বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
- সময় ০৫:৩১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 31
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ৯ শতাধিক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যের (এপিবিএন) এখনো নিরাপত্তা পাস দেয়নি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বর্তমানে তাদের কাছে যে নিরাপত্তা পাস রয়েছে সেটির মেয়াদও শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। একইসঙ্গে এপিবিএন সদস্যদের এয়ারসাইটে দায়িত্বের বিষয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি সংস্থাটি। এমন অবস্থায় বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।
অপরদিকে বিষয়টির এখনো পর্যন্ত কোনো সুরাহা না হওয়ায় বিমানবন্দরে এপিবিএন সদস্যদের দায়িত্ব পালন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা পাস না পাওয়ার কথা জানিয়ে বিমানবন্দর এপিবিএনের কয়েকজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমে জানান, এখনো তারা নতুন পাস বা ‘আইডি’ পাননি। বেবিচক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা নির্দেশনাও পাননি।
তবে এপিবিএন সদস্যদের ‘আইডি’ দেওয়া হবে বলে জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা নিয়ে তাদের এত অস্থিরতার কিছু নেই। অনেক সংস্থা এখানে কাজ করছে। তাদের পাস ইস্যু করা হচ্ছে। এপিবিএনকেও দেওয়া হবে।”
বেবিচক থেকে বলা হয়, বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের বিষয়ে দেখভাল করবে অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক)। তাদের কাছ থেকে বিমানবন্দরে যেসব সরকারি সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের নিরাপত্তা পাস বা আইডি নিতে হবে। এতদিন বেবিচক এ নিরাপত্তা পাস দিয়ে আসছে।
নভেম্বরের শুরুতে বেবিচক চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে বলেন, ‘এভসেকের সক্ষমতা বাড়লে এপিবিএন বিমানবন্দরে থাকবে না। এতে অস্থিরতা আরো বাড়ে। যদিও অক্টোবর থেকেই এভসককে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এজন্য বিমান বাহিনীর ৫ শতাধিক সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয় এভসেকে।’
এদিকে বিমানবন্দরের কার্যালয় দখলের অভিযোগ এনে এভসেকের বিরুদ্ধে ২৯ অক্টোবর থানায় জিডি করে এপিবিএন। এতে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করার বিষয়টি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভালো চোখে দেখছে না বেবিচকও।
এরই মধ্যে গত ১৮ নভেম্বর নিরাপত্তা পাস স্থগিতের সার্কুলার জারি করে বেবিচক। সংস্থাটির সদস্য (সিকিউরিটি) এয়ার কমোডর মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান খানের স্বাক্ষরিত ঐ সার্কুলারে বলা হয়, বেবিচকের বিমানবন্দর পাস নীতিমালা-২০২০ অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর থেকে আগের ইস্যু করা পাসগুলো স্থগিত ঘোষণা করা হলো।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, ‘বেবিচক ও এপিবিএনের কর্মকর্তারা বসে তাদের নিজেদের মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে সেটি ঠিক করে নেবে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ে এ ধরনের মনোমালিন্য কোনো ঝুঁকি না বাড়ায়, সেদিকে উভয়পক্ষকে আন্তরিক থাকা উচিত।’
বেবিচক সূত্র জানা গেছে, বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে (এয়ারসাইড) দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বেবিচক সদর দফতরে চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে গত ১১ নভেম্বর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এপিবিএনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এয়ারসাইডে এপিবিএন সদস্যদের মোতায়েনের একটি পরিকল্পনা চাওয়া হয়। এপিবিএনের পক্ষ থেকে সেই পরিকল্পনা চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়। সভায় শাহজালাল বিমানবন্দরে টার্মিনাল ভবনের ভেতরে প্রতি শিফটে এপিবিএন সদস্যদের মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানিয়ে বেবিচককে চিঠি দেয় এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে (এয়ারসাইড) সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আসছে এপিবিএন সদস্যরা। পাশাপাশি ভিভিআইপি ও ভিআইপি প্ররক্ষা, ভিভিআইপি বিমান প্ররক্ষা, বিভিন্ন কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বও পালন করছে।