ঢাকা ১০:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত নির্ভরতা কমাচ্ছে নেপাল!

আল আসকারী
  • সময় ০৬:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 29

নেপালের ভারত নির্ভরশীলতা

নেপাল, হিমালয়ের কোলে এক শান্তিপূর্ণ দেশ। কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ দেশটি যুগ যুগ ধরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিল প্রতিবেশী ভারতের ওপর। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপাল চেষ্টা করছে এই নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার। কিন্তু কিভাবে এবং কেন?

নেপালের ভৌগোলিক অবস্থানই তাকে ভারত ও চীনের মাঝে একটি কৌশলগত স্থানে নিয়ে এসেছে। দুই বৃহৎ দেশের মাঝখানে থাকা নেপাল ঐতিহাসিকভাবেই ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে, নেপাল তাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। এই পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি হলো তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইচ্ছা এবং ভারতের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

ভারতের পরিবর্তে নেপাল তাদের আরেক প্রতিবেশী চীনের সাথে সম্পর্ক গভীর করছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এ যোগ দেওয়া নেপালের এই পরিবর্তনের একটি বড় উদাহরণ।

চীন নেপালের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় আকারে বিনিয়োগ করছে। রাস্তা, সেতু, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প—সব ক্ষেত্রেই চীনের উপস্থিতি দৃশ্যমান।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ

ভারতের ওপর নেপালের নির্ভরতার একটি বড় উদাহরণ হলো জ্বালানি। ২০১৫ সালের ভারত-নেপাল সীমান্ত অবরোধ নেপালকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এই অবরোধের ফলে নেপাল দেখতে পেয়েছে, ভারতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তাদের অর্থনীতি এবং জনজীবনকে কতটা বিপর্যস্ত করতে পারে। তখন থেকেই নেপাল বিকল্প খুঁজতে শুরু করে।

ভারতের ওপর নির্ভরতা কমাতে নেপাল তাদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারে মনোযোগ দিচ্ছে। হিমালয়ের বরফগলা নদীগুলো নেপালের জন্য একটি বড় সম্পদ।

হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্টগুলোর মাধ্যমে নেপাল নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং বহুমুখী কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করার প্রয়াস চালাচ্ছে।

তবে এই পরিবর্তনের পথে নেপালকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অনেক গভীর।

দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ভারতের প্রভাব রয়েছে। ফলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং নতুন দিকনির্দেশনা নির্ধারণের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখা নেপালের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

নেপালের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং, তারা চায় সমান অধিকারের ভিত্তিতে সম্পর্ক বজায় রাখতে। নেপালের জনগণও বিশ্বাস করে, দুদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ থাকলে উভয় দেশের জন্যই মূল্যবান হবে।

শেয়ার করুন

ভারত নির্ভরতা কমাচ্ছে নেপাল!

সময় ০৬:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

নেপাল, হিমালয়ের কোলে এক শান্তিপূর্ণ দেশ। কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ দেশটি যুগ যুগ ধরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিল প্রতিবেশী ভারতের ওপর। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপাল চেষ্টা করছে এই নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার। কিন্তু কিভাবে এবং কেন?

নেপালের ভৌগোলিক অবস্থানই তাকে ভারত ও চীনের মাঝে একটি কৌশলগত স্থানে নিয়ে এসেছে। দুই বৃহৎ দেশের মাঝখানে থাকা নেপাল ঐতিহাসিকভাবেই ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে, নেপাল তাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। এই পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি হলো তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইচ্ছা এবং ভারতের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

ভারতের পরিবর্তে নেপাল তাদের আরেক প্রতিবেশী চীনের সাথে সম্পর্ক গভীর করছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এ যোগ দেওয়া নেপালের এই পরিবর্তনের একটি বড় উদাহরণ।

চীন নেপালের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় আকারে বিনিয়োগ করছে। রাস্তা, সেতু, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প—সব ক্ষেত্রেই চীনের উপস্থিতি দৃশ্যমান।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ

ভারতের ওপর নেপালের নির্ভরতার একটি বড় উদাহরণ হলো জ্বালানি। ২০১৫ সালের ভারত-নেপাল সীমান্ত অবরোধ নেপালকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এই অবরোধের ফলে নেপাল দেখতে পেয়েছে, ভারতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তাদের অর্থনীতি এবং জনজীবনকে কতটা বিপর্যস্ত করতে পারে। তখন থেকেই নেপাল বিকল্প খুঁজতে শুরু করে।

ভারতের ওপর নির্ভরতা কমাতে নেপাল তাদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারে মনোযোগ দিচ্ছে। হিমালয়ের বরফগলা নদীগুলো নেপালের জন্য একটি বড় সম্পদ।

হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্টগুলোর মাধ্যমে নেপাল নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং বহুমুখী কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করার প্রয়াস চালাচ্ছে।

তবে এই পরিবর্তনের পথে নেপালকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অনেক গভীর।

দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ভারতের প্রভাব রয়েছে। ফলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং নতুন দিকনির্দেশনা নির্ধারণের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখা নেপালের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

নেপালের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং, তারা চায় সমান অধিকারের ভিত্তিতে সম্পর্ক বজায় রাখতে। নেপালের জনগণও বিশ্বাস করে, দুদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ থাকলে উভয় দেশের জন্যই মূল্যবান হবে।