ঢাকা ১২:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বার্ড হিটের চূড়ান্ত ঝুঁকিতে শাহজালাল বিমানবন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০১:৪৫:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 37

বার্ড হিট শাহজালাল বিমানবন্দর

ঢাকার আশপাশে উড্ডয়নরত উড়োজাহাজে পাখির আঘাতের (বার্ড হিট) বেশ কয়েকটি ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারপাশে কয়েকটি জলাশয় থাকায় সেখানে মাছ ও কীটপতঙ্গ খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি হাজির হয়। এ ছাড়া আশপাশের উচ্ছিষ্ট খাবার, রানওয়ের সবুজ ঘাসও পাখিদের পছন্দ। তাই সেখানেও তাদের বিচরণ থাকে। এ জন্য শীত এলেই শাহজালাল বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ ওঠানামায় পাখির ধাক্কা লাগার আশঙ্কা বেশি থাকে। ফলে বার্ড হিটের চূড়ান্ত ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণে বার্ড হিটে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এই বিমানবন্দরে বার্ড শ্যুটার (পাখি শিকারি) রয়েছেন বন্দুক দিয়ে পাখি তাড়ানোর কাজে। কিন্তু তাড়ানোর পরও পাখিরা ঘুরে ফিরে বিমানবন্দর এলাকায় ভিড় করছে।

বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকলে বেশি ক্ষতি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। ইঞ্জিনের ফ্যান, ব্লেড ও স্পিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া পাখির আঘাতের ঝুঁকি থাকলে পাইলটদেরও মানসিক চাপে থাকতে হয়।

এয়ারলাইনসগুলো বলেছে, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর ক্ষেত্রে মনিটরিং খুব একটা কার্যকর নয়। ফলে মাঝে মাঝে বার্ড হিটের ঘটনা ঘটছে।

জানা যায়, গত চার বছরে বিভিন্ন বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে (বার্ড হিট) ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লন্ডনগামী অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারসহ দেশি-বিদেশি অন্তত সাতটি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে শাহজালালে এক দিনেই পৃথক দুটি পাখির আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইউএস-বাংলা, কাতার এয়ারওয়েজ ও আমিরাত এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানায়, চলতি বছরেই পাখির আঘাতে তাদের দুটি ফ্লাইটের জরুরি অবতরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও উড়োজাহাজের প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১১ আগস্ট নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বার্ড হিটে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সকাল সোয়া ৮টার দিকে বিমানবন্দরে অবতরণের আগে এ ঘটনা ঘটে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে বিমানের ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজের যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে পাইলট উড্ডয়ন ঠেকাতে উড়োজাহাজে জরুরি ব্রেক করেন। এতে পেছনের চাকা ফেটে যায়।

ওই ফ্লাইটের ব্যাংককগামী যাত্রী আব্দুল করিম বলেন, এ ঘটনায় তারা অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাদের ফ্লাইটটি প্রত্যাহার করা হয়। পরে তারা অন্য উড়োজাহাজে যাত্রা করেন।

বিমানের ওই ব্যাংককগামী ফ্লাইট ছাড়াও একই দিনে ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসের আরব আমিরাতগামী ফ্লাইটেও আঘাত হানে পাখি।

বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৃথক দুটি উড়োজাহাজে পাখি আঘাত হানে। এতে বিমানের লন্ডনগামী অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের যাত্রা ব্যাহত হয়; ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়ে এসে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামার সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের (বিজি ৪৪৯১/৪৯২) বিমানটির সামনের অংশ পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তবে ত্রুটি সারিয়ে ৭৩ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিতরে ডোবা
শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিতরে ডোবা

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ম্যানেজার বাহাউদ্দিন জাকারিয়া জানান, ফ্লাইটটি (বিজি ৪৪৯১/৪৯২) ৭১ জন যাত্রী নিয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের পথে বিমানবন্দর সীমানার বাইরে বার্ড হিটের কবলে পড়ে। এতে বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ত্রুটি সারাতে গিয়ে সময় নেওয়া হয়। তবে ত্রুটি সারিয়ে চার ঘণ্টা পর বিমানটি ৭৩ জন যাত্রী নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

পাখির আঘাত নিয়ে শুধু যাত্রীরাই নন, আতঙ্কে থাকেন পাইলটরাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পাইলট তাদের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর কাজে নিয়োজিত কর্মীদের দক্ষতায় ঘাটতি আছে। এতে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে, তার জবাবদিহি নেই। তাদের কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণ করা হয় না। এ কারণে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের সময় তারা পাখি আতঙ্কে থাকেন। তবে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ নিরাপদ রাখতে আমরা পাখি তাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এ জন্য আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। অ্যাক্টিভ বার্ড কন্ট্রোলের জন্য ছুটির দিনসহ সব সময় পাখি তাড়াতে আমাদের সিভিল এভিয়েশনের বার্ডশ্যুটার এবং বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া প্যাসিভ বার্ড কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে পরোক্ষ ডিভাইস যেমন-ক্যামেরার মাধ্যমে ডিটেকশন, সাউন্ড ডিটেকশন, সাউন্ড রিপেলিং, লেজার গান, ইরিটেটেড ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবস্থা আছে বিমানবন্দরে।’

দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে পাখির উৎসর জরিপ করা হচ্ছে বলে জানান মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরটি শহরের মাঝখানে হওয়ায় আমাদের যে পাখির উৎসগুলো আছে সেগুলো স্থানান্তর করাই চ্যালেঞ্জ। এ জন্য আমরা এক বছর মেয়াদি একটি বিস্তারিত জরিপ করছি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশে পাখির যেসব উৎসগুলো আছে সেগুলো অন্যদিকে কীভাবে ডাইভার্ট করা যায় সেই চেষ্টা আমরা করছি। এমনকি কোথায় কোথায় পাখির খাবারের উৎস, ওয়াটার বডি, মাছ, ডোবা-নালা আছে, বুচার শপ, ডাস্টবিন, রেস্টুরেন্ট আছে, সেগুলোও দেখা হচ্ছে। এসব উন্মুক্ত খাবারের উৎস পাখিদের আকৃষ্ট করে। এরপর আমরা পাখি বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নেব। আমাদের উদ্দেশ্য পাখিকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে অন্যত্র ডাইভার্ট করা।’

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রবিবার ১৮১ জন যাত্রী নিয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশটির স্থানীয় অগ্নিনির্বাপণ সংস্থার প্রধান লি জিয়ং হিউন বলেছেন, পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগা ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে পাখির ধাক্কার কথা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানিয়েছিলেন পাইলট।

শেয়ার করুন

বার্ড হিটের চূড়ান্ত ঝুঁকিতে শাহজালাল বিমানবন্দর

সময় ০১:৪৫:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকার আশপাশে উড্ডয়নরত উড়োজাহাজে পাখির আঘাতের (বার্ড হিট) বেশ কয়েকটি ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারপাশে কয়েকটি জলাশয় থাকায় সেখানে মাছ ও কীটপতঙ্গ খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি হাজির হয়। এ ছাড়া আশপাশের উচ্ছিষ্ট খাবার, রানওয়ের সবুজ ঘাসও পাখিদের পছন্দ। তাই সেখানেও তাদের বিচরণ থাকে। এ জন্য শীত এলেই শাহজালাল বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ ওঠানামায় পাখির ধাক্কা লাগার আশঙ্কা বেশি থাকে। ফলে বার্ড হিটের চূড়ান্ত ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণে বার্ড হিটে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এই বিমানবন্দরে বার্ড শ্যুটার (পাখি শিকারি) রয়েছেন বন্দুক দিয়ে পাখি তাড়ানোর কাজে। কিন্তু তাড়ানোর পরও পাখিরা ঘুরে ফিরে বিমানবন্দর এলাকায় ভিড় করছে।

বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকলে বেশি ক্ষতি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। ইঞ্জিনের ফ্যান, ব্লেড ও স্পিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া পাখির আঘাতের ঝুঁকি থাকলে পাইলটদেরও মানসিক চাপে থাকতে হয়।

এয়ারলাইনসগুলো বলেছে, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর ক্ষেত্রে মনিটরিং খুব একটা কার্যকর নয়। ফলে মাঝে মাঝে বার্ড হিটের ঘটনা ঘটছে।

জানা যায়, গত চার বছরে বিভিন্ন বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে (বার্ড হিট) ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লন্ডনগামী অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারসহ দেশি-বিদেশি অন্তত সাতটি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে শাহজালালে এক দিনেই পৃথক দুটি পাখির আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইউএস-বাংলা, কাতার এয়ারওয়েজ ও আমিরাত এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানায়, চলতি বছরেই পাখির আঘাতে তাদের দুটি ফ্লাইটের জরুরি অবতরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও উড়োজাহাজের প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১১ আগস্ট নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বার্ড হিটে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সকাল সোয়া ৮টার দিকে বিমানবন্দরে অবতরণের আগে এ ঘটনা ঘটে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে বিমানের ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজের যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে পাইলট উড্ডয়ন ঠেকাতে উড়োজাহাজে জরুরি ব্রেক করেন। এতে পেছনের চাকা ফেটে যায়।

ওই ফ্লাইটের ব্যাংককগামী যাত্রী আব্দুল করিম বলেন, এ ঘটনায় তারা অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাদের ফ্লাইটটি প্রত্যাহার করা হয়। পরে তারা অন্য উড়োজাহাজে যাত্রা করেন।

বিমানের ওই ব্যাংককগামী ফ্লাইট ছাড়াও একই দিনে ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসের আরব আমিরাতগামী ফ্লাইটেও আঘাত হানে পাখি।

বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৃথক দুটি উড়োজাহাজে পাখি আঘাত হানে। এতে বিমানের লন্ডনগামী অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের যাত্রা ব্যাহত হয়; ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়ে এসে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামার সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের (বিজি ৪৪৯১/৪৯২) বিমানটির সামনের অংশ পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তবে ত্রুটি সারিয়ে ৭৩ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিতরে ডোবা
শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিতরে ডোবা

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ম্যানেজার বাহাউদ্দিন জাকারিয়া জানান, ফ্লাইটটি (বিজি ৪৪৯১/৪৯২) ৭১ জন যাত্রী নিয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের পথে বিমানবন্দর সীমানার বাইরে বার্ড হিটের কবলে পড়ে। এতে বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ত্রুটি সারাতে গিয়ে সময় নেওয়া হয়। তবে ত্রুটি সারিয়ে চার ঘণ্টা পর বিমানটি ৭৩ জন যাত্রী নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

পাখির আঘাত নিয়ে শুধু যাত্রীরাই নন, আতঙ্কে থাকেন পাইলটরাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পাইলট তাদের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর কাজে নিয়োজিত কর্মীদের দক্ষতায় ঘাটতি আছে। এতে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে, তার জবাবদিহি নেই। তাদের কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণ করা হয় না। এ কারণে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের সময় তারা পাখি আতঙ্কে থাকেন। তবে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ নিরাপদ রাখতে আমরা পাখি তাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এ জন্য আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। অ্যাক্টিভ বার্ড কন্ট্রোলের জন্য ছুটির দিনসহ সব সময় পাখি তাড়াতে আমাদের সিভিল এভিয়েশনের বার্ডশ্যুটার এবং বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া প্যাসিভ বার্ড কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে পরোক্ষ ডিভাইস যেমন-ক্যামেরার মাধ্যমে ডিটেকশন, সাউন্ড ডিটেকশন, সাউন্ড রিপেলিং, লেজার গান, ইরিটেটেড ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবস্থা আছে বিমানবন্দরে।’

দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে পাখির উৎসর জরিপ করা হচ্ছে বলে জানান মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরটি শহরের মাঝখানে হওয়ায় আমাদের যে পাখির উৎসগুলো আছে সেগুলো স্থানান্তর করাই চ্যালেঞ্জ। এ জন্য আমরা এক বছর মেয়াদি একটি বিস্তারিত জরিপ করছি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশে পাখির যেসব উৎসগুলো আছে সেগুলো অন্যদিকে কীভাবে ডাইভার্ট করা যায় সেই চেষ্টা আমরা করছি। এমনকি কোথায় কোথায় পাখির খাবারের উৎস, ওয়াটার বডি, মাছ, ডোবা-নালা আছে, বুচার শপ, ডাস্টবিন, রেস্টুরেন্ট আছে, সেগুলোও দেখা হচ্ছে। এসব উন্মুক্ত খাবারের উৎস পাখিদের আকৃষ্ট করে। এরপর আমরা পাখি বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নেব। আমাদের উদ্দেশ্য পাখিকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে অন্যত্র ডাইভার্ট করা।’

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রবিবার ১৮১ জন যাত্রী নিয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশটির স্থানীয় অগ্নিনির্বাপণ সংস্থার প্রধান লি জিয়ং হিউন বলেছেন, পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগা ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে পাখির ধাক্কার কথা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানিয়েছিলেন পাইলট।