বান্দরবানে তিন মাসে ৪৯ জন অপহরণ | Bangla Affairs
০৬:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আতঙ্কে স্থানীয়রা

বান্দরবানে তিন মাসে ৪৯ জন অপহরণ

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান
  • সময় ০৫:০৮:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • / 23

বান্দরবানে তিন মাসে ৪৯ জন অপহরণ

গত তিনমাস ধরে বান্দরবানের লামায় বেড়েছে অপহরণের সংখ্যা। মাথা গজিয়ে উঠা নামমাত্র পাহাড়ে সংগঠনের নামে তকমা লাগিয়ে দিনে কিংবা রাতে চলে অপহরণের কর্মকান্ড। এই অপহরণ করা হচ্ছে অর্থ বিনিময়ে। মোটা অংকে টাকা দিলে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। তাদের প্রধান টার্গেট হিসেবে রাখে অর্থ প্রভাবশালীদের। তবে বেশীর ভাগই অপহরণে শিকার হচ্ছে শ্রমিকেরা। ফলে লামা উপজেলা সাধারণ মানুষদের মাঝে বড় ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সংগঠনটি কোন আঞ্চলিক পরিষদ সংগঠন নয়। এটি একটি বিচ্ছিন্ন অর্থ আদায়ের সংগঠন। এই সংগঠনের মূল টার্গেট হল অর্থ আদায়। টাকার জন্য তারা যে কাউকে অপহরণের পর পরিবার কিংবা মালিকের পক্ষ থেকে বড় অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা পেলে অপহরণকারীদের ছেড়ে দেয় আর না পেলে চলে নির্মমভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতন। এসব সশস্ত্র সংগঠন টংকাবতী ও সরই ইউনিয়নের লুলাইং এলাকায় অবস্থান করে থাকে। তবে মাথা গজিয়ে উঠা এই সশস্ত্র হাতে এখনো পর্যন্ত অপহরণে পর কারো কোন মৃত্যু ঘটনা ঘটেনি। অপহৃতরা মুক্তিপণ দিয়ে অথবা না দিয়ে ছাড়া পেলেও এই সংগঠনের এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। এতে করে আরো অপহরণের শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।

গত তিনমাসে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন ও সদর উপজেলা সুয়ালক ইউনিয়নের ৪৯ জন অপহরণে শিকার হয়েছে। গেল বছরে ১৭ জুলাই সুয়ালক ইউনিয়নে গনেশ পাড়া এলাকায় একটি রিসোর্টের মালিক ১ জন, চলতি বছরে ১৪ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় মোট ১৪ জন রাবার শ্রমিক অপহরণের শিকার হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ২৬ জন রাবার শ্রমিক ও সবশেষ ৮ এপ্রিল সরই ইউনিয়নে খামারবাড়ি থেকে ৮ জন অপহরণ করে মাথা গজিয়ে উঠা সশস্ত্র সংগঠনটি। এসব অপহরণে শিকার হওয়া শ্রমিকদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে মুক্তিপণে পর ছেড়ে দিয়েছে সশস্ত্র সংগঠনটি। তবে এখনো পর্যন্ত হত্যা কিংবা গুম ঘটনা ঘটেনি।

এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, লামা উপজেলার সরই ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন থেকে বেশীর ভাগই রাবার শ্রমিক অপহরণের শিকার হচ্ছে। অপহরণের পর চলে মুক্তিপণের বানিজ্য। বর্তমানে সেসব দুর্গম এলাকায় এখন বড় আতঙ্কের নাম অপহরণ ও মুক্তিপণের বানিজ্য। কে, কখন, কবে অপহরণের শিকার হয় সে চিন্তায় আতঙ্ক ভর করে থাকে এলাকাবাসীরা। দিনের পর দিন এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ঘটনা বেড়ে চললেও কোনো স্থায়ী সমাধান পাচ্ছে না তারা। একের পর এক অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ানো পাশাপাশি ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। তাছাড়া এই অপহরণ যেন আরো সামনে দিনগুলোতে দিন দিন বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

বান্দরবানে তিন মাসে ৪৯ জন অপহরণ
বান্দরবানে তিন মাসে ৪৯ জন অপহরণ

লামা সরইয়ের লুলাইং ও লেমুপালং এলাকাগুলো অত্যন্ত দুর্গম। কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। বনাঞ্চল ও দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে কিছু স্থানীয় সন্ত্রাসী অপহরণ–বাণিজ্য করে আসছে। তবে বেশীর ভাগ অপহরণে শিকার হয় রাবার শ্রমিক ও তামাক চাষীরা। রাতে এসে চাঁদা না দিলে অপহরণ করে নিয়ে তাদের। এসব মাথা গজিয়ে উঠা এই সশস্ত্র সংগঠনটি অপহরণে পর লেনদেন করে বিকাশে মাধ্যমে। এছাড়াও অপহরণকারীরা পরিবারে কাছে মুঠোফোনে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবী করে। তাদের ব্যবহৃত সিম রয়েছে অনেকগুলো। প্রতি ঘন্টায় নতুন নতুন নাম্বার থেকে কল দিয়ে চাঁদা দাবি করে। কখনো নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ব্যবহার করে আঞ্চলিক সংগঠনের নাম। এতে ভুক্তভোগী পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মুক্তির আশায় তাদের বিকাশে অর্থ পাঠিয়ে দিলে অপকারীদের ছেড়ে দিয়ে যায় অন্যস্থানে। এসব মাথা গজিয়ে উঠা সশস্ত্র সংগঠনকে দমাতে না আগামীতেও বড় ধরনে ঘটনা আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

সরই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ইদ্রিছ কোম্পানী বলেন, অপহরণকারীরা কোন আঞ্চলিক সংগঠন নয় তারা অর্থ কামানো সংগঠন। তাদের মূল লক্ষ্যে হল মুক্তিপনের মাধ্যমে টাকা নেয়া। রাতেরবেলা এসে অপহরণ করে নিয়ে যায় আর টাকা বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এখনো পর্যন্ত এলাকাবাসীরা আতঙ্কে মধ্যে রয়েছে।

লামা রাবার প্রজেক্টের ডিরেক্টর মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, সশস্ত্র সংগঠটি বেশীর ভাগ অবস্থান করে লুলাইং ও টংকাবতী মধ্যস্থানে। এ পর্যন্ত যেসব রাবার শ্রমিক অপহরণ হয়েছে তাদের মুক্তিপণ হিসেবে ১৮ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। তবে বেশীর ভাগই বিকাশে মাধ্যমে লেনদেন হয়। তারা আঞ্চলিক সংগঠনের নাম বিক্রি করে প্রায় সময়।

বান্দরবান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম (ক্রাইম এন্ড অপস) বলেন, প্রায় সময় লামা সরই এলাকায় অপহরণ ঘটনা ঘটছে। মুক্তিপণের মাধ্যমে আবার ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। কে বা কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত অপহরণকারী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এসব সশস্ত্র অস্ত্রধারীদের আইনে আওতায় আনতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

আতঙ্কে স্থানীয়রা

বান্দরবানে তিন মাসে ৪৯ জন অপহরণ

সময় ০৫:০৮:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

গত তিনমাস ধরে বান্দরবানের লামায় বেড়েছে অপহরণের সংখ্যা। মাথা গজিয়ে উঠা নামমাত্র পাহাড়ে সংগঠনের নামে তকমা লাগিয়ে দিনে কিংবা রাতে চলে অপহরণের কর্মকান্ড। এই অপহরণ করা হচ্ছে অর্থ বিনিময়ে। মোটা অংকে টাকা দিলে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। তাদের প্রধান টার্গেট হিসেবে রাখে অর্থ প্রভাবশালীদের। তবে বেশীর ভাগই অপহরণে শিকার হচ্ছে শ্রমিকেরা। ফলে লামা উপজেলা সাধারণ মানুষদের মাঝে বড় ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সংগঠনটি কোন আঞ্চলিক পরিষদ সংগঠন নয়। এটি একটি বিচ্ছিন্ন অর্থ আদায়ের সংগঠন। এই সংগঠনের মূল টার্গেট হল অর্থ আদায়। টাকার জন্য তারা যে কাউকে অপহরণের পর পরিবার কিংবা মালিকের পক্ষ থেকে বড় অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা পেলে অপহরণকারীদের ছেড়ে দেয় আর না পেলে চলে নির্মমভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতন। এসব সশস্ত্র সংগঠন টংকাবতী ও সরই ইউনিয়নের লুলাইং এলাকায় অবস্থান করে থাকে। তবে মাথা গজিয়ে উঠা এই সশস্ত্র হাতে এখনো পর্যন্ত অপহরণে পর কারো কোন মৃত্যু ঘটনা ঘটেনি। অপহৃতরা মুক্তিপণ দিয়ে অথবা না দিয়ে ছাড়া পেলেও এই সংগঠনের এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। এতে করে আরো অপহরণের শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।

গত তিনমাসে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন ও সদর উপজেলা সুয়ালক ইউনিয়নের ৪৯ জন অপহরণে শিকার হয়েছে। গেল বছরে ১৭ জুলাই সুয়ালক ইউনিয়নে গনেশ পাড়া এলাকায় একটি রিসোর্টের মালিক ১ জন, চলতি বছরে ১৪ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় মোট ১৪ জন রাবার শ্রমিক অপহরণের শিকার হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ২৬ জন রাবার শ্রমিক ও সবশেষ ৮ এপ্রিল সরই ইউনিয়নে খামারবাড়ি থেকে ৮ জন অপহরণ করে মাথা গজিয়ে উঠা সশস্ত্র সংগঠনটি। এসব অপহরণে শিকার হওয়া শ্রমিকদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে মুক্তিপণে পর ছেড়ে দিয়েছে সশস্ত্র সংগঠনটি। তবে এখনো পর্যন্ত হত্যা কিংবা গুম ঘটনা ঘটেনি।

এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, লামা উপজেলার সরই ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন থেকে বেশীর ভাগই রাবার শ্রমিক অপহরণের শিকার হচ্ছে। অপহরণের পর চলে মুক্তিপণের বানিজ্য। বর্তমানে সেসব দুর্গম এলাকায় এখন বড় আতঙ্কের নাম অপহরণ ও মুক্তিপণের বানিজ্য। কে, কখন, কবে অপহরণের শিকার হয় সে চিন্তায় আতঙ্ক ভর করে থাকে এলাকাবাসীরা। দিনের পর দিন এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ঘটনা বেড়ে চললেও কোনো স্থায়ী সমাধান পাচ্ছে না তারা। একের পর এক অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ানো পাশাপাশি ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। তাছাড়া এই অপহরণ যেন আরো সামনে দিনগুলোতে দিন দিন বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

বান্দরবানে তিন মাসে ৪৯ জন অপহরণ
বান্দরবানে তিন মাসে ৪৯ জন অপহরণ

লামা সরইয়ের লুলাইং ও লেমুপালং এলাকাগুলো অত্যন্ত দুর্গম। কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। বনাঞ্চল ও দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে কিছু স্থানীয় সন্ত্রাসী অপহরণ–বাণিজ্য করে আসছে। তবে বেশীর ভাগ অপহরণে শিকার হয় রাবার শ্রমিক ও তামাক চাষীরা। রাতে এসে চাঁদা না দিলে অপহরণ করে নিয়ে তাদের। এসব মাথা গজিয়ে উঠা এই সশস্ত্র সংগঠনটি অপহরণে পর লেনদেন করে বিকাশে মাধ্যমে। এছাড়াও অপহরণকারীরা পরিবারে কাছে মুঠোফোনে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবী করে। তাদের ব্যবহৃত সিম রয়েছে অনেকগুলো। প্রতি ঘন্টায় নতুন নতুন নাম্বার থেকে কল দিয়ে চাঁদা দাবি করে। কখনো নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ব্যবহার করে আঞ্চলিক সংগঠনের নাম। এতে ভুক্তভোগী পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মুক্তির আশায় তাদের বিকাশে অর্থ পাঠিয়ে দিলে অপকারীদের ছেড়ে দিয়ে যায় অন্যস্থানে। এসব মাথা গজিয়ে উঠা সশস্ত্র সংগঠনকে দমাতে না আগামীতেও বড় ধরনে ঘটনা আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

সরই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ইদ্রিছ কোম্পানী বলেন, অপহরণকারীরা কোন আঞ্চলিক সংগঠন নয় তারা অর্থ কামানো সংগঠন। তাদের মূল লক্ষ্যে হল মুক্তিপনের মাধ্যমে টাকা নেয়া। রাতেরবেলা এসে অপহরণ করে নিয়ে যায় আর টাকা বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এখনো পর্যন্ত এলাকাবাসীরা আতঙ্কে মধ্যে রয়েছে।

লামা রাবার প্রজেক্টের ডিরেক্টর মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, সশস্ত্র সংগঠটি বেশীর ভাগ অবস্থান করে লুলাইং ও টংকাবতী মধ্যস্থানে। এ পর্যন্ত যেসব রাবার শ্রমিক অপহরণ হয়েছে তাদের মুক্তিপণ হিসেবে ১৮ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। তবে বেশীর ভাগই বিকাশে মাধ্যমে লেনদেন হয়। তারা আঞ্চলিক সংগঠনের নাম বিক্রি করে প্রায় সময়।

বান্দরবান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম (ক্রাইম এন্ড অপস) বলেন, প্রায় সময় লামা সরই এলাকায় অপহরণ ঘটনা ঘটছে। মুক্তিপণের মাধ্যমে আবার ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। কে বা কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত অপহরণকারী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এসব সশস্ত্র অস্ত্রধারীদের আইনে আওতায় আনতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।