ঢাকা ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিড়ালের দ্বীপ তাশিরোজিমা মানুষের দ্বীপে বিড়ালের রাজত্ব

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৬:৩১:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
  • / 271

সূর্যোদয়ের দেশ জাপান। সেখানকার এক অদ্ভুত দ্বীপ তাশিরোজিমা। বসবাসের জন্য সেখানে নেই নজরকাড়া কোন ব্যবস্থা। তবুও বারবার সেই দ্বীপে ভিড় জমান পর্যটকরা। কারন অবশ্য একটি আছে ! তা হলো দ্বীপটিতে মানুষের চেয়ে বিড়ালের বসবাস বেশি। বলা চলে সেখানে বিড়ালের রাজত্ব চলে।

দ্বীপটিকে অনেকের কাছেই ‘ক্যাট আইল্যান্ড’ অথবা বিড়ালের দ্বীপ নামেই পরিচিত। ২০১৫ সালের এক গণনায় দেখা যায়, দ্বীপটিতে তখন ৮০ জন মানুষের বাস ছিলো। অন্য দিকে এই দ্বীপে বিড়ালের সংখ্যা ছিলো ১৫০-এর কাছাকাছি।১৯৫০ সালে দ্বীপটিতে প্রায় এক হাজার মানুষের বসবাস ছিলো। ২০১১ সালে সুনামি আঘাত হানলে অধিকাংশ বাসিন্ধা দ্বীপ ছেড়ে চলে যান।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাশিরোজিমা দ্বীপে বসবাসকারিদের মধ্যে ৮৩ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এমনকি ৫০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। দ্বীপটির বাসিন্ধারা সাধারণত মাছ ধরেন অথবা পর্যটকদের আতিথেয়তার সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৬০৩ থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত তাশিরোজিমা দ্বীপে বস্ত্রশিল্পের প্রচলন ছিল। ফলে এই দ্বীপে রেশমকীটের উৎপাদনও হতো বেশি। যে কারনে দ্বীপটিতে ইঁদুরের উপদ্রবও ছিল বেশি। ইঁদুরের হাত থেকে রেশমকীট রক্ষা করতে দ্বীপের অধিবাসীরা তাদের বাড়িতে বিড়াল পুষতে শুরু করেন। তাছাড়া এই দ্বীপের বাসিন্ধারা মনে করেন, এসব বিড়াল তাদের সৌভাগ্যের প্রতীক।

জানা যায়, বহু বছর আগে এই দ্বীপে একটি বিড়াল পাথর চাপায় মারা যায়। ঘটনাস্থলেই বিড়ালের মরদেহ চাপা দেন অধিবাসীরা। পরবর্তী সময়ে সেখানে মন্দির গড়ে তোলা হয়। মাত্র দেড় বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটিতে বিড়ালের আদলে ৫১টি পাথরের মূর্তি রয়েছে। সুনামির পর ২০১৫ সালে দ্বীপটি পুননির্মাণ করা হয়। পরে দ্বীপের মধ্যে বিড়ালকে খাওয়ানোর জন্য আলাদা জায়গাও তৈরি করা হয়। পর্যটকরা দ্বীপে ঘুরতে গেলে সেই নির্দিষ্ট জায়গাগুলোয় গিয়ে বিড়ালকে খাওয়ান। এই দ্বীপে কুকুর পোষা এবং বাইরে থেকে কুকুর নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ২০১৩ সালে টুইটারে বিড়াল দ্বীপের প্রসঙ্গে ছবি ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটকের নজর কাড়ে এই দ্বীপ।

দ্বীপের মধ্যে দুটি গ্রাম আছে। একটি নিতোদা, অন্যটি ওদোদারি। একটির থেকে আরেকটির দূরত্ব দুই কিলোমিটার। দ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত নিতোদা আকারে বড়। এখানে বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস ও রেস্তোরাঁ আছে। এদিকটায় প্রচুর বিড়ালও ঘুরে বেড়ায়। দ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থান ওদোমারির। এটি আকারে কিছুটা ছোট, রেস্তোরাঁও বেশি নেই। তবে যেহেতু গোটা দ্বীপেই বিড়ালের রাজত্ব, তাই এখানেও তাদের দেখা পেতে সমস্যা নেই। দ্বীপে ঘুরতে গেলে পর্যটকদের এখানকার রেস্তোরাঁ আর মোটেলগুলোর টাইম শিডিউল সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। কারণ, পুরো বছর এগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ থাকে।

জাপানে এমন আরও দুটি দ্বীপ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ‘আওশিমা’ এবং ‘এনোশিমা’। আওশিমা দ্বীপে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষের বাস, অথচ সেখানে বিড়ালের সংখ্যা ১২০টি। এনোশিমা দ্বীপেও একই অবস্থা।

শেয়ার করুন

বিড়ালের দ্বীপ তাশিরোজিমা মানুষের দ্বীপে বিড়ালের রাজত্ব

সময় ০৬:৩১:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

সূর্যোদয়ের দেশ জাপান। সেখানকার এক অদ্ভুত দ্বীপ তাশিরোজিমা। বসবাসের জন্য সেখানে নেই নজরকাড়া কোন ব্যবস্থা। তবুও বারবার সেই দ্বীপে ভিড় জমান পর্যটকরা। কারন অবশ্য একটি আছে ! তা হলো দ্বীপটিতে মানুষের চেয়ে বিড়ালের বসবাস বেশি। বলা চলে সেখানে বিড়ালের রাজত্ব চলে।

দ্বীপটিকে অনেকের কাছেই ‘ক্যাট আইল্যান্ড’ অথবা বিড়ালের দ্বীপ নামেই পরিচিত। ২০১৫ সালের এক গণনায় দেখা যায়, দ্বীপটিতে তখন ৮০ জন মানুষের বাস ছিলো। অন্য দিকে এই দ্বীপে বিড়ালের সংখ্যা ছিলো ১৫০-এর কাছাকাছি।১৯৫০ সালে দ্বীপটিতে প্রায় এক হাজার মানুষের বসবাস ছিলো। ২০১১ সালে সুনামি আঘাত হানলে অধিকাংশ বাসিন্ধা দ্বীপ ছেড়ে চলে যান।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাশিরোজিমা দ্বীপে বসবাসকারিদের মধ্যে ৮৩ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এমনকি ৫০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। দ্বীপটির বাসিন্ধারা সাধারণত মাছ ধরেন অথবা পর্যটকদের আতিথেয়তার সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৬০৩ থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত তাশিরোজিমা দ্বীপে বস্ত্রশিল্পের প্রচলন ছিল। ফলে এই দ্বীপে রেশমকীটের উৎপাদনও হতো বেশি। যে কারনে দ্বীপটিতে ইঁদুরের উপদ্রবও ছিল বেশি। ইঁদুরের হাত থেকে রেশমকীট রক্ষা করতে দ্বীপের অধিবাসীরা তাদের বাড়িতে বিড়াল পুষতে শুরু করেন। তাছাড়া এই দ্বীপের বাসিন্ধারা মনে করেন, এসব বিড়াল তাদের সৌভাগ্যের প্রতীক।

জানা যায়, বহু বছর আগে এই দ্বীপে একটি বিড়াল পাথর চাপায় মারা যায়। ঘটনাস্থলেই বিড়ালের মরদেহ চাপা দেন অধিবাসীরা। পরবর্তী সময়ে সেখানে মন্দির গড়ে তোলা হয়। মাত্র দেড় বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটিতে বিড়ালের আদলে ৫১টি পাথরের মূর্তি রয়েছে। সুনামির পর ২০১৫ সালে দ্বীপটি পুননির্মাণ করা হয়। পরে দ্বীপের মধ্যে বিড়ালকে খাওয়ানোর জন্য আলাদা জায়গাও তৈরি করা হয়। পর্যটকরা দ্বীপে ঘুরতে গেলে সেই নির্দিষ্ট জায়গাগুলোয় গিয়ে বিড়ালকে খাওয়ান। এই দ্বীপে কুকুর পোষা এবং বাইরে থেকে কুকুর নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ২০১৩ সালে টুইটারে বিড়াল দ্বীপের প্রসঙ্গে ছবি ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটকের নজর কাড়ে এই দ্বীপ।

দ্বীপের মধ্যে দুটি গ্রাম আছে। একটি নিতোদা, অন্যটি ওদোদারি। একটির থেকে আরেকটির দূরত্ব দুই কিলোমিটার। দ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত নিতোদা আকারে বড়। এখানে বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস ও রেস্তোরাঁ আছে। এদিকটায় প্রচুর বিড়ালও ঘুরে বেড়ায়। দ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থান ওদোমারির। এটি আকারে কিছুটা ছোট, রেস্তোরাঁও বেশি নেই। তবে যেহেতু গোটা দ্বীপেই বিড়ালের রাজত্ব, তাই এখানেও তাদের দেখা পেতে সমস্যা নেই। দ্বীপে ঘুরতে গেলে পর্যটকদের এখানকার রেস্তোরাঁ আর মোটেলগুলোর টাইম শিডিউল সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। কারণ, পুরো বছর এগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ থাকে।

জাপানে এমন আরও দুটি দ্বীপ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ‘আওশিমা’ এবং ‘এনোশিমা’। আওশিমা দ্বীপে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষের বাস, অথচ সেখানে বিড়ালের সংখ্যা ১২০টি। এনোশিমা দ্বীপেও একই অবস্থা।