‘ভ্যান্ডালিস্ট’ কারা, ভ্যান্ডালিজম কি!

- সময় ০৩:৪৩:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 80
শেষ সপ্তাহে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, অফিসে ভাংচুর করছে একদল বিপ্লবী। তাদের এই হামলায় আক্রান্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাদুঘর (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর), বিভন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হল, হাসপাতালসহ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা।
৪৫৫ খৃস্টাব্দে রোম শহর এমনই একদল বিপ্লবীর আক্রমণের শিকার হয়েছিল। তারা শহরের বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা, শিল্পকর্ম ও ভবন ধ্বংস করেছিল। তখন তাদের নাম দেয়া হয়েছিল ‘ভ্যান্ডালিস্ট’ এবং তাদের কর্মকান্ডকে বলা হতো ‘ভ্যান্ডালিজম’।
‘ভ্যান্ডালিস্ট’ সেই ব্যক্তিদের বলা হয়, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পত্তি নষ্ট করে বা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এটি হতে পারে ব্যক্তিগত, সরকারি বা পাবলিক সম্পত্তির ওপর, যেমন ভবন, গাড়ি, মূর্তি, রাস্তার দেয়াল ইত্যাদিতে ভাঙচুর, আঁকা-লেখা বা অন্যান্য ক্ষতি করা। অনেক দেশে এই কাজকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর জন্য শাস্তি বা জরিমানা হতে পারে।
১৮শ শতাব্দীতে ফরাসি বিপ্লবের সময় ‘হেনরি গ্রেগোয়ার’ নামক এক বিশপ প্রথম ‘ভ্যান্ডালিজম’ শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি বিপ্লবের সময় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও শিল্পকর্মের ধ্বংসের নিন্দা জানাতে এটি প্রয়োগ করেন। এরপর থেকে “ভ্যান্ডালিজম” শব্দটি ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পত্তি নষ্ট করার অর্থে প্রচলিত হয়।
ভ্যান্ডাল জাতির শেষ পরিণতি বেশ নাটকীয় এবং ধ্বংসাত্মক ছিল। রোম দখলের পর, ভ্যান্ডালরা উত্তর আফ্রিকায় বর্তমান তিউনিসিয়া, আলজেরিয়ায় একটি শক্তিশালী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা কার্থেজকে তাদের রাজধানী বানায় এবং ভূমধ্যসাগরে নৌবাহিনী গড়ে তোলে।
.
৫৩৩ খৃস্টাব্দে বাইজেন্টাইন সম্রাট ‘জাস্টিনিয়ান প্রথম’ ভ্যান্ডালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। তাঁর সেনাপতি ‘বেলিসারিয়াস’ মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ভ্যান্ডাল সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেন। ভ্যান্ডালদের শেষ রাজা ‘গেলিমের’ ৫৩৪ খৃস্টাব্দে আত্মসমর্পণ করেন এবং তাকে বন্দি করে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাইজেন্টাইনরা তাদের সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করলে ভ্যান্ডালরা ধীরে ধীরে তাদের জাতিগত স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে। অনেককে ক্রীতদাস বানানো হয়, আর বাকিরা স্থানীয় জনগণের মধ্যে মিশে যায়। ফলে একসময়ের শক্তিশালী ভ্যান্ডাল জাতির অস্তিত্ব একসময় পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়।
গত ৫ আগস্টের পরে ও আগে বাংলাদেশে ‘ফ্যাসিস্ট’ ‘ফ্যাসিজম’, স্বৈরাচার শব্দগুলো বেশ উচ্চারিত হয়েছে। মূলত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারকে বুঝাতে এই শব্দগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।
নতুন করে গত কয়েকদিন ধরে ‘ভ্যান্ডালিস্ট’, ‘ভ্যান্ডালিজম‘ শব্দগুলোর ব্যবহার শুরু হয়েছে। আর এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন স্থাপনায় যারা হামলা ও ভাংচুর চালাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে গত এক কয়েকদিন ধরে যে ‘বুলডোজার’ কর্মসূচী চলছে তার দায় নিচ্ছে না কেউ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ইতোমধ্যে এই ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও সেই আহ্বানের পরও বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাংচুর অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলও এসব কার্যক্রমের বিরোধীতা করেছে। তবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের এসব ঘটনায় জড়িতদের সমর্থন জানিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় নানা ধরনের বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।