মরেও শান্তি নেই বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে!
- সময় ০৪:২৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
- / 333
বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের প্রতীক মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী করবস্থান। এটি শুধু কবরস্থান নয়, এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ। আবেগের স্থান। কিন্তু এই করবস্থান ঘিরেই গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। করস্থানটির পদে পদে এখন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ঘেরা।
কবরস্থানটিতে তিন শ্রেনীর কবর রয়েছে। যার একটি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি দুটি শ্রেনী স্থানীয়দের। সেটিও আবার দুই শ্রেনীতে বিভক্ত; একটি পাঁকা কবর; অন্যটি কাঁচা কবর বা অস্থায়ী কবর। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এ প্রতিষ্ঠানে যখন যে পেরেছে – সেই ভাগ বসিয়েছে কবরের টাকায়। রীতিমতো হরিলুট ও মাসিক চাঁদায় অসহায় প্রিয়জন হারানো স্বজনরা।
কবরস্থানটিতে প্রায় ১০ হাজার কবরের বিপরীতে গোর খোদক রয়েছে মাত্র শতাধিক। তাদের নির্দিষ্ট কোন বেতন নেই। প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে; সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির লক্ষ্যেই তারা কাজটি করে যাচ্ছেন। কিন্তু না। এর পেছনেও রয়েছে কোটি টাকার বানিজ্য।
সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম অনুযায়ি, আগে কবর পাঁকা করে সংরক্ষনে লাগতো ১১ লাখ টাকা। কিন্তু প্রতিনিয়ত কবরের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ায়; ২০১৮ সালে খরচ তিনগুণ বাড়িয়ে ৩৩ লাখ টাকা করা হয়। মূলত এর পর থেকেই জোরেসোরে শুরু হয় কবর বাণিজ্য। কয়েকটি ধাপে এই বাণিজ্য হয়ে থাকে। যার শুরু গোর খোদক সিরিয়ালের মাধ্যমে অর্থাৎ কে কবর খোরাড় দায়িত্ব পাবেন, সেই সিরিয়াল দেয়া হয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে।
কবর খোঁড়ার সিরিয়াল সেখানে মূল্যবান টিকেট। যার আয়ত্ত্বে যত কবর, তার আয় তত বেশি। গোরখোদকদের মধ্যে কারো রয়েছে বাড়ি, কারো ফ্ল্যাট, কারোবা জমি। কবরের টাকায় অনেকেই আজ কোটিপতি।
বাণিজ্যের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে কবর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিস্কার পরিচ্ছনতা কার্যক্রম। যার রাজনৈতিক ও অর্থের জোর বেশি সেই পান বেশি সংখ্যক কবর সংরক্ষণের দায়িত্ব। বিনিময়ে কবর প্রতি মাসিক দুই থেকে তিন হাজার করে টাকা নেন একেকজন গোর খোদক। যা দিয়ে অনেকেই এখন অঢেল সম্পদের মালিক।
গোর খোদক থেকে এই টাকার ভাগ চলে যায় সরাসরি কর্তা বাবুদের দরজায়। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবু তাহের হরেক রকম উপলক্ষ সাজিয়ে দানবক্স ও উন্নয়নের টাকা সরিয়েছেন কবর থেকে। এমন অভিযোগে ফুঁসে উঠেছে এলাকার ধর্মপ্রাণ বাসিন্দারা।
নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়াল ভেঙেছে প্রায় দশ জায়গায়। বিপুল খরচ করে লাগানো সোলার বাতিগুলোও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অন্ধকার কবরস্থান ঘিরে মাদকসেবী ও জুয়ার আসর বসে নিয়মিত। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও স্বজনরা।
এতো গেলো কবর বাণিজ্যের কথা। এবার আসি অব্যবস্থাপণা নিয়ে। এই কবরস্থানের ভেতরেই মৃত মানুষের পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক কলোনী। যা সিটি কলোনী নামে পরিচিত।
সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার আমলে এই আবাসিক কলোনী তৈরি করা হয়। জীবিত ও মৃত মানুষের এমন সহবস্থানের দৃশ্য পৃথিবীতে বিরল। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ওই সব কর্মচারীরা।
জানা যায়, এসব কর্মচারীদের আবাসনের জন্য জন্য গাবতলীতে বহুতল ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর না হওয়ায় এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
এসব বিষয় নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হনননি।
কথা বলতে রাজি হনননি কবরস্থানের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেনও।