বৈষম্যবিরোধীদের কোটি কোটি টাকার বিটকয়েন!

- সময় ১০:০৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 258
কিপ্রোকারেন্সি প্রতিষ্ঠান ‘বাইনান্স’ এ বর্তমান সরকার ঘনিষ্ঠ পাঁচ জনের বিপুল পরিমাণ (কোটি কোটি) অর্থ লুকিয়ে রাখার তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। দ্যা এশিয়ান পোস্ট ডটকম নামে একটি পোর্টাল এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি স্ক্রিনশটও প্রকাশ করেছে।
এই তালিকায় রয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও সদ্য পদত্যাগী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সাজিব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সরজিস আলম ও খান তালাত মাহমুদ রাফি।
গত ৫ আগস্ট এদের নেতৃত্বেই সরকার পতন আন্দোলনে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। তাদের পতনের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের রিবুদ্ধে।

সম্প্রতি বেশ কিছু আলোচনায় উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি, টেন্ডারবাজির অভিযোগ ওঠে। যদিও সেগুলোর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই অভিযোগের মাঝেই হঠাৎ করে সরকার ঘনিষ্ঠ এই পাঁচ ব্যক্তির ‘বাইনান্স’ অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য ফাঁস করেছে দ্যা এশিয়ান পোস্ট ডটকম নামে একটি অনলাইন পোর্টাল।
তাদের প্রতিবেদনটি হুবহু বাংলায় তুলে ধরা হলো – ‘আমাদের সূত্রগুলো সম্প্রতি এমন কিছু বিস্ফোরক স্ক্রিনশট এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে, যা সম্ভবত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগকে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারে।’
ফাঁস হওয়া স্ক্রিনশটগুলোতে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা, সরকারি কর্মকর্তা এবং ছাত্রনেতাদের বাইনান্স (Binance) অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স প্রকাশ করা হয়েছে। এরা সবাই ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন; যে আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শেষ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন।
দেশটি বর্তমানে চরম অর্থনৈতিক সংকট, লাগামহীন মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাপক বেকারত্বের মুখোমুখি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও একেবারে ভেঙে পড়েছে।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ২০০ জন নারী যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, আর ডাকাতি ও ছিনতাই আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন সংকটের মধ্যেও, যারা একসময় গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের দাবিদার ছিলেন, তারাই এখন আর্থিকভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছেন।
একাধিক স্ক্রিনশটের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে যে, মাত্র সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক কর্মকর্তা কয়েক মিলিয়ন ডলার সম্পদ অর্জন করেছেন।
চাঞ্চল্যকর কিছু নাম:
- শফিকুল আলম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, ৯৩.০৬ বিটকয়েন (BTC) জমিয়েছেন, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০০ কোটি টাকা।
- নাহিদ ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান সরকারি উপদেষ্টা, তার বাইনান্স অ্যাকাউন্টে ২০৪.৬৪ BTC রেখেছেন, যা আনুমানিক মূল্য ২২০ কোটি টাকা (প্রায় ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
- আসিফ মাহমুদ সাজিব ভূঁইয়া, একজন তরুণ ছাত্রনেতা যিনি রহস্যজনকভাবে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (LGRD) মতো দুর্নীতির জন্য কুখ্যাত একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনি ১১৩ BTC সংগ্রহ করেছেন, যার মূল্য প্রায় ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সবচেয়ে রহস্যময় নাম:
- সরজিস আলম, তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, কিন্তু অন্যদের মতো কোনো সরকারি পদে নেই, এমনকি তার দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎসও নেই। তবুও, তিনি ৭.৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জমিয়েছেন।
- অস্বাভাবিক ব্যাপার হলো, কোনো সরকারি পদ না থাকার পরও সরজিস আলম রাষ্ট্রীয় সমস্ত সুবিধা ও সামরিক প্রটোকল ভোগ করছেন, যা এখনো রহস্যজনক।
- খান তালাত মাহমুদ রাফি, সরজিস আলমের মতোই, তিনিও কোনো সরকারি পদে নেই, কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। তার বাইনান্স অ্যাকাউন্টে ১১.০৯ BTC জমা রয়েছে, যা বাংলাদেশের একজন সাধারণ ছাত্রনেতার জন্য অবিশ্বাস্য সম্পদ।
এই তথ্যগুলো প্রকাশের পর, স্পষ্ট হচ্ছে যে যারা একসময় গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের নামে আন্দোলন করেছিল, তারাই এখন লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। যখন দেশটির সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে, তখন এই নেতারা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন।
গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি এই নিউজটি প্রকাশ করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে আজ রাত সাড়ে ৮টায় এই নিউজটি শেয়ার করেছেন।

এদিকে বাংলা অ্যাফেয়ার্সের তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গতবছরের ২৫ অক্টোবর এই নিউজ সাইটের ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এরপর ৩০ অক্টোবর এটি আপডেট করা হয়েছে। তবে তাদের ঠিকানা বা কারা এটি পরিচালনা করছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি নামসর্বস্ব নিউজ পোর্টাল; যেটি মূলত প্রোপাগান্ডার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করা হয়।
অন্যদিকে বিটকয়েন অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যক্তিরা নিশ্চিত করেছেন, বিটকয়েনের মালিকের নাম কখনোই প্রকাশ করা হয় না। বিটকয়েন একটি বিকেন্দ্রীকৃত ডিজিটাল মুদ্রা এবং এর লেনদেনগুলি ব্লকচেইন (Blockchain) নামক একটি পাবলিক লেজারে রেকর্ড করা হয়।
এই লেনদেনগুলি একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক ঠিকানা ব্যবহার করে পরিচালিত হয়, যা ব্যবহারকারীর প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখে।
সুতরাং, নিউজে ব্যবহৃত স্ক্রিনশট সঠিক না বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।