ঢাকা ০৭:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লিখেছেন ৫ শতাধিক গান

নিভৃতে পড়ে আছেন বাংলা গানের এক অক্লান্ত সাধক

আবদুল্লাহ আল নোমান, গৌরনদী (বরিশাল)
  • সময় ০৫:৩৩:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 32

সংগীত সাধক ফিরোজ আল মামুন

সংগীত সাংবাদিক ফিরোজ আল মামুন প্রচার বিমূক একজন সাদা মনের মানুষ। একাধারে তিনি শিল্পী সুরকার ও গীতিকার। লিখেছেন পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন গান। ভক্তিমূলক, কৃষি, প্রকৃতি, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং স্বদেশ প্রেমই তাঁর গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য বিষয়। শত কর্মব্যস্ততার ফাঁকেই চলে তার গানের ভুবনের পথচলা। গানের মাঝেই ডুবে থাকতে চান তিনি। লিখে যেতে চান মানুষের জন্য, দেশের সংস্কৃতির জন্য। লিখেছেন এবং গেয়েছেন নিজের লেখা তিনশরও বেশী শ্রোতাপ্রিয় গান।

তিনি বাংলা গানকে ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্ব দরবারে। প্রেম-বিরহের সঙ্গে শব্দের মিলনে তুলে এনেছেন মানবতা ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা। এজন্যই তিনি তার সংগীতচর্চাকে সংগীত সাংবাদিকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি একজন লালন গবেষক, লালন একাডেমির আজীবন সদস্য এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত শিল্পী।

দুরন্ত কৈশোর
১৯৬৬ সালের ৭ ডিসেম্বর বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত চেংগুটিয়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন ফিরোজ আল মামুন। তার পিতার নাম মরহুম কাঞ্চন আলী তালুকদার, মাতার নাম মরহুমা জাহানারা বেগম। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি (ফিরোজ আল মামুন) এক মাত্র ভাই। গ্রামের অন্য কিশোরদের মতো ফিরোজ আল মামুন ছিলেন এক দুরন্ত বালক। খেলাধূলা আর বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করেই কাটত সারাদিন। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় পিতার ব্যবসায়িক কাজে সহযোগি হওয়ার মাধ্যমে মাত্র ৬ বছর বয়সেই সংসারের দায়িত্বশীলদের একজন হতে হয়।

ছেলেবেলা থেকেই কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়ে জীবনের গল্প শুরু তার। মায়ের অদম্য চেষ্টায় স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে চাঁদশি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন এবং সরকারি গৌরনদী কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাশ করেন। কৈশোর আর যৌবনের শত আবদার চোখের জলে মুছে নতুন করে এগিয়ে চলার স্বপ্নে শুরু করেন জীবনের পথচলা।

সংগীত সাংবাদিক ফিরোজ আল মামুন
বিশাল বাংলার শুন্য রেখা থেকে উঠে আসা বাস্তব জীবনের উপমায় উপমিত একজন গীতিকবি তিনি। উদর জ¦ালায় বাংলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে বিরামহীন ছুটে চলার মাঝেও কলমের আঁচড়ে সৃষ্টি করেছেন হাজারও মানুষের মনের সুর আর ছন্দ। যার সৃষ্ট অন্তমিলে সুর বসিয়ে গাইতে চান অনেক সংগীত তারকারাও।

গীতিকবিকে নিয়ে বাড়িয়ে বলার কিছু নেই। কারণ শত প্রতিঘাতেও নিজের যোগ্যতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি, লিখেছেন পাচশরও বেশী শ্রোতাপ্রিয় গান। তার গানের শব্দ চয়ন ও সুর ব্যতিক্রমী এবং নতুনত্বে ভরা। তার মতে দেশের ভান্ডারে অসংখ্য ভালো গান থাকলেও যথাযথ পরিচর্জা না থাকায় সংগীতাঙ্গনে একটা বড় শুন্যতা দেখা দিয়েছে। এ জন্যই ফিরোজ আল মামুন সংবাদপত্রের মত কথা ও সুরের সাধ্যমে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র জগতে একটি পৃথক সত্ত্বা তৈরি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গানের খাতায় হাতেখড়ি
ফিরোজ আল মামুন এর মা একজন কোরানের হাফেজা ছিলেন। যে কারনে ছোটবেলা থেকেই ফিরোজ আল মামুন ধর্মীয় গান গজল কোরানতেলওয়াত করতেন। এ থেকেই তার সংগীত জগতের প্রতি প্রবল আগ্রহ বেড়ে যায়। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়াশুনা করা অবস্থায় তার গ্রামের প্রখ্যাত বাউল সামচুল আলম বয়াতীর কাছের মানুষ হয়ে যান তিনি।

পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে শুরু হয় রাতের বেলা সংগীত আসরে যাওয়া আসা। ফিরোজ আল মামুন বলেন, আমার গুনী ওস্তাদ সামচুল আলম ছিলেন একজন উদাস বাউল যিনি দোতারা দিয়ে সুমধুর কন্ঠে মারফতি, মুর্শীদিসহ অধ্যাতিক গান গাইতেন। সেই গানের আসরে (ফিরোজ আল মামুন) সিলবারের গামলায় পয়সা দিয়ে তাল বাজীয়ে সংগীত আসরে সহযোগিতা করতাম। এ ভাবেই তার জীবনে সংগীতের শুরু।

জীবনযুদ্ধে সুর ছন্দ
যদিও ছাত্র জীবনে অনেক চড়াই উতরাই পারিদিয়ে জীবনযুদ্ব চালিয়ে যেতে হয়েছে। বিএ পাশ করার পরে একটি এনজিওতে চাকুরির সুবাদে ভোলা, যশোর, কুষ্ঠিয়া, নওগা, লক্ষীপুর, রাজবারীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করেন এবং এই সময়টিতে তিনি সংগীতজ্ঞ, গুনী বোদ্ধা ওস্তাদদের সাথে সংঙ্গ করেন এবং লালন গীতির উপর প্রচুর বইপুস্তক পড়ে সংগীতের তালিম ও জ্ঞান অর্জন করেন। প্রখ্যাত বাঊল খোদা বক্সের শিশ্য ফকির আজমল বিশ্বাস এর কাছে তিনি লালন গীতির উপর তালিম নেন এবং তিনিই তার সংগীত গুরু।

গানের খাতা
গানের খাতায় কোনো নির্দিষ্ট গন্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেননি ফিরোজ আল মামুন। প্রেম-বিরহের সঙ্গে শব্দের মিলনে তুলে এনেছেন মানবতা ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা। সুরের ছন্দে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বাংলাদেশের যুবসমাজকে। তার গানের শব্দ চয়ন ও সুর ব্যতিক্রমী এবং নতুনত্বে ভরা। তিনি ফুটপাত, পতিতা, বস্তি, টোকাইসহ সমাজের অবহেলিত মানুষদের নিয়ে গান লিখেছেন গেয়েছেন। অসংখ্য ভক্তিমূলক ধর্মীয় গানও তিনি লিখেছেন এবং গেয়েছেন।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসি ফিরোজ আল মামুন হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি নিয়ে অনেক গান লিখেছেন সুর করেছেন। তার দর্শন নিরপেক্ষ, সত্য ও সর্বজন স্বীকৃত নীতিতে বিশ্বাস করা। সে আলোকেই তিনি গনমানুষের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার চিত্র সুর আর ছন্দের মাধ্যমে তুলে ধরছেন দীর্ঘদিন থেকে।

অবিরাম চলছে সুর ছন্দের কলম
নিত্য দিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে সুর ছন্দের কলম চলছে অবিরাম। তার লেখা গান হয়েছে শ্রোতাপ্রিয়। বিভিন্ন গানের শ্রোতা ভিন্ন। তারপরও অনেক গান সবার কাছে পেয়েছে গ্রহযোগ্যতা। জীবনের সেরা গানগুলোর মধ্যে জীবনের যন্ত্রনা, সন্ধা বেলা ওই ভাংগা ঘড়ে কাহারা যেন চিতকার করে- তার স্ব কন্ঠে গাওয়া একটি জীবমূখি সংগীত।

বাসন হাতে আসন পেতে আমার মায়ের মত দেখতে ওই না ফুটপথে- গানটি গেয়েছেন মমতাজ। বাঊল আমি বাংলারই সন্তান বাংলা আমার মূখের ভাষা গো- গেয়েছেন লাল মিয়া বয়াতি। গরীবে নেওয়াজ খাজা হিন্দেরী অলি- গেয়েছেন শিল্পী শরিফ উদ্দিন। মোহাম্মাদী ফূল আশেকে রাসুল- গেয়েছেন সেফালি সরকার। আইছে জামাই সাহেব হইয়া, নতুন একখান গারী লইয়া- গেয়েছেন শিল্পী মুন। কারো মনে লাগুক ব্যথা বলব না তা- হতে পারে কারো মনের গোপন কথা- গানটি গেয়েছেন-মাখন। এ ছাড়াও তিনি ভক্তিমুলক গান খাজার দরবার শিরোনামের গানগুলি কন্ঠশিল্পী শরিফ উদ্দিন গেয়েছেন। বাংলার বাউল শিরোনামের গানগুলো লাল মিয়া বয়াতি গেয়েছেন। লিপি সরকার গেয়েছেন বিদেশী নাগর শিরোনামের গানগুলো।

শিশুদের জন্য তার অডিও এ্যালভাম স্বরবর্ণ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ততকালিন সময়ে। তিনি বলেন শিশুদের জন্য লেখা গানগুলোর মাধ্যমে শিক্ষা উদ্দিপনা ও উতসাহে শিশুরা পড়ালেখা শিখবে। ১৯৯৭ সালে সরকারের উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজনে চেতনা শীর্ষক শিরোনামে তার লেখা ও সুর করা ৫টি গান শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়মিত শিক্ষা সম্প্রসারনের লক্ষে প্রচার করেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক গান লিখেছেন। লিখেছেন লালন ফকিরকে নিয়ে। ঢাকা শহর নিয়ে লিখেছেন। তার অবেগঘন ছন্দ ও সুরের গান সন্ধাবেলায় ওই ভাংগা ঘরে…অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পাচশরও বেশী গান লিখেছেন, এর মধ্যে তিনশ গানে নিজে সুর করেছেন নিজে গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছেন।

জীবনের শেষ বাকে
বর্তমানে নরসিংদ্দি এলাকায় একটি চক্ষু হাসপাতালে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন ফিরোজ আল মামুন। গানের জীবনে তিনি অর্জন করেছেন অগণিত মানুষের ভালোবাসা। শত কর্মব্যস্ততার মাঝেই চলে তার গানের ভুবনের পথচলা। গানের মাঝেই ডুবে থাকতে চান তিনি। লিখে যেতে চান মানুষের জন্য। দেশের সংস্কৃতির জন্য। বাংলা গানকে ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্ব দরবারে। মানুষের মনের মধ্যে পরম ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে চান যুগের পর যুগ। এই প্রত্যাশাই করেছেন ফিরোজ আল মামুন।

সংগীত জীবনে আপনার ভাবনা কি এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনত বয়স হয়েছে চাকুরি জীবন ছেড়ে অবসরে যাওয়ার পালা। তবে নিজ জন্মস্থানে এবং পৈত্রিক ভিটায় একটি বয়স্ক ও শিশুদের জন্য আশ্রম করার চেষ্টা করছি। মৃতুর আগ পর্যন্ত সংগীত সাংবাদিকতার মাধ্যমে ছন্দ আর সুরের মুর্”ছনায় দেশজাতিকে সচেতন ও জাগাবার চেষ্টা করব।

শেয়ার করুন

লিখেছেন ৫ শতাধিক গান

নিভৃতে পড়ে আছেন বাংলা গানের এক অক্লান্ত সাধক

সময় ০৫:৩৩:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

সংগীত সাংবাদিক ফিরোজ আল মামুন প্রচার বিমূক একজন সাদা মনের মানুষ। একাধারে তিনি শিল্পী সুরকার ও গীতিকার। লিখেছেন পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন গান। ভক্তিমূলক, কৃষি, প্রকৃতি, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং স্বদেশ প্রেমই তাঁর গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য বিষয়। শত কর্মব্যস্ততার ফাঁকেই চলে তার গানের ভুবনের পথচলা। গানের মাঝেই ডুবে থাকতে চান তিনি। লিখে যেতে চান মানুষের জন্য, দেশের সংস্কৃতির জন্য। লিখেছেন এবং গেয়েছেন নিজের লেখা তিনশরও বেশী শ্রোতাপ্রিয় গান।

তিনি বাংলা গানকে ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্ব দরবারে। প্রেম-বিরহের সঙ্গে শব্দের মিলনে তুলে এনেছেন মানবতা ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা। এজন্যই তিনি তার সংগীতচর্চাকে সংগীত সাংবাদিকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি একজন লালন গবেষক, লালন একাডেমির আজীবন সদস্য এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত শিল্পী।

দুরন্ত কৈশোর
১৯৬৬ সালের ৭ ডিসেম্বর বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত চেংগুটিয়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন ফিরোজ আল মামুন। তার পিতার নাম মরহুম কাঞ্চন আলী তালুকদার, মাতার নাম মরহুমা জাহানারা বেগম। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি (ফিরোজ আল মামুন) এক মাত্র ভাই। গ্রামের অন্য কিশোরদের মতো ফিরোজ আল মামুন ছিলেন এক দুরন্ত বালক। খেলাধূলা আর বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করেই কাটত সারাদিন। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় পিতার ব্যবসায়িক কাজে সহযোগি হওয়ার মাধ্যমে মাত্র ৬ বছর বয়সেই সংসারের দায়িত্বশীলদের একজন হতে হয়।

ছেলেবেলা থেকেই কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়ে জীবনের গল্প শুরু তার। মায়ের অদম্য চেষ্টায় স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে চাঁদশি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন এবং সরকারি গৌরনদী কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাশ করেন। কৈশোর আর যৌবনের শত আবদার চোখের জলে মুছে নতুন করে এগিয়ে চলার স্বপ্নে শুরু করেন জীবনের পথচলা।

সংগীত সাংবাদিক ফিরোজ আল মামুন
বিশাল বাংলার শুন্য রেখা থেকে উঠে আসা বাস্তব জীবনের উপমায় উপমিত একজন গীতিকবি তিনি। উদর জ¦ালায় বাংলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে বিরামহীন ছুটে চলার মাঝেও কলমের আঁচড়ে সৃষ্টি করেছেন হাজারও মানুষের মনের সুর আর ছন্দ। যার সৃষ্ট অন্তমিলে সুর বসিয়ে গাইতে চান অনেক সংগীত তারকারাও।

গীতিকবিকে নিয়ে বাড়িয়ে বলার কিছু নেই। কারণ শত প্রতিঘাতেও নিজের যোগ্যতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি, লিখেছেন পাচশরও বেশী শ্রোতাপ্রিয় গান। তার গানের শব্দ চয়ন ও সুর ব্যতিক্রমী এবং নতুনত্বে ভরা। তার মতে দেশের ভান্ডারে অসংখ্য ভালো গান থাকলেও যথাযথ পরিচর্জা না থাকায় সংগীতাঙ্গনে একটা বড় শুন্যতা দেখা দিয়েছে। এ জন্যই ফিরোজ আল মামুন সংবাদপত্রের মত কথা ও সুরের সাধ্যমে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র জগতে একটি পৃথক সত্ত্বা তৈরি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গানের খাতায় হাতেখড়ি
ফিরোজ আল মামুন এর মা একজন কোরানের হাফেজা ছিলেন। যে কারনে ছোটবেলা থেকেই ফিরোজ আল মামুন ধর্মীয় গান গজল কোরানতেলওয়াত করতেন। এ থেকেই তার সংগীত জগতের প্রতি প্রবল আগ্রহ বেড়ে যায়। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়াশুনা করা অবস্থায় তার গ্রামের প্রখ্যাত বাউল সামচুল আলম বয়াতীর কাছের মানুষ হয়ে যান তিনি।

পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে শুরু হয় রাতের বেলা সংগীত আসরে যাওয়া আসা। ফিরোজ আল মামুন বলেন, আমার গুনী ওস্তাদ সামচুল আলম ছিলেন একজন উদাস বাউল যিনি দোতারা দিয়ে সুমধুর কন্ঠে মারফতি, মুর্শীদিসহ অধ্যাতিক গান গাইতেন। সেই গানের আসরে (ফিরোজ আল মামুন) সিলবারের গামলায় পয়সা দিয়ে তাল বাজীয়ে সংগীত আসরে সহযোগিতা করতাম। এ ভাবেই তার জীবনে সংগীতের শুরু।

জীবনযুদ্ধে সুর ছন্দ
যদিও ছাত্র জীবনে অনেক চড়াই উতরাই পারিদিয়ে জীবনযুদ্ব চালিয়ে যেতে হয়েছে। বিএ পাশ করার পরে একটি এনজিওতে চাকুরির সুবাদে ভোলা, যশোর, কুষ্ঠিয়া, নওগা, লক্ষীপুর, রাজবারীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করেন এবং এই সময়টিতে তিনি সংগীতজ্ঞ, গুনী বোদ্ধা ওস্তাদদের সাথে সংঙ্গ করেন এবং লালন গীতির উপর প্রচুর বইপুস্তক পড়ে সংগীতের তালিম ও জ্ঞান অর্জন করেন। প্রখ্যাত বাঊল খোদা বক্সের শিশ্য ফকির আজমল বিশ্বাস এর কাছে তিনি লালন গীতির উপর তালিম নেন এবং তিনিই তার সংগীত গুরু।

গানের খাতা
গানের খাতায় কোনো নির্দিষ্ট গন্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেননি ফিরোজ আল মামুন। প্রেম-বিরহের সঙ্গে শব্দের মিলনে তুলে এনেছেন মানবতা ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা। সুরের ছন্দে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বাংলাদেশের যুবসমাজকে। তার গানের শব্দ চয়ন ও সুর ব্যতিক্রমী এবং নতুনত্বে ভরা। তিনি ফুটপাত, পতিতা, বস্তি, টোকাইসহ সমাজের অবহেলিত মানুষদের নিয়ে গান লিখেছেন গেয়েছেন। অসংখ্য ভক্তিমূলক ধর্মীয় গানও তিনি লিখেছেন এবং গেয়েছেন।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসি ফিরোজ আল মামুন হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি নিয়ে অনেক গান লিখেছেন সুর করেছেন। তার দর্শন নিরপেক্ষ, সত্য ও সর্বজন স্বীকৃত নীতিতে বিশ্বাস করা। সে আলোকেই তিনি গনমানুষের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার চিত্র সুর আর ছন্দের মাধ্যমে তুলে ধরছেন দীর্ঘদিন থেকে।

অবিরাম চলছে সুর ছন্দের কলম
নিত্য দিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে সুর ছন্দের কলম চলছে অবিরাম। তার লেখা গান হয়েছে শ্রোতাপ্রিয়। বিভিন্ন গানের শ্রোতা ভিন্ন। তারপরও অনেক গান সবার কাছে পেয়েছে গ্রহযোগ্যতা। জীবনের সেরা গানগুলোর মধ্যে জীবনের যন্ত্রনা, সন্ধা বেলা ওই ভাংগা ঘড়ে কাহারা যেন চিতকার করে- তার স্ব কন্ঠে গাওয়া একটি জীবমূখি সংগীত।

বাসন হাতে আসন পেতে আমার মায়ের মত দেখতে ওই না ফুটপথে- গানটি গেয়েছেন মমতাজ। বাঊল আমি বাংলারই সন্তান বাংলা আমার মূখের ভাষা গো- গেয়েছেন লাল মিয়া বয়াতি। গরীবে নেওয়াজ খাজা হিন্দেরী অলি- গেয়েছেন শিল্পী শরিফ উদ্দিন। মোহাম্মাদী ফূল আশেকে রাসুল- গেয়েছেন সেফালি সরকার। আইছে জামাই সাহেব হইয়া, নতুন একখান গারী লইয়া- গেয়েছেন শিল্পী মুন। কারো মনে লাগুক ব্যথা বলব না তা- হতে পারে কারো মনের গোপন কথা- গানটি গেয়েছেন-মাখন। এ ছাড়াও তিনি ভক্তিমুলক গান খাজার দরবার শিরোনামের গানগুলি কন্ঠশিল্পী শরিফ উদ্দিন গেয়েছেন। বাংলার বাউল শিরোনামের গানগুলো লাল মিয়া বয়াতি গেয়েছেন। লিপি সরকার গেয়েছেন বিদেশী নাগর শিরোনামের গানগুলো।

শিশুদের জন্য তার অডিও এ্যালভাম স্বরবর্ণ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ততকালিন সময়ে। তিনি বলেন শিশুদের জন্য লেখা গানগুলোর মাধ্যমে শিক্ষা উদ্দিপনা ও উতসাহে শিশুরা পড়ালেখা শিখবে। ১৯৯৭ সালে সরকারের উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজনে চেতনা শীর্ষক শিরোনামে তার লেখা ও সুর করা ৫টি গান শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়মিত শিক্ষা সম্প্রসারনের লক্ষে প্রচার করেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক গান লিখেছেন। লিখেছেন লালন ফকিরকে নিয়ে। ঢাকা শহর নিয়ে লিখেছেন। তার অবেগঘন ছন্দ ও সুরের গান সন্ধাবেলায় ওই ভাংগা ঘরে…অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পাচশরও বেশী গান লিখেছেন, এর মধ্যে তিনশ গানে নিজে সুর করেছেন নিজে গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছেন।

জীবনের শেষ বাকে
বর্তমানে নরসিংদ্দি এলাকায় একটি চক্ষু হাসপাতালে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন ফিরোজ আল মামুন। গানের জীবনে তিনি অর্জন করেছেন অগণিত মানুষের ভালোবাসা। শত কর্মব্যস্ততার মাঝেই চলে তার গানের ভুবনের পথচলা। গানের মাঝেই ডুবে থাকতে চান তিনি। লিখে যেতে চান মানুষের জন্য। দেশের সংস্কৃতির জন্য। বাংলা গানকে ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্ব দরবারে। মানুষের মনের মধ্যে পরম ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে চান যুগের পর যুগ। এই প্রত্যাশাই করেছেন ফিরোজ আল মামুন।

সংগীত জীবনে আপনার ভাবনা কি এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনত বয়স হয়েছে চাকুরি জীবন ছেড়ে অবসরে যাওয়ার পালা। তবে নিজ জন্মস্থানে এবং পৈত্রিক ভিটায় একটি বয়স্ক ও শিশুদের জন্য আশ্রম করার চেষ্টা করছি। মৃতুর আগ পর্যন্ত সংগীত সাংবাদিকতার মাধ্যমে ছন্দ আর সুরের মুর্”ছনায় দেশজাতিকে সচেতন ও জাগাবার চেষ্টা করব।