এ লড়াই শুধু তিস্তার জন্য নয়
ভারতকে দাদাগিরি বন্ধ করতে হবে: মির্জা ফখরুল

- সময় ০৭:৩৩:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 27
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সত্যিকারের বন্ধুত্ব চাইলে ভারতকে দাদাগিরি বন্ধ করতে হবে। আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই, তবে সেটা হবে সম্মানের ভিত্তিতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করেও তিস্তার এক ফোঁটা পানি আনতে পারেনি।”
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাটে ‘তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের তরুণরা লড়াই করেছে, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ৩৬ দিনের টানা আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ ভারত একদিকে তিস্তার পানি দেয় না, অন্যদিকে জনগণের শত্রুকে (শেখ হাসিনা) রাজার হালে দিল্লিতে বসিয়ে রেখেছে।”
তিনি আরও বলেন, “তিস্তা রক্ষার লড়াই শুধু নদীর পানির জন্য নয়, এটি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এই সংগ্রাম চলবে এবং জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করবেই।”
নির্বাচনের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিবর্তন চাই। বিএনপি নির্বাচন চায়, কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে। কিন্তু বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে, যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী।”
সকাল থেকেই রংপুর-লালমনিরহাটের সংযোগস্থলে অবস্থিত তিস্তা রেলসেতু এলাকা মুখর হয়ে ওঠে ‘জাগো বাহে-তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে। রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া সমাবেশ টানা ৪৮ ঘণ্টা চলবে। এতে শিক্ষার্থী, কৃষক, মৎস্যজীবী, পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা অংশ নিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, “তিস্তা ছিল আমাদের জীবিকার একমাত্র উৎস, কিন্তু এখন সেখানে শুধু বালু আর পাথর। একদিকে পানি নেই, আবার বর্ষায় হঠাৎ পানি এসে ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নেয়।”
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “রংপুর অঞ্চলের লাখো মানুষ তিস্তাপাড়ে জড়ো হয়েছেন। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন জনআকাঙ্ক্ষার দাবি। ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির পরও সরকার আমাদের দাবি না মানলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
তিনি আরও জানান, “তিস্তা আন্দোলনের অংশ হিসেবে পালাগান, সারিগান, লালনগীতি, লোকসংগীতসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন রাখা হয়েছে। তাছাড়া গ্রামীণ খেলাধুলা—হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উড়ানো, গোল্লাছুট, দৌড় প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হবে।”
তথ্যসূত্র বলছে, বর্ষায় ভারত উজানের পানি ছেড়ে দিলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে এ অঞ্চলের মানুষ। আর শুষ্ক মৌসুমে ভারত একতরফাভাবে তিস্তার পানি আটকে রাখে, যার ফলে নদী শুকিয়ে যায়। এতে তিস্তা নির্ভর কৃষক, মাঝি ও জেলেরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে তিস্তা নদীর দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। ভাটিতে ৯৫ কিলোমিটারজুড়ে পানি প্রায় নেই বললেই চলে। চুক্তি অনুযায়ী ন্যায্য পানির হিস্যা পেলে শুষ্ক মৌসুমেও তিস্তার প্রবাহ স্বাভাবিক থাকতো।”
তিস্তা রক্ষা আন্দোলনকারীরা বলছেন, “এ লড়াই শুধু তিস্তার জন্য নয়, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই।”