ঢাকা ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলার ভেনিস বরিশাল পেয়ারা বাগান

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৬:২৫:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
  • / 255

পৃথিবীজুড়ে ইতালির ভেনিস শহর পরিচিত তার জলপথ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জল কেন্দ্রিক অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারনে। শহরটির এই সৌন্দর্য সারা বিশ্বের মানুষকে মুখরিত করছে। ফলে ভেনিস শহরে সারা বছরই পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে।

শহরটিতে প্রতিদিন সারা বিশ্ব থেকে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক, এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। সেই শহরের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশের একটি জনপদকে প্রাচ্যের ভেনিস বলা হয়।

মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণের জনপদ বরিশালের ভৌগোলিক অবস্থান, জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইতালির ভেনিস শহরের সাথে বরিশালের তুলনা করেছিলেন। তিনি ‘প্রাচ্যের ভেনিস কিংবা বাংলার ভেনিস’ নামে বরিশালকে আখ্যায়িত করেন।

নদী ও খাল অক্ষুন্ন রেখেই ইতালির ভেনিস শহরের উন্নয়ন করা হয়েছে। শহরটিতে রোমান্টিক ও আকর্ষণীয় করেছে সেখানকার নদী ও খাল। এদিকে বরিশাল শহরেও এক সময় ছোট ছোট অসংখ্য নদী-খাল ও পুকুর ছিল। বরিশালের জনপদও নদী, পুকুর ও খাল অক্ষুন্ন রেখেই তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানেও এই শহরে অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি পুকুর ও খাল রয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পলি জমে গড়ে ওঠা কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে বরিশাল। একসময় বরিশাল ‘বাকলা’ ও ‘চন্দ্রদ্বীপ’ নামে পরিচিত ছিল। বরিশালের বর্তমান শহরটি কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, মোগল আমলে স্থাপিত লবণচৌকি গিরদে বন্দরকে কেন্দ্র করে এ শহর গড়ে ওঠে। ১৮০১ সালে বরিশালে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার সদর দপ্তর স্থাপিত হলে, শহর হিসেবে এর ব্যাপক গুরুত্ব বাড়ে।

প্রাচীন বাংলায় সমুদ্র উপক‚লের চন্দ্রদ্বীপের মূলভূখন্ড ও প্রাণকেন্দ্র ছিল বর্তমান বরিশাল জেলা। প্রাচীন এ জনপদটি বলেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী জায়গায়।

ভেনিস শহরের মতো বরিশালেও অন্যান্য বড় বা আধুনিক শহরের মতো পরিবেশ দূষণের হার কম। কেননা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হওয়ায় এখানে বড় তেমন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। যে কারনে বারবার বরিশালের প্রেমে পড়েছেন কবি-সাহিত্যিকরা। কেউ কেউ এই শহরকে রোমান্টিক শহর হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।

বরিশাল শহরের মাঝে রয়েছে বেশ কয়েকটি পুকুর। তার পাশেই ছোট ছোট প্রসাদ। পাঁচ দশক আগেও এসব ছোট ছোট প্রসাদের গা ঘেঁষে এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে ডিঙি নৌকা। প্রায় ৭০ টিরও বেশি ছোট-বড় নদী এবং ৫০টিরও বেশি খাল প্রবাহিত ছিল এই শহরের আশেপাশে। এই খালগুলো স্থানীয় পরিবহণ এবং কৃষির জন্য অপরিহার্য ছিল।

আবার দুই যুগ আগেও এই শহরে আকাশ ঢেকে যায়; এমন কোন স্থাপনা ছিল না। ডিঙি নৌকা, সাইকেল, রিক্সাই ছিল এ শহরের যাতায়াতের ভরসা। যা ভেনিস শহরের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিতো।

পুরো শহরের জায়গায় জায়গায় পুকুরের স্বচ্ছ জলে আকাশের মেঘগুলো ও টিনের ঘরগুলোর প্রতিচ্ছবিগুলো লুটোপুটি খেতো। মূলত এই জনপদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এসব পুকুর এবং সবুজ শ্যামল ভূমির মধ্যে লুকিয়ে ছিলো। এখানকার গ্রামীণ এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়ির পাশে একটি বা একাধিক পুকুর ছিলো, যা মাছ চাষ এবং দৈনন্দিন জীবনের কাজে ব্যবহৃত হতো।

বরিশাল শুধু নদী-খাল ও পুকুরের জন্যই নয়, এখানকার সুস্বাদু পেয়ারা, নারিকেল বাগানের জন্যও বিখ্যাত। বরিশালের পেয়ারা বাগান বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ পেয়ারা উৎপাদন কেন্দ্র। এসব বাগানের মধ্য দিয়ে ছোট ছোট অসংখ্য খাল প্রবাহিত হয়েছে।

বরিশাল শহরের পাশের এলাকাগুলোতে এখনো অসংখ্য বিল রয়েছে। যেখানে লাল শাপলার দোল খাওয়ার দৃশ্য, কবি মনে প্রেমের সঞ্চার করে।

বরিশালও বাংলাদেশের একটি প্রাচীন এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানকার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বরিশালের পরিচয়কে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে। এখানে অনেক প্রাচীন মন্দির, মসজিদ এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপত্যক নিদর্শন রয়েছে। এই মিলগুলোই বরিশালকে ভেনিস শহরের সাথে তুলনীয় করে তোলে।

শেয়ার করুন

বাংলার ভেনিস বরিশাল পেয়ারা বাগান

সময় ০৬:২৫:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

পৃথিবীজুড়ে ইতালির ভেনিস শহর পরিচিত তার জলপথ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জল কেন্দ্রিক অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারনে। শহরটির এই সৌন্দর্য সারা বিশ্বের মানুষকে মুখরিত করছে। ফলে ভেনিস শহরে সারা বছরই পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে।

শহরটিতে প্রতিদিন সারা বিশ্ব থেকে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক, এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। সেই শহরের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশের একটি জনপদকে প্রাচ্যের ভেনিস বলা হয়।

মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণের জনপদ বরিশালের ভৌগোলিক অবস্থান, জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইতালির ভেনিস শহরের সাথে বরিশালের তুলনা করেছিলেন। তিনি ‘প্রাচ্যের ভেনিস কিংবা বাংলার ভেনিস’ নামে বরিশালকে আখ্যায়িত করেন।

নদী ও খাল অক্ষুন্ন রেখেই ইতালির ভেনিস শহরের উন্নয়ন করা হয়েছে। শহরটিতে রোমান্টিক ও আকর্ষণীয় করেছে সেখানকার নদী ও খাল। এদিকে বরিশাল শহরেও এক সময় ছোট ছোট অসংখ্য নদী-খাল ও পুকুর ছিল। বরিশালের জনপদও নদী, পুকুর ও খাল অক্ষুন্ন রেখেই তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানেও এই শহরে অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি পুকুর ও খাল রয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পলি জমে গড়ে ওঠা কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে বরিশাল। একসময় বরিশাল ‘বাকলা’ ও ‘চন্দ্রদ্বীপ’ নামে পরিচিত ছিল। বরিশালের বর্তমান শহরটি কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, মোগল আমলে স্থাপিত লবণচৌকি গিরদে বন্দরকে কেন্দ্র করে এ শহর গড়ে ওঠে। ১৮০১ সালে বরিশালে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার সদর দপ্তর স্থাপিত হলে, শহর হিসেবে এর ব্যাপক গুরুত্ব বাড়ে।

প্রাচীন বাংলায় সমুদ্র উপক‚লের চন্দ্রদ্বীপের মূলভূখন্ড ও প্রাণকেন্দ্র ছিল বর্তমান বরিশাল জেলা। প্রাচীন এ জনপদটি বলেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী জায়গায়।

ভেনিস শহরের মতো বরিশালেও অন্যান্য বড় বা আধুনিক শহরের মতো পরিবেশ দূষণের হার কম। কেননা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হওয়ায় এখানে বড় তেমন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। যে কারনে বারবার বরিশালের প্রেমে পড়েছেন কবি-সাহিত্যিকরা। কেউ কেউ এই শহরকে রোমান্টিক শহর হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।

বরিশাল শহরের মাঝে রয়েছে বেশ কয়েকটি পুকুর। তার পাশেই ছোট ছোট প্রসাদ। পাঁচ দশক আগেও এসব ছোট ছোট প্রসাদের গা ঘেঁষে এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে ডিঙি নৌকা। প্রায় ৭০ টিরও বেশি ছোট-বড় নদী এবং ৫০টিরও বেশি খাল প্রবাহিত ছিল এই শহরের আশেপাশে। এই খালগুলো স্থানীয় পরিবহণ এবং কৃষির জন্য অপরিহার্য ছিল।

আবার দুই যুগ আগেও এই শহরে আকাশ ঢেকে যায়; এমন কোন স্থাপনা ছিল না। ডিঙি নৌকা, সাইকেল, রিক্সাই ছিল এ শহরের যাতায়াতের ভরসা। যা ভেনিস শহরের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিতো।

পুরো শহরের জায়গায় জায়গায় পুকুরের স্বচ্ছ জলে আকাশের মেঘগুলো ও টিনের ঘরগুলোর প্রতিচ্ছবিগুলো লুটোপুটি খেতো। মূলত এই জনপদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এসব পুকুর এবং সবুজ শ্যামল ভূমির মধ্যে লুকিয়ে ছিলো। এখানকার গ্রামীণ এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়ির পাশে একটি বা একাধিক পুকুর ছিলো, যা মাছ চাষ এবং দৈনন্দিন জীবনের কাজে ব্যবহৃত হতো।

বরিশাল শুধু নদী-খাল ও পুকুরের জন্যই নয়, এখানকার সুস্বাদু পেয়ারা, নারিকেল বাগানের জন্যও বিখ্যাত। বরিশালের পেয়ারা বাগান বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ পেয়ারা উৎপাদন কেন্দ্র। এসব বাগানের মধ্য দিয়ে ছোট ছোট অসংখ্য খাল প্রবাহিত হয়েছে।

বরিশাল শহরের পাশের এলাকাগুলোতে এখনো অসংখ্য বিল রয়েছে। যেখানে লাল শাপলার দোল খাওয়ার দৃশ্য, কবি মনে প্রেমের সঞ্চার করে।

বরিশালও বাংলাদেশের একটি প্রাচীন এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানকার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বরিশালের পরিচয়কে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে। এখানে অনেক প্রাচীন মন্দির, মসজিদ এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপত্যক নিদর্শন রয়েছে। এই মিলগুলোই বরিশালকে ভেনিস শহরের সাথে তুলনীয় করে তোলে।