ঢাকা ০৩:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রহ্মপুত্রে মিললো খনিজ

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৭:৪০:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪
  • / 240

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলো জেলা গাইবান্ধা, যেখানে বয়ে চলেছে প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদী। এই নদী যুগ যুগ ধরে স্থানীয়দের জীবন, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

সম্প্রতি, এই অঞ্চলের বালুতে মূল্যবান ছয়টি খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেল অ্যান্ড মেটালার্জি এ কথা জানিয়েছে। যা স্থানীয় অর্থনীতি ও পরিবেশে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের টেকনো ইকোনমিক ইভাল্যুয়েশন ছাড়াই দাম অন্তত তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। এ নদের বালুতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ আছে বলে গবেষণার বরাত দিয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

ব্রহ্মপুত্রের বালুতে পাওয়া গেছে রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, সিলিকা, ইলমেনাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজ। প্রতিটি খনিজ পদার্থের রয়েছে নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার।

রং, প্লাস্টিক, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস ও ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় রুটাইল। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবান এই খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে।

জিরকন ব্যবহৃত হয় সিরামিক, টাইলস, রিফ্যাক্টরিজ ও মোল্ডিং সেন্ডসে। বর্তমানে সারা বিশ্বে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, চীন, ব্রাজিল, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এ খনিজ উপাদানটি রপ্তানি করে থাকে।

ম্যাগনেটাইট চুম্বক ও ইস্পাত উৎপাদন, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা পরিষ্কার করা এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গভীর ক‚প খননে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশ্বের মাত্র দুটি দেশ মূল্যবান এ খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে থাকে। দেশ দুটি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া।

সিলিকা ব্যবহৃত হয় গ্লাস এবং সিরামিক তৈরিতে, জিরকন সিরামিক এবং রিফ্র্যাক্টরি শিল্পে, ইলমেনাইট থেকে আহরণ করা হয় টাইটানিয়াম – যা বিমান এবং মহাকাশযানে ব্যবহৃত হয় এবং রুটাইল ব্যবহৃত হয় টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড তৈরিতে। যা রং এবং প্লাস্টিকে ব্যবহৃত হয়।

গারনেট হলো ভারি ও মূল্যবান খনিজ। এটি ব্যবহার করা হয় সিরিশ কাগজ উৎপাদন, লোহাজাতীয় পাইপ পরিষ্কার ও বালুতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত সারা বিশ্বে খনিজটি রপ্তানি করে থাকে।

বর্ষার মৌসুমে এই নদে পানির প্রবাহ অনেক থাকে। তবে শুস্ক মৌসুমে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে জেগে ওঠে ধু-ধু বালুচর। এই চরের বালুতেই হাজার হাজার কোটি টাকার খনিজ সম্পদ লুকিয়ে থাকার তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়।

খনিজ সম্পদ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাটের ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, কয়েক বছর আগে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন বালুচর থেকে আড়াই হাজার টন বালু সংগ্রহ করা হয়। যেখান থেকে প্রতি টন বালু থেকে দুই কেজি ইলমিনাইট, ২০০ গ্রাম রুটাইল, ৪০০ গ্রাম জিরকন, ৩.৮ কেজি ম্যাগনেটাইট, ১২ কেজি গারনেট ও ৫০ কেজি কোয়ার্টজ মিনারেল পাওয়া যায়।

গবেষণার বরাত দিয়ে ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, ১০ মিটার গভীরতায় প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকা থেকে উত্তোলনের পর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালুর বাজারমূল্য ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা। আর সমপরিমাণ এলাকা থেকে প্রাপ্ত খনিজের বাজার মূল্য তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।

তবে এই খনিজ সম্পদের উত্তোলন একটি জটিল প্রক্রিয়া। প্রথমে নদীর বালু থেকে খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যাতে খনিজ পদার্থগুলো আলাদা করা যায়। তবে কীভাবে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব খনিজ উত্তোলন করা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি।

এই খনিজ সম্পদ গাইবান্ধা জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাজারে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পকারখানাও।

শেয়ার করুন

ব্রহ্মপুত্রে মিললো খনিজ

সময় ০৭:৪০:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলো জেলা গাইবান্ধা, যেখানে বয়ে চলেছে প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদী। এই নদী যুগ যুগ ধরে স্থানীয়দের জীবন, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

সম্প্রতি, এই অঞ্চলের বালুতে মূল্যবান ছয়টি খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেল অ্যান্ড মেটালার্জি এ কথা জানিয়েছে। যা স্থানীয় অর্থনীতি ও পরিবেশে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের টেকনো ইকোনমিক ইভাল্যুয়েশন ছাড়াই দাম অন্তত তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। এ নদের বালুতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ আছে বলে গবেষণার বরাত দিয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

ব্রহ্মপুত্রের বালুতে পাওয়া গেছে রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, সিলিকা, ইলমেনাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজ। প্রতিটি খনিজ পদার্থের রয়েছে নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার।

রং, প্লাস্টিক, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস ও ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় রুটাইল। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবান এই খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে।

জিরকন ব্যবহৃত হয় সিরামিক, টাইলস, রিফ্যাক্টরিজ ও মোল্ডিং সেন্ডসে। বর্তমানে সারা বিশ্বে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, চীন, ব্রাজিল, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এ খনিজ উপাদানটি রপ্তানি করে থাকে।

ম্যাগনেটাইট চুম্বক ও ইস্পাত উৎপাদন, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা পরিষ্কার করা এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গভীর ক‚প খননে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশ্বের মাত্র দুটি দেশ মূল্যবান এ খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে থাকে। দেশ দুটি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া।

সিলিকা ব্যবহৃত হয় গ্লাস এবং সিরামিক তৈরিতে, জিরকন সিরামিক এবং রিফ্র্যাক্টরি শিল্পে, ইলমেনাইট থেকে আহরণ করা হয় টাইটানিয়াম – যা বিমান এবং মহাকাশযানে ব্যবহৃত হয় এবং রুটাইল ব্যবহৃত হয় টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড তৈরিতে। যা রং এবং প্লাস্টিকে ব্যবহৃত হয়।

গারনেট হলো ভারি ও মূল্যবান খনিজ। এটি ব্যবহার করা হয় সিরিশ কাগজ উৎপাদন, লোহাজাতীয় পাইপ পরিষ্কার ও বালুতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত সারা বিশ্বে খনিজটি রপ্তানি করে থাকে।

বর্ষার মৌসুমে এই নদে পানির প্রবাহ অনেক থাকে। তবে শুস্ক মৌসুমে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে জেগে ওঠে ধু-ধু বালুচর। এই চরের বালুতেই হাজার হাজার কোটি টাকার খনিজ সম্পদ লুকিয়ে থাকার তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়।

খনিজ সম্পদ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাটের ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, কয়েক বছর আগে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন বালুচর থেকে আড়াই হাজার টন বালু সংগ্রহ করা হয়। যেখান থেকে প্রতি টন বালু থেকে দুই কেজি ইলমিনাইট, ২০০ গ্রাম রুটাইল, ৪০০ গ্রাম জিরকন, ৩.৮ কেজি ম্যাগনেটাইট, ১২ কেজি গারনেট ও ৫০ কেজি কোয়ার্টজ মিনারেল পাওয়া যায়।

গবেষণার বরাত দিয়ে ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, ১০ মিটার গভীরতায় প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকা থেকে উত্তোলনের পর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালুর বাজারমূল্য ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা। আর সমপরিমাণ এলাকা থেকে প্রাপ্ত খনিজের বাজার মূল্য তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।

তবে এই খনিজ সম্পদের উত্তোলন একটি জটিল প্রক্রিয়া। প্রথমে নদীর বালু থেকে খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যাতে খনিজ পদার্থগুলো আলাদা করা যায়। তবে কীভাবে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব খনিজ উত্তোলন করা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি।

এই খনিজ সম্পদ গাইবান্ধা জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাজারে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পকারখানাও।