ঢাকা ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জন্ম পাকিস্তানে

মনমোহন সিং স্মরণে সাত দিনের জাতীয় শোক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • সময় ১০:৫৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 29

ড. মনমোহন সিং

ভারতে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের একমাত্র অহিন্দু সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে এ শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জি পার্থসারথি এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে বুধবার (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত দেশে ‘জাতীয় শোক’ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ে দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সরকারি স্তরে কোনো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হবে না।

এদিকে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্যের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তার দল কংগ্রেস জানিয়েছে, আগামী শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল জানান, শনিবার নয়াদিল্লিতে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা। সাধারণ মানুষও তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন মনমোহন সিং। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে রাত ৮টার দিকে তাকে এআইআইএমএসের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। গুরুতর শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাকে তৎক্ষণাৎ আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তবে চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও তার জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। রাত ৯টা ৫১ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জনসভায় বক্তব্য রাখছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং
জনসভায় বক্তব্য রাখছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং

হাসপাতালের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মনমোহন সিং বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এর আগে, তিনি বেশ কয়েকটি গুরুতর শারীরিক সমস্যা মোকাবিলা করেছিলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ড. মনমোহন সিং পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া এবং ভারতের প্রথম অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

মনমোহন সিং ভারতীয় অর্থনীতির এক আলোচিত নাম। তার হাত ধরে বহু বিতর্কিত মহাসন্ধিক্ষণের জন্ম হয়েছিল। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যেই উদার অর্থনীতির জনক হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছিলেন তিনি। এ সময়ে তিনি নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ভারতের প্রথম ও একমাত্র অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে চকওয়াল জেলার একটি গ্রামে ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর দেশভাগের সময় বাবা গুরমুখ সিংহ এবং মা অমৃত কৌরের হাত ধরে অমৃতসরে চলে আসেন তিনি।

মনমোহন ১৯৫২ সালে চণ্ডীগড়ের পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৮৫৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। কথিত আছে যে, ছাত্রজীবনে কোনোদিন দ্বিতীয়স্থান অর্জন করেননি তিনি। এরপর তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। ১৯৫৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজ থেকে ডি’ফিল ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

ছাত্রজীবন শেষে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সরকারের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখায় কাজ করেন তিনি। এরপর ১৯৬৯ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হন। ১৯৭৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসচিব হন তিনি। ১৯৮২ সালে তাকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর করা হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এ পদে বগাল ছিলেন মনমোহন। ১৯৮৫-৮৭ পর্যন্ত তিনি যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৭ সালে অর্থনীতি বিষয়ক স্বাধীন সংস্থা সাউথ কমিশনের মহাসচিব হন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯০ পর্যন্ত জেনেভায় সংস্থাটির সদর দপ্তরে এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর দেশে ফিরে তত্‌কালীন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা হন। ১৯৯১ সালে ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান হন মনমোহন সিং।

১৯৯১ সালের জুন মাসে নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হন। একই বছরে প্রথমবারের মতো রাজ্যসভা সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০০৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তবে সোনিয়া গান্ধী বিদেশিনী’ বিতর্কের কারণে প্রধানমন্ত্রী হতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে নির্বাচন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পুরো সময় ভারতীয় অর্থনীতির পরিবর্তনে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

শেয়ার করুন

জন্ম পাকিস্তানে

মনমোহন সিং স্মরণে সাত দিনের জাতীয় শোক

সময় ১০:৫৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের একমাত্র অহিন্দু সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে এ শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জি পার্থসারথি এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে বুধবার (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত দেশে ‘জাতীয় শোক’ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ে দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং সরকারি স্তরে কোনো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হবে না।

এদিকে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্যের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তার দল কংগ্রেস জানিয়েছে, আগামী শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল জানান, শনিবার নয়াদিল্লিতে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা। সাধারণ মানুষও তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন মনমোহন সিং। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে রাত ৮টার দিকে তাকে এআইআইএমএসের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। গুরুতর শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাকে তৎক্ষণাৎ আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তবে চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও তার জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। রাত ৯টা ৫১ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জনসভায় বক্তব্য রাখছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং
জনসভায় বক্তব্য রাখছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং

হাসপাতালের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মনমোহন সিং বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এর আগে, তিনি বেশ কয়েকটি গুরুতর শারীরিক সমস্যা মোকাবিলা করেছিলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ড. মনমোহন সিং পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া এবং ভারতের প্রথম অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

মনমোহন সিং ভারতীয় অর্থনীতির এক আলোচিত নাম। তার হাত ধরে বহু বিতর্কিত মহাসন্ধিক্ষণের জন্ম হয়েছিল। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যেই উদার অর্থনীতির জনক হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছিলেন তিনি। এ সময়ে তিনি নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ভারতের প্রথম ও একমাত্র অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে চকওয়াল জেলার একটি গ্রামে ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর দেশভাগের সময় বাবা গুরমুখ সিংহ এবং মা অমৃত কৌরের হাত ধরে অমৃতসরে চলে আসেন তিনি।

মনমোহন ১৯৫২ সালে চণ্ডীগড়ের পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৮৫৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। কথিত আছে যে, ছাত্রজীবনে কোনোদিন দ্বিতীয়স্থান অর্জন করেননি তিনি। এরপর তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। ১৯৫৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজ থেকে ডি’ফিল ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

ছাত্রজীবন শেষে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সরকারের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখায় কাজ করেন তিনি। এরপর ১৯৬৯ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হন। ১৯৭৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসচিব হন তিনি। ১৯৮২ সালে তাকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর করা হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এ পদে বগাল ছিলেন মনমোহন। ১৯৮৫-৮৭ পর্যন্ত তিনি যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৭ সালে অর্থনীতি বিষয়ক স্বাধীন সংস্থা সাউথ কমিশনের মহাসচিব হন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯০ পর্যন্ত জেনেভায় সংস্থাটির সদর দপ্তরে এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর দেশে ফিরে তত্‌কালীন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা হন। ১৯৯১ সালে ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান হন মনমোহন সিং।

১৯৯১ সালের জুন মাসে নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হন। একই বছরে প্রথমবারের মতো রাজ্যসভা সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০০৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তবে সোনিয়া গান্ধী বিদেশিনী’ বিতর্কের কারণে প্রধানমন্ত্রী হতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে নির্বাচন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পুরো সময় ভারতীয় অর্থনীতির পরিবর্তনে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।