসব অভিযোগ সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, জাতীয় পার্টির (রওশন) প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পাঠান ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক, মিরপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা রেজাউল করিম রেজা। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা চলমান আছে।

সমিতিটি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের আবাসন পরিকল্পনার আওতায় ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন ধাপে সদস্যদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।

সাভারের হেমায়েতপুরের পাশে ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম তীরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার ধল্লা মৌজায় চার একরের বেশি জমি কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হয়। তিন কাঠার প্লট রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা থাকলেও ১৭ বছর পার হয়ে গেলেও সদস্যরা জমি বুঝে পাননি।

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সমিতির নেতারা কম দামের জমি বেশি দামে কেনার হিসাব দেখিয়ে দুর্নীতি করেছেন। সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখলের পাশাপাশি সমিতির নামে জমি ক্রয় না করে ব্যক্তিগত নামে ক্রয় করে তা বিক্রির মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

২০২১ সালের ১৮ জুলাই, কিং বিডি নামের একটি কথিত ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানির মালিক আব্দুর রাজ্জাক খানের কাছে সমিতির ৬৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে এসব টাকা আত্মসাৎ করেন অভিযুক্তরা। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, সমিতির অবশিষ্ট জমির দখলও রাজ্জাক খানের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে ইসলামী ব্যাংক রাজবাড়ী শাখা থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এক মিরপুরে রয়েছে শতাধিক সমবায় সমিতি
এক মিরপুরে রয়েছে শতাধিক সমবায় সমিতি

সমবায় অধিদপ্তরের একটি দীর্ঘ তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জাকারিয়ার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা পরস্পর যোগসাজশে ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ এবং নামে-বেনামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

তবে এখনও থেমে নেই চক্রটি। প্রশাসনের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ফের অবশিষ্ট্য জমি বিক্রির পায়তারা করছেন তারা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম পাঠান জমি বিক্রির কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, জমি-জায়গার কিছু সমস্যা রয়েছে। কিছু খাস খতিয়ানও রয়েছে। লোভের কারণে আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা জমি বিক্রি করার চেষ্টা করছি এবং বিক্রি করতে পারলে সদস্যদের টাকা ফেরত দেবো।

এদিকে সমবায় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে সমিতির কোনো অডিট হয়নি। ২০২৩ সালের ২৫ জুন অডিটের জন্য চিঠি দেওয়া হলেও বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া দেয়নি।

কিন্তু সমিতির নেতারা বলছে, স্থানীয় সমবায় কর্মকর্তার সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই তারা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এজন্য তাদের প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা গুণতে হয় বলেও জানান সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর পাঠান।

অভিযোগের বিষয়ে মেট্রোপলিটন থানা সমবায় অফিসার (শাহআলী) মুহাম্মাদ আমানুর ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দ্বিতীয় পর্ব চোখ রাখুন: সমবায় কর্মকর্তার উদাসীনতায় ঝুঁকিতে আল ফাতিহার কয়েক কোটি টাকার সঞ্চয়।

শেয়ার করুন

আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতি

মিরপুরে সমবায়ীদের টাকা লুটে কোটিপতি নেতারা

সময় ১১:৪৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ঢুবতে বসেছে রাজধানীর মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। গ্রাহকদের জামানত আত্মসাৎ করে নিজেদের নামে জমি ক্রয়, সরকারি খাস জমি দখল, সমিতির জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করেন চত্রুটি।

এসব অভিযোগ সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, জাতীয় পার্টির (রওশন) প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পাঠান ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক, মিরপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা রেজাউল করিম রেজা। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা চলমান আছে।

সমিতিটি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের আবাসন পরিকল্পনার আওতায় ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন ধাপে সদস্যদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।

সাভারের হেমায়েতপুরের পাশে ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম তীরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার ধল্লা মৌজায় চার একরের বেশি জমি কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হয়। তিন কাঠার প্লট রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা থাকলেও ১৭ বছর পার হয়ে গেলেও সদস্যরা জমি বুঝে পাননি।

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সমিতির নেতারা কম দামের জমি বেশি দামে কেনার হিসাব দেখিয়ে দুর্নীতি করেছেন। সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখলের পাশাপাশি সমিতির নামে জমি ক্রয় না করে ব্যক্তিগত নামে ক্রয় করে তা বিক্রির মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

২০২১ সালের ১৮ জুলাই, কিং বিডি নামের একটি কথিত ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানির মালিক আব্দুর রাজ্জাক খানের কাছে সমিতির ৬৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে এসব টাকা আত্মসাৎ করেন অভিযুক্তরা। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, সমিতির অবশিষ্ট জমির দখলও রাজ্জাক খানের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে ইসলামী ব্যাংক রাজবাড়ী শাখা থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এক মিরপুরে রয়েছে শতাধিক সমবায় সমিতি
এক মিরপুরে রয়েছে শতাধিক সমবায় সমিতি

সমবায় অধিদপ্তরের একটি দীর্ঘ তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জাকারিয়ার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা পরস্পর যোগসাজশে ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ এবং নামে-বেনামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

তবে এখনও থেমে নেই চক্রটি। প্রশাসনের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ফের অবশিষ্ট্য জমি বিক্রির পায়তারা করছেন তারা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম পাঠান জমি বিক্রির কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, জমি-জায়গার কিছু সমস্যা রয়েছে। কিছু খাস খতিয়ানও রয়েছে। লোভের কারণে আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা জমি বিক্রি করার চেষ্টা করছি এবং বিক্রি করতে পারলে সদস্যদের টাকা ফেরত দেবো।

এদিকে সমবায় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে সমিতির কোনো অডিট হয়নি। ২০২৩ সালের ২৫ জুন অডিটের জন্য চিঠি দেওয়া হলেও বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া দেয়নি।

কিন্তু সমিতির নেতারা বলছে, স্থানীয় সমবায় কর্মকর্তার সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই তারা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এজন্য তাদের প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা গুণতে হয় বলেও জানান সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর পাঠান।

অভিযোগের বিষয়ে মেট্রোপলিটন থানা সমবায় অফিসার (শাহআলী) মুহাম্মাদ আমানুর ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দ্বিতীয় পর্ব চোখ রাখুন: সমবায় কর্মকর্তার উদাসীনতায় ঝুঁকিতে আল ফাতিহার কয়েক কোটি টাকার সঞ্চয়।