বাংলাদেশ-ভারতে চলছে মমতাওয়াশ!
- সময় ০২:০৩:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 74
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মোতায়েনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব প্রসঙ্গে নানামূখী আলোচনা সমালোচনা চলছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে চলছে মমতাওয়াশ। তাকে নিয়ে কথা বলেছেন অন্তর্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পাশাপাশি কথা বলেছেন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা। ভারতের কংগ্রেস নেতারাও মমতার এই বক্তব্য নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করেছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ওনার দেশেই (ভারত) শান্তিরক্ষী মোতায়েনে প্রয়োজন। সম্ভবত ওনার নিজের দেশের কথা বলতে গিয়ে ভুলে বাংলাদেশের কথা বলে ফেলেছেন। ভারতে কীভাবে সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হচ্ছে, সেটা সবাই দেখেছেন। সেজন্য উনি ওনার দেশের জন্য শান্তিরক্ষী চাইছেন।’
সাবেক এই সেনাকর্মকর্তা আরো বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব কোন ধরনের হুমকির মধ্যে নেই। ভারতীয় মিডিয়া নগণ্যভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। সত্যি ঘটনা প্রকাশ করে এই মিথ্যাচারের জবাব বাংলাদেশের গণমাধ্যম দিতে পারে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘সত্যটা প্রকাশ করে এর প্রতিউত্তর আপনারা দেবেন। আমরা সবাই মিলে এ মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করবো। তাহলেই তাদের মুখে চুনকালি পড়বে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘সীমান্তে বড় ধরনের কোনও উত্তেজনা নেই, অন্যান্য সময়ের মতো একই অবস্থায় বিরাজ করছে।’ ভারতের দিক থেকে কোনও উদ্বেগজনক আশঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনও উদ্বেগজনক আশঙ্কা নেই। তারা বাগযুদ্ধ করে যাচ্ছে।’
একই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেন্দ্র করে শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে মন্তব্য করেছেন তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ‘তার অবস্থানের জন্য সহায়ক হবে না’ বলে মতপ্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্যকে আমরা মমতা ব্যানার্জী ধরনের মন্তব্য হিসাবেই দেখতে চাই, কারণ উনি এই বক্তব্য কেন দিলেন, এটা আমি বুঝতে পারছি না। কলকাতায় আমি দীর্ঘদিন ছিলাম, তার সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা তার জন্য খুব সুষ্ঠু পদক্ষেপ না, রাজনৈতিকভাবে। রাজনৈতিক বিতর্ক সবসময় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা উচিত। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তার অবস্থানের জন্য সহায়ক হবে না। এটা অবশ্য আমার মত।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার যে দাবি জানিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কংগ্রেস নেতা ও সংসদ সদস্য শশী থারুর মমতাকে ছেড়ে কথা বলেননি। শশী বলেছেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের খুব কম ক্ষেত্রেই কোনো দেশে পাঠানো যায়, এটা হয় যখন কোনো দেশের সরকার নিজেই অনুরোধ করে। আমি নিশ্চিত নই যে তিনি (মমতা) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা পুরোপুরি বোঝেন কি না। আমি অনেক বছর ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় কাজ করেছি। আমি বলতে পারি, কোনো দেশের অনুরোধ ছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের খুব কম ক্ষেত্রে ওই দেশে পাঠানো যায়।’
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী প্রসঙ্গে শশী থারুর আরও বলেন, ‘যখন একটি দেশ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে, তখনই শান্তিরক্ষী পাঠানো হয় এবং ওই দেশের সরকারকে অনুরোধ করতে হবে। তবে আমি পুরোপুরি একমত যে সেখানে (বাংলাদেশ) কী ঘটছে, তার ওপর আমাদের নজর রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র পক্ষ থেকেও মমতা ব্যানার্জির এই বক্তব্যের কড়া জবাব দেয়া হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। অবিলম্বে এমন বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে, সে বিষয়ে আমি বক্তব্য না রেখে পারছি না। তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যে উক্তি করেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি একটা হুমকিস্বরূপ এবং আমরা মনে করি, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভারতের নেতাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা কিছুটা হলেও প্রকাশিত হয়েছে।’ তার মতে, এ ধরনের কোনো চিন্তা ভারতের নেতাদের মধ্যে থাকা উচিত হবে না। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে এবং সম্প্রতি একটা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ফিরে পেয়েছে। এ দেশের মানুষ যেকোনো মূল্যে এ ধরনের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা গত সোমবার বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ দাবি করেন।তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব, ভারত সরকার জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠানোর আর্জি জানাক। তারা যাতে আমাদের লোকজনকে বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার করতে পারে।’