ঢাকা ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে কমিটি হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ১০:৫৩:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 28

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, অন্তবর্তী সরকার এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চায়। এ নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তিনি জানান, আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটির সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে ৯ হন হতে পারে। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হবে।

এর আগে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ভিকটিম পরিবার সঙ্গে নিয়ে আইন উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফেসবুক বার্তায় এ ঘোষণা দেন তিনি।

ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হয়ে সচেতন ছাত্র-নাগরিকের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হওয়ার কথা ছিল।

ফেসবুক পোস্টে মাহিন সরকার বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে না পারা হলো এই অন্তর্বর্তী সরকারের একটি চরম ব্যর্থতা। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে কমিশন গঠনে গড়িমসি করে এই সরকার দেশের তামাম জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যা স্পষ্টতই প্রহসনের শামিল।

উল্লেখ্য, ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় হত্যাকাণ্ডের মামলায় পুনঃতদন্ত কমিশন কেন নয় তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। আদালত একইসঙ্গে পিলখানা হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
৫ নভেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে ৪ নভেম্বর বিডিআর বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত কার্যক্রম নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত হবে এবং অবশ্যই হতে হবে। দ্রুতই তদন্ত টিম করা হবে। যেহেতু অন্যান্য অনেকগুলো হচ্ছে, এটাও হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদরদপ্তরের সংঘটিত বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।

এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুইটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছে ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।

হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ৮৫০ জনের বিচার কাজ শেষ হয়েছে। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে ২২৮ জনকে সাজা প্রদান করা হয়। এছাড়া ২৮৩ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

হাই কোর্টের রায়ের পূর্বে ১৫ জনসহ মোট ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০১০ সালে ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে এ মামলার বিচার ঝুলে যায়। তবে শাসন ক্ষমতার পরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠে।

শেয়ার করুন

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে কমিটি হচ্ছে

সময় ১০:৫৩:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, অন্তবর্তী সরকার এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চায়। এ নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তিনি জানান, আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটির সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে ৯ হন হতে পারে। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হবে।

এর আগে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ভিকটিম পরিবার সঙ্গে নিয়ে আইন উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফেসবুক বার্তায় এ ঘোষণা দেন তিনি।

ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হয়ে সচেতন ছাত্র-নাগরিকের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হওয়ার কথা ছিল।

ফেসবুক পোস্টে মাহিন সরকার বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে না পারা হলো এই অন্তর্বর্তী সরকারের একটি চরম ব্যর্থতা। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে কমিশন গঠনে গড়িমসি করে এই সরকার দেশের তামাম জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যা স্পষ্টতই প্রহসনের শামিল।

উল্লেখ্য, ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় হত্যাকাণ্ডের মামলায় পুনঃতদন্ত কমিশন কেন নয় তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। আদালত একইসঙ্গে পিলখানা হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
৫ নভেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে ৪ নভেম্বর বিডিআর বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত কার্যক্রম নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত হবে এবং অবশ্যই হতে হবে। দ্রুতই তদন্ত টিম করা হবে। যেহেতু অন্যান্য অনেকগুলো হচ্ছে, এটাও হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদরদপ্তরের সংঘটিত বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।

এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুইটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছে ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।

হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ৮৫০ জনের বিচার কাজ শেষ হয়েছে। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে ২২৮ জনকে সাজা প্রদান করা হয়। এছাড়া ২৮৩ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

হাই কোর্টের রায়ের পূর্বে ১৫ জনসহ মোট ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০১০ সালে ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে এ মামলার বিচার ঝুলে যায়। তবে শাসন ক্ষমতার পরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠে।