ঢাকা ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের চোখে চোখ রেখেই কথা বলবো ‘আমি’

উৎপল দাস
  • সময় ০২:১৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 4

চোখে চোখ রেখে কথা বলা

চব্বিশের পাঁচই আগস্ট! প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে নানামূখী সম্পর্কের বাতাবরণ দেখেছে বিশ্ব। এরমধ্যে তলব, পত্র চালাচালি থেকে শুরু করে যুদ্ধাবস্থার হুমকি। অবশেষে সুর নরম হয়েছে দিল্লীর। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যমুনায় বরফ গলেনি পুরোপুরি, কবীর সুমনের কবিতায় কাঁপেনি বুক। পতাকায় ছিল বেদনাহত হৃদয়ের মহাকাব্য। তবে সুর নরম হয়েছে রণধীরের। বলেছেন, শ্রদ্ধাশীল সম্পর্ক চায় সাউথ ব্লক।

যাই সেই কথা; দিল্লীর চোখে চোখ রেখে কথা বলার সময়ও চলে এসেছে। কথা বলবোই ‘আমি’।  ভাষার মাসে দিল্লীতে আয়োজেনের জন্য প্রস্তুত … ‘আমার’ সীমান্ত বাহিনীর প্রধান বলেছেন, আলোচনা হবে সম-মর্যাদার। আমি কেন ভারতের চোখে চোখ রাখার সাহস দেখাচ্ছি? কারণ আমি আমৃত্যু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ২৫ চরণের ১০ চরণ শুনেই সুপ্রভাত শুরু করি। কেননা আমার আরেক নাম প্রভাত কুমার দাস।

সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদান স্বীকারপূর্বক আজকের রজনী ত্রিপহরে লিখতে ইচ্ছে করছে। কেননা আমি প্রতিক্ষণই অনুভব করি কাজী দাদাকে। কিন্তু আমার চূড়ান্ত আক্ষেপ রয়েছে তাঁকে নিয়ে। দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুল ফাগুনের মওসুমে দোল লাগে, বসন্ত আসে। অ-তুন ঐ বিষ মাখা মুখ দেখেও আক্ষেপ মিটেনি। প্রিয় শুচির কণ্ঠে এ কি অসীম পিয়াসা হৃদয়াকাশে দোলা দিচ্ছে।

তার মানে আমি এখনো বেসুরো হইনি। কারণ, বেসুরো লোক আমার চোক্ষের বিষ! যাক সেই কথা, তোমারে যে চাহিয়াছে ; ভুলে একদিন। সেই জানে তোমারে ভোলা কী কঠিন! তোমারও স্মৃতি তার, মরণের সাথী হায়, মিটেনা প্রেমেরও পিয়াসা।

সত্যি বলিছি, ভারত দেখার পিয়াসা মিটে না আমার। ভারত না গিয়েও আমি চূড়ান্তভাবেই অনুভব করি ভগৎ সিংকে। খুব মিস করি নেতাজিকে, নিদারুণ আক্ষেপ নিয়ে কষ্ট পাই পাপ্পুকে দেখে। আনন্দ পাই এই ভেবে ‘পি কে’ এর রাজনৈতিক ময়দানে খানিক ধাক্কা আর মিশ্রিত টানাটানি। সত্যি বলছি, গণতন্ত্র এবং দেশপ্রেম শিখতে চাইলে ভারতকে দেখুন। কারণ তারা আগে ভারতীয়, তারপর কেউ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, শিখ, জৈন, আদিবাসী, ধর্মহীনসহ সব ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও ইহুদিদের নিয়ে আমার ভয়ংকর চুলকানি আছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিসহ হাজারো উপাধি বাদ দিলাম, বাবার মুখে শোনা শেখ সাহেব অথবা খোকা, বাইগার নদীর মোহনায় মিশে থাকা দুর্বাঘাসের ফুলে প্রস্ফুটিত আমার আত্ম পরিচয়ের সর্বোচ্চ স্মারক শেখ লুৎফুর রহমান ও সায়রা খাতুনের যুগলবন্দির ভ্রুণ শেখ মুজিবুর রহমান।

এবার আসি শেখের বেটিদের কথায়; একবার ভাবুন তো, আপনার পরিবারের ১৭ সদস্যসহ মোট ২৬ জন মানুষকে এক রাতে হত্যা করা হলো। আপনার মস্তিষ্ক কতটা কাজ করবে? এ প্রশ্নের উত্তর আমার দেয়ার প্রয়োজন নেই। আপনারা নিজেদের জায়গা থেকে ভাবুন এবং ‘চব্বিশের পাঁচই আগস্ট’ আপনার মা-বোন-প্রেমিকা, স্ত্রীসহ নারীর শতরূপের একটির অর্ন্তবাস হাতে কেউ উল্লাস করছেন! আপনার কেমন লাগবে? আর প্রশ্ন করার দরকার নাই।

পাঠকের বিরক্তির কারণ হতে চাই না। যেহেতু একটা প্রজন্মকে হিমু অথবা মিসির আলী ধ্বংস করে নিজে ঠিকই সেন্টমার্টিনের সমুদ্র বিলাসে মগ্ন আছেন। বাদ দিন। এই দুইটা লাইন-ই যথেষ্ট আমার কাছে তাকে ‘পরম শ্রদ্ধা জানাতে।

তাঁর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ আমাকে যেমন মোহিত করে ঠিক তেমনি প্রথম প্রকাশিত সাড়ে তিন টাকার ৭০ পৃষ্ঠার নন্দিত নরকে আমাকে সত্যিই নরকের পরিতৃপ্তি দেয়। কিন্তু সমুদ্র বিলাস এখানো বাণিজ্যিকভাবে খুলে না দেয়ার বেদনা তো রয়েই গেছে। এত ভয় কিসের; আমাদের মিসির আলী বা হিমুর সন্তান বা স্ত্রীদের। আমি জানি না, তবে জানতে চাই। জানার অধিকারবোধ থেকেই বলছি, তারা মিলতে পারছেনা কিনা? আমি মনেপ্রাণে চাই গাজীপুরে পল্লীকে ভুলে তারা সবাই যেন জোছনা রাতে সমুদ্র বিলাসে যান। এই দাবির মাধ্যমে আমি বলতে চাই; সুমহান মুক্তিযুদ্ধের কারণে নন্দিত নরকের প্রকশনা যেভাবে বন্ধ ছিল; ঠিক সেভাবেই আবার ফিরে আসুক নজরুলের শাওনও রাতে যদি, আমার ভাঙা সমুদ্র বিলাসে।

আর হাহাকারের কথা বলতে চাই না, ভারতে যাবো আমি এই ভাষার মাসে। বাংলাদেশি হিন্দু হিসাবে যেতে চাই। না গেলেও কোনো সমস্যা নাই। আমি তো আমার নরসিংদীর রায়পুরার রাধানগরকে-ই চিনতে পারি নাই। যেখানে আমার মা বিমলা রানী দাসকে দাহ করা হবে। ঠিক বসতভিটার সামনেই বিরচাতে মা নিজেই দেখিয়ে দিয়েছেন, আমাকে এখানে পুড়াবি তুই। তোর ভাই মুখাঙ্গী করে ঠিক বাঁশ ঝাড়ের পিছনে বসে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ট্যাঙ্ক রাখা হয়েছিল যেখানে, সেই গর্তের সামনে বসে কেঁদে কেঁদে পূর্ণ করার চেষ্টা চালাবে। আর তুই, উৎপল কুমার দাস; পুড়ানোর সময় শুধু জয় বাংলা স্লোগান দিবি জোরে জোর, সঙ্গে রীতি অনুযায়ী, হর হর মহাদেব বলেও চিল্লাবি। যেন তোর মায়ের আত্নাকে মহাদেব গ্রহণ করে। আর সেদিনই শেষ পান করিস, করতে করতে মরে গেলেও গিলিস। কারণ শিব পূজার চরক গাছ, অগ্নিবান পাড়ি দিয়ে শ্মশানে তো আমার সামনেই মহাদেবের প্রসাদ গিলেছিলি।

সত্যি বলছি, বিমলা ; আমি জানতাম না, আমি জানতাম না, না…। পবিত্র ভোরে যখন আমার জন্ম হয়েছিল বাবার ডায়েরীতে লেখা আছে। ঠিক সেই সময়ের আশেপাশেই হয়তো মহাদেব ছিলেন ওই নদীর পাড়ের শশ্মানে ; তাই হয়তো মায়ের কথায় প্রসাদ গিলেছিলাম। থাক সেসব কথা। জীবনের ৪০ বসন্ত পার করতে চাই রে মা, আমার মা। তোর সাথে আমার এরপর দেখা হবেই। কারণ আমার সৃষ্টিকর্তা, তোর ভগবান তো এতটা নিষ্ঠুত হতে পারেন না।

এটা চূড়ান্ত দৃষ্টতা দেখাচ্ছিস তুই, আমি বলবো, তোর কাছে চাইবো না তো অন্য কারো কাছে চাইবো মহাদেব। মা কালীর রূপ দর্শন শেষে না হয় আমি বাউল হয়ে তোর জন্য গয়া কাশি বৃন্দাবনে যাবো রে মা। আমি কিন্তু চন্দ্রনাথ মন্দিরে গিয়েছিলাম। তোরে নিতে পারি নাই এখানো; এই দুঃখও গুছে যাবে হয়তো। আরেকটু সময় হোক। আমাকে না ডাকলে তো কাজী দাদার মাজারের সালাম বিনিময় করেই চলে আসি। যেদিন ডাক আসবে চলে যাবো। আমার ইচ্ছে তুই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস অথবা বিজয় দিবসে চলে যাবি; যেন কেউ এই দিবস নিয়ে আমার সাথে আর কোনো কথা বলতে না পারে।

আর লিখতে ইচ্ছে করছে না; রজনী ত্রি প্রহর এখনো ফুরিয়ে যায়নি। শুধু এতটুকুই বলতে পারি; আমি আমার মাকে নিয়ে লেখা ৪১ আরামবাগের গানটা গাইতে চাই। সেটা হোক রাধানগরে অথবা সেন্টমার্টিনে।

ভারতের চোখে চোখ রেখেই কথা বলতেই হবে আমাকে। দেশপ্রেমিক সীমান্ত বাহিনীর একজন অংশীদার হিসাবে আমি উৎপল দাস বলছি; ভারতের চোখে চোখ রেখেই বলছি, আমার কাছে বাংলাদেশ সবার আগে। প্রয়োজনে আমার মাকে হত্যা করে যুদ্ধে যাবো, কোনোদিন এই মাটির দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে; কোনো ছাড় দেবো না। মহাত্না গান্ধীকে নিয়ে কথা বলার মতো দৃষ্ঠতা এখনো হয়নি আমার। উনি তো সার্বজনীন বাপু। আর আমরা কি হতাভাগা জাতি! তাঁর রক্তের উত্তরাধিকার দুইজন-ই। সেখান থেকে একজন গেলে আরেকজন থাকবেন। এটাও ধ্রুব সত্য। আমি যেমন আামর বাংলাদেশকে হৃদয়ে রাখতে লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত। ঠিক তেমনি ভারতে প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আমৃত্যু রাজি। জয় বাংলা, বাংলাদেশ-ভারতের সম-মর্যাদার সম্পর্ক চিরজীবী হোক।

 

শেয়ার করুন

ভারতের চোখে চোখ রেখেই কথা বলবো ‘আমি’

সময় ০২:১৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চব্বিশের পাঁচই আগস্ট! প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে নানামূখী সম্পর্কের বাতাবরণ দেখেছে বিশ্ব। এরমধ্যে তলব, পত্র চালাচালি থেকে শুরু করে যুদ্ধাবস্থার হুমকি। অবশেষে সুর নরম হয়েছে দিল্লীর। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যমুনায় বরফ গলেনি পুরোপুরি, কবীর সুমনের কবিতায় কাঁপেনি বুক। পতাকায় ছিল বেদনাহত হৃদয়ের মহাকাব্য। তবে সুর নরম হয়েছে রণধীরের। বলেছেন, শ্রদ্ধাশীল সম্পর্ক চায় সাউথ ব্লক।

যাই সেই কথা; দিল্লীর চোখে চোখ রেখে কথা বলার সময়ও চলে এসেছে। কথা বলবোই ‘আমি’।  ভাষার মাসে দিল্লীতে আয়োজেনের জন্য প্রস্তুত … ‘আমার’ সীমান্ত বাহিনীর প্রধান বলেছেন, আলোচনা হবে সম-মর্যাদার। আমি কেন ভারতের চোখে চোখ রাখার সাহস দেখাচ্ছি? কারণ আমি আমৃত্যু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ২৫ চরণের ১০ চরণ শুনেই সুপ্রভাত শুরু করি। কেননা আমার আরেক নাম প্রভাত কুমার দাস।

সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদান স্বীকারপূর্বক আজকের রজনী ত্রিপহরে লিখতে ইচ্ছে করছে। কেননা আমি প্রতিক্ষণই অনুভব করি কাজী দাদাকে। কিন্তু আমার চূড়ান্ত আক্ষেপ রয়েছে তাঁকে নিয়ে। দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুল ফাগুনের মওসুমে দোল লাগে, বসন্ত আসে। অ-তুন ঐ বিষ মাখা মুখ দেখেও আক্ষেপ মিটেনি। প্রিয় শুচির কণ্ঠে এ কি অসীম পিয়াসা হৃদয়াকাশে দোলা দিচ্ছে।

তার মানে আমি এখনো বেসুরো হইনি। কারণ, বেসুরো লোক আমার চোক্ষের বিষ! যাক সেই কথা, তোমারে যে চাহিয়াছে ; ভুলে একদিন। সেই জানে তোমারে ভোলা কী কঠিন! তোমারও স্মৃতি তার, মরণের সাথী হায়, মিটেনা প্রেমেরও পিয়াসা।

সত্যি বলিছি, ভারত দেখার পিয়াসা মিটে না আমার। ভারত না গিয়েও আমি চূড়ান্তভাবেই অনুভব করি ভগৎ সিংকে। খুব মিস করি নেতাজিকে, নিদারুণ আক্ষেপ নিয়ে কষ্ট পাই পাপ্পুকে দেখে। আনন্দ পাই এই ভেবে ‘পি কে’ এর রাজনৈতিক ময়দানে খানিক ধাক্কা আর মিশ্রিত টানাটানি। সত্যি বলছি, গণতন্ত্র এবং দেশপ্রেম শিখতে চাইলে ভারতকে দেখুন। কারণ তারা আগে ভারতীয়, তারপর কেউ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, শিখ, জৈন, আদিবাসী, ধর্মহীনসহ সব ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও ইহুদিদের নিয়ে আমার ভয়ংকর চুলকানি আছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিসহ হাজারো উপাধি বাদ দিলাম, বাবার মুখে শোনা শেখ সাহেব অথবা খোকা, বাইগার নদীর মোহনায় মিশে থাকা দুর্বাঘাসের ফুলে প্রস্ফুটিত আমার আত্ম পরিচয়ের সর্বোচ্চ স্মারক শেখ লুৎফুর রহমান ও সায়রা খাতুনের যুগলবন্দির ভ্রুণ শেখ মুজিবুর রহমান।

এবার আসি শেখের বেটিদের কথায়; একবার ভাবুন তো, আপনার পরিবারের ১৭ সদস্যসহ মোট ২৬ জন মানুষকে এক রাতে হত্যা করা হলো। আপনার মস্তিষ্ক কতটা কাজ করবে? এ প্রশ্নের উত্তর আমার দেয়ার প্রয়োজন নেই। আপনারা নিজেদের জায়গা থেকে ভাবুন এবং ‘চব্বিশের পাঁচই আগস্ট’ আপনার মা-বোন-প্রেমিকা, স্ত্রীসহ নারীর শতরূপের একটির অর্ন্তবাস হাতে কেউ উল্লাস করছেন! আপনার কেমন লাগবে? আর প্রশ্ন করার দরকার নাই।

পাঠকের বিরক্তির কারণ হতে চাই না। যেহেতু একটা প্রজন্মকে হিমু অথবা মিসির আলী ধ্বংস করে নিজে ঠিকই সেন্টমার্টিনের সমুদ্র বিলাসে মগ্ন আছেন। বাদ দিন। এই দুইটা লাইন-ই যথেষ্ট আমার কাছে তাকে ‘পরম শ্রদ্ধা জানাতে।

তাঁর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ আমাকে যেমন মোহিত করে ঠিক তেমনি প্রথম প্রকাশিত সাড়ে তিন টাকার ৭০ পৃষ্ঠার নন্দিত নরকে আমাকে সত্যিই নরকের পরিতৃপ্তি দেয়। কিন্তু সমুদ্র বিলাস এখানো বাণিজ্যিকভাবে খুলে না দেয়ার বেদনা তো রয়েই গেছে। এত ভয় কিসের; আমাদের মিসির আলী বা হিমুর সন্তান বা স্ত্রীদের। আমি জানি না, তবে জানতে চাই। জানার অধিকারবোধ থেকেই বলছি, তারা মিলতে পারছেনা কিনা? আমি মনেপ্রাণে চাই গাজীপুরে পল্লীকে ভুলে তারা সবাই যেন জোছনা রাতে সমুদ্র বিলাসে যান। এই দাবির মাধ্যমে আমি বলতে চাই; সুমহান মুক্তিযুদ্ধের কারণে নন্দিত নরকের প্রকশনা যেভাবে বন্ধ ছিল; ঠিক সেভাবেই আবার ফিরে আসুক নজরুলের শাওনও রাতে যদি, আমার ভাঙা সমুদ্র বিলাসে।

আর হাহাকারের কথা বলতে চাই না, ভারতে যাবো আমি এই ভাষার মাসে। বাংলাদেশি হিন্দু হিসাবে যেতে চাই। না গেলেও কোনো সমস্যা নাই। আমি তো আমার নরসিংদীর রায়পুরার রাধানগরকে-ই চিনতে পারি নাই। যেখানে আমার মা বিমলা রানী দাসকে দাহ করা হবে। ঠিক বসতভিটার সামনেই বিরচাতে মা নিজেই দেখিয়ে দিয়েছেন, আমাকে এখানে পুড়াবি তুই। তোর ভাই মুখাঙ্গী করে ঠিক বাঁশ ঝাড়ের পিছনে বসে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ট্যাঙ্ক রাখা হয়েছিল যেখানে, সেই গর্তের সামনে বসে কেঁদে কেঁদে পূর্ণ করার চেষ্টা চালাবে। আর তুই, উৎপল কুমার দাস; পুড়ানোর সময় শুধু জয় বাংলা স্লোগান দিবি জোরে জোর, সঙ্গে রীতি অনুযায়ী, হর হর মহাদেব বলেও চিল্লাবি। যেন তোর মায়ের আত্নাকে মহাদেব গ্রহণ করে। আর সেদিনই শেষ পান করিস, করতে করতে মরে গেলেও গিলিস। কারণ শিব পূজার চরক গাছ, অগ্নিবান পাড়ি দিয়ে শ্মশানে তো আমার সামনেই মহাদেবের প্রসাদ গিলেছিলি।

সত্যি বলছি, বিমলা ; আমি জানতাম না, আমি জানতাম না, না…। পবিত্র ভোরে যখন আমার জন্ম হয়েছিল বাবার ডায়েরীতে লেখা আছে। ঠিক সেই সময়ের আশেপাশেই হয়তো মহাদেব ছিলেন ওই নদীর পাড়ের শশ্মানে ; তাই হয়তো মায়ের কথায় প্রসাদ গিলেছিলাম। থাক সেসব কথা। জীবনের ৪০ বসন্ত পার করতে চাই রে মা, আমার মা। তোর সাথে আমার এরপর দেখা হবেই। কারণ আমার সৃষ্টিকর্তা, তোর ভগবান তো এতটা নিষ্ঠুত হতে পারেন না।

এটা চূড়ান্ত দৃষ্টতা দেখাচ্ছিস তুই, আমি বলবো, তোর কাছে চাইবো না তো অন্য কারো কাছে চাইবো মহাদেব। মা কালীর রূপ দর্শন শেষে না হয় আমি বাউল হয়ে তোর জন্য গয়া কাশি বৃন্দাবনে যাবো রে মা। আমি কিন্তু চন্দ্রনাথ মন্দিরে গিয়েছিলাম। তোরে নিতে পারি নাই এখানো; এই দুঃখও গুছে যাবে হয়তো। আরেকটু সময় হোক। আমাকে না ডাকলে তো কাজী দাদার মাজারের সালাম বিনিময় করেই চলে আসি। যেদিন ডাক আসবে চলে যাবো। আমার ইচ্ছে তুই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস অথবা বিজয় দিবসে চলে যাবি; যেন কেউ এই দিবস নিয়ে আমার সাথে আর কোনো কথা বলতে না পারে।

আর লিখতে ইচ্ছে করছে না; রজনী ত্রি প্রহর এখনো ফুরিয়ে যায়নি। শুধু এতটুকুই বলতে পারি; আমি আমার মাকে নিয়ে লেখা ৪১ আরামবাগের গানটা গাইতে চাই। সেটা হোক রাধানগরে অথবা সেন্টমার্টিনে।

ভারতের চোখে চোখ রেখেই কথা বলতেই হবে আমাকে। দেশপ্রেমিক সীমান্ত বাহিনীর একজন অংশীদার হিসাবে আমি উৎপল দাস বলছি; ভারতের চোখে চোখ রেখেই বলছি, আমার কাছে বাংলাদেশ সবার আগে। প্রয়োজনে আমার মাকে হত্যা করে যুদ্ধে যাবো, কোনোদিন এই মাটির দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে; কোনো ছাড় দেবো না। মহাত্না গান্ধীকে নিয়ে কথা বলার মতো দৃষ্ঠতা এখনো হয়নি আমার। উনি তো সার্বজনীন বাপু। আর আমরা কি হতাভাগা জাতি! তাঁর রক্তের উত্তরাধিকার দুইজন-ই। সেখান থেকে একজন গেলে আরেকজন থাকবেন। এটাও ধ্রুব সত্য। আমি যেমন আামর বাংলাদেশকে হৃদয়ে রাখতে লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত। ঠিক তেমনি ভারতে প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আমৃত্যু রাজি। জয় বাংলা, বাংলাদেশ-ভারতের সম-মর্যাদার সম্পর্ক চিরজীবী হোক।