ফিরে দেখা আ’লীগের শাসনকাল
‘ভাবি লীগ’র দখলে ছিলো বানারীপাড়ার শিক্ষাখাত!
- সময় ১২:৫৪:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
- / 317
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক; বিগত আওয়ামী লীগের সময়ে স্থানীয় রাজনীতিতে ছিলেন বেশ দাপুটে। হাট-বাজার থেকে সরকারি দপ্তর; সব জায়গায় ছিলো একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। আর এ কাজে তিনি সঙ্গে নিয়েছিলেন স্ত্রী মাহফুজা আক্তার জেসমিনকে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন পদ – পদবিতে ছিলেন না। তবু স্বামী গোলাম ফারুকের প্রভাবে জেসমিন ফারুককে ঘিরে গড়ে উঠেছিল আলাদা একটি সিন্ডিকেট। যারা কিনা ‘ভাবি লীগ’ নামে পরিচিত ছিলো। যেমনটা হয়েছি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শাসম পরশের স্ত্রী এ্যাড. নাহিদ সুলতানা জুথিকে ঘিরে। তিনি বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতিতে বহুল চর্চিত ভাবি হিসাবে পরিচিত।
গোলাম ফারুক একাধিকবার বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর; নামের শেষে ‘বিশিষ্ট সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী’ এমন নানা বিশেষন যুক্ত হয় জেসমিন ফারুকেরও। এক সঙ্গে দলীয় ও সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা মিলতো এই দম্পত্তির।
কথিত এ সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী বিশেষণের আড়ালে বানারীপাড়া উপজেলার অন্তত তিনটি মাধ্যমিক স্কুলের বাজেট তসরুফ, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে জেসমিনের বিরুদ্ধে।
তিনি উত্তরকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সৈয়দকাঠি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও খলিসাকোটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত ১০ বছরে নানা মেয়াদে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে দায়িত্বে পালন করেছেন। আবার কখনো কখনো নিজের লোকজন নিয়ে শুধুমাত্র সভা ডেকেই নিজেকে পুননির্বাচিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তরকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান এক সদস্য জানান, ওই স্কুলের দুই মেয়াদে জেসমিন ফারুক চারজন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি চাকুরী পাওয়াদের মুখে শুনেছেন, সবগুলো নিয়োগে ছয় থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। অধিকতর তদন্ত হলে এর সত্যতা মিলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, তাদের স্কুলে ২০২২ সালে ১৭ মে শিক্ষক মিলনায়তনে চার ভোট পেয়ে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্ধি সভাপতি প্রার্থী আক্তার হোসেন দুই ভোট পান। এখানে তাঁর প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ছিলেন তার স্বামী গোলাম ফারুকের রাজনৈতিক কর্মী।
নির্বাচনে তিন অভিভাবক ও তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য ভোট দেন। তারা হলেন, অভিভাবক সদস্য মো. ফারুক হোসেন, মো. মহসিন ফকির, মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য বিশ্বজিৎ কুমার বিশ্বাস, মাওলানা মো. নেছার উদ্দিন ও সংরক্ষিত শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য মোসাম্মৎ খাদিজা আক্তার। এরা সবাই বানারীপাড়া উপেজলায় ফারুকপন্থি হিসেবে পরিচিত।
চেয়ারে বসে জেসমিন ফারুক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মাঝিকে উপহার হিসেবে ভারমুক্ত করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অন্য একটি সূত্র বলছে, আরিফুল ইসলাম- অফিস সহকারী, রতন গাইন- এমএলএসএস ও রুবি বেগম- আয়া পদে নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে তখন বেশ হড্ডগোল হয়। দিনশেষে তাঁরাই নিয়োগ পায়।
সৈয়দকাঠি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক জেসমিন জাহান, সংগীতা দাসের নিয়োগের ক্ষেত্রেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আছে জেসমিন ফারুকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিলন কান্ত সরকারও এ নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই দম্পত্তি আত্মগোপনে রয়েছেন। তাই অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেসমিন ফারুক ও তাঁর স্বামী গোলাম ফারুকের সাথে যোগাযোগ করেও তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।