১২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন

মাসুদ রানা, মোংলা (বাগেরহাট)
  • সময় ০৩:৫০:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 59

সুন্দরবন দিবস

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, সুন্দরবন দিবস। ২০০১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে।

সুন্দরবন তার অনন্য জীববৈচিত্র্যের জন্য ১৯৯২ সালের ২১ মে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো একে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে। বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনগুলোর তুলনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

এই বনের মোট আয়তনের ৩১.১৫ শতাংশ জলাভূমি। এখানে রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড, পাশাপাশি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, কুমির, কিং কোবরা, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং ২১০ প্রজাতির মাছ।

এবারের সুন্দরবন দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন’।

এদিকে, সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে মোংলায় অনুষ্ঠিত হলো “বাঁচাও সুন্দরবন” শীর্ষক র‍্যালি ও সমাবেশ। ১৪ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার সকালে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তারা বনবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ও বন্যপ্রাণী অপরাধ দমনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁরা বলেন, সুন্দরবনের চারপাশে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়াই গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা দূষণে পশুর নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে, যা সুন্দরবনের প্রাণের জন্য মারাত্মক বিপদজনক। তাই অবিলম্বে এই প্রকল্প বন্ধ করে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), একশন এইড বাংলাদেশ, জেটনেট বিডি, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা, বাদাবন সংঘ, সিএনআরএস, রূপান্তর, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার, সুন্দরবন জাদুঘর, ওয়াইল্ড টিম ও মোংলা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত এই র‍্যালি শেষে পৌরসভা চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল সাড়ে ১১টায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মোঃ নূর আলম শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়কারী শরীফ জামিল। এছাড়াও বক্তৃতা করেন সাবেক পৌর কাউন্সিলর এমরান হোসেন, সুন্দরবন জাদুঘরের পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা-এর গীতিকার মোল্লা আল মামুন, ওয়াইল্ড টিমের সাইফুল ইসলাম, বাদাবন সংঘের নাজমিন, পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের কমলা সরকার ও জেলে সমিতির আব্দুর রশিদ হাওলাদার প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্ষয়িষ্ণু সুন্দরবনের সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেপরোয়া শিল্পদূষণের ফলে সুন্দরবন হুমকির মুখে। জাতিসংঘের অনুরোধ সত্ত্বেও এখানকার পরিবেশ রক্ষায় গ্রহণযোগ্য কৌশলগত সমীক্ষা এখনো হয়নি। বনবিভাগের দুর্নীতির কারণে বনজীবীদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই।”

সভাপতির বক্তব্যে মোঃ নূর আলম শেখ বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে হরিণ শিকার ও বন্যপ্রাণী অপরাধ বেড়ে গেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন, বৃক্ষনিধন ও বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধ করতে না পারলে সুন্দরবনকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।”

সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে আরও কিছু কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টায় মোংলা পৌর শহীদ মিনারে “সুন্দরী শ্যামলিমা সুন্দরবন” শীর্ষক শিশু চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় “পরাণের সুন্দরবন” শীর্ষক আলোচনা সভা, বিকেল ৫টায় “বাঘের বাচ্চা” শীর্ষক বাঘ মহড়া ও সুন্দরবন অঞ্চলের জনপ্রিয় লাঠিখেলা প্রদর্শিত হয়। সবশেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

শেয়ার করুন

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন

সময় ০৩:৫০:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, সুন্দরবন দিবস। ২০০১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে।

সুন্দরবন তার অনন্য জীববৈচিত্র্যের জন্য ১৯৯২ সালের ২১ মে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো একে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে। বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনগুলোর তুলনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

এই বনের মোট আয়তনের ৩১.১৫ শতাংশ জলাভূমি। এখানে রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড, পাশাপাশি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, কুমির, কিং কোবরা, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং ২১০ প্রজাতির মাছ।

এবারের সুন্দরবন দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন’।

এদিকে, সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে মোংলায় অনুষ্ঠিত হলো “বাঁচাও সুন্দরবন” শীর্ষক র‍্যালি ও সমাবেশ। ১৪ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার সকালে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তারা বনবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ও বন্যপ্রাণী অপরাধ দমনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁরা বলেন, সুন্দরবনের চারপাশে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়াই গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা দূষণে পশুর নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে, যা সুন্দরবনের প্রাণের জন্য মারাত্মক বিপদজনক। তাই অবিলম্বে এই প্রকল্প বন্ধ করে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), একশন এইড বাংলাদেশ, জেটনেট বিডি, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা, বাদাবন সংঘ, সিএনআরএস, রূপান্তর, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার, সুন্দরবন জাদুঘর, ওয়াইল্ড টিম ও মোংলা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত এই র‍্যালি শেষে পৌরসভা চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল সাড়ে ১১টায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মোঃ নূর আলম শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়কারী শরীফ জামিল। এছাড়াও বক্তৃতা করেন সাবেক পৌর কাউন্সিলর এমরান হোসেন, সুন্দরবন জাদুঘরের পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা-এর গীতিকার মোল্লা আল মামুন, ওয়াইল্ড টিমের সাইফুল ইসলাম, বাদাবন সংঘের নাজমিন, পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের কমলা সরকার ও জেলে সমিতির আব্দুর রশিদ হাওলাদার প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্ষয়িষ্ণু সুন্দরবনের সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেপরোয়া শিল্পদূষণের ফলে সুন্দরবন হুমকির মুখে। জাতিসংঘের অনুরোধ সত্ত্বেও এখানকার পরিবেশ রক্ষায় গ্রহণযোগ্য কৌশলগত সমীক্ষা এখনো হয়নি। বনবিভাগের দুর্নীতির কারণে বনজীবীদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই।”

সভাপতির বক্তব্যে মোঃ নূর আলম শেখ বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে হরিণ শিকার ও বন্যপ্রাণী অপরাধ বেড়ে গেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন, বৃক্ষনিধন ও বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধ করতে না পারলে সুন্দরবনকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।”

সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে আরও কিছু কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টায় মোংলা পৌর শহীদ মিনারে “সুন্দরী শ্যামলিমা সুন্দরবন” শীর্ষক শিশু চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিকেল ৪টায় “পরাণের সুন্দরবন” শীর্ষক আলোচনা সভা, বিকেল ৫টায় “বাঘের বাচ্চা” শীর্ষক বাঘ মহড়া ও সুন্দরবন অঞ্চলের জনপ্রিয় লাঠিখেলা প্রদর্শিত হয়। সবশেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।