বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নতুন ষড়যন্ত্র!
- সময় ০১:০৭:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 34
ভারত একটি আধুনিক আধিপত্য ও হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র। অনেকের মতে, যার পরতে পরতে সাম্প্রদায়িকতার ছাপ স্পষ্ট। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ন্যূনতম সুসম্পর্ক নেই দেশটির। ভারত তার হাজার বছরের পুরনো চানক্যনীতির কারণে বৈরী করে তুলছে প্রতিবেশী দেশগুলোকে। বিশেষ করে বাংলাদেশকে ভারত বরাবরই বিবেচনা করে আসছে আধিপত্যের ক্ষেত্র হিসেবে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতি। হস্তক্ষেপ করেছে নির্বাচন, সরকার, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। নিজ স্বার্থে ভারত বাংলাদেশকে ব্যবহার করে আসছে যোগাযোগের করিডোর হিসেবে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারত এবার শুরু করেছে নতুন ষড়যন্ত্র। মানচিত্র খেঁকো পররাষ্ট্রনীতির কারণে শুধু প্রতিবেশী দেশ নয় ভারতের অপতৎপরতা বিস্তৃতি লাভ করেছে আটলান্টিকের অপর প্রান্তেও। কানাডায় বসবাসকারী একজন শিখ নেতাকে গুপ্ত হত্যার দায়ে ভারতের সাথে দেশটির সম্পর্ক এখন তলানিতে।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশে ভারতের নগ্ন আধিপত্য বিস্তারে পালন করেছে সহায়ক ভূমিকা। তারা ভারতকে এতোটাই সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে যে, ভারত তা কখনোই ভুলতে পারবে না। এমন মন্তব্য করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ ভারত সকল প্রাপ্তির কথা বেমালুম ভুলে গেছে মাত্র কয়েকদিনে। বাংলাদেশে পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেছেন। ভারত নি:শর্ত আশ্রয় মঞ্জুর করেছে গণহত্যাকারী হাসিনার। শুধু তাই নয়, তার অনেক দোসর ভারতকে অভয়ারণ্য মনে করে আশ্রয় নিয়েছে দেশটিতে। হাসিনার অবৈধ সরকারের পতন ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও আশাহত করেছে ভারত সরকারকে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ভারত। তারা এখনো স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পুনর্জন্মের। এসব কারণে শুরু থেকেই অশান্ত করে তুলতে চাইছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। দেশটির অনেকেই পতিত স্বৈরাচারের অনুগতদেরকে উসকে দিচ্ছে নানাভাবে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি গোষ্ঠিকে মাঠে নামিয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে। যারা “বাংলাদেশকে ভাবে মাতৃভূমি, আর ভারতকে স্বদেশ”। তারাই ভারতের ইন্ধনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছে বাংলাদেশে।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রাতিষ্ঠানিক মদদ
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মনগড়া ও ভিত্তিহীন প্রচারে শামিল হয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। রাজ্যসভায় এক বক্তব্যে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে পরিককল্পিত হামলা চালিয়েছে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির উগ্র সদস্যরা। পুড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের পতাকা। তারা হুমকি দিচ্ছে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের। ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমর্থিত। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং শিবসেনার মতো উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংস্থাগুলোই এখন ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায়। এসব সংগঠন সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়িয়ে পার পেয়ে যায় নির্বিঘ্নে। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে অধিক এবং ভয়াবহ দাঙ্গা প্রবণ রাষ্ট্র। ভারতে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কয়েকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালে ভারতের বড় কয়েকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যে ১৯৬১ সালে জবলপুরে, ’৬৯ সালে গুজরাটে, ’৮৪ সালে পাঞ্জাবে শিখ হত্যা, ’৮৯ সালে ভাগলপুরে এবং কাস্মীরে, গুজরাটের গধরায় ট্রেন পুড়িয়ে ২০০২ সালের দাঙ্গা, ২০১৩ সালে মুজাফ্ফর নগর ও ২০২০ সালে দিল্লীর দাঙ্গা অন্যতম। এসব দাঙ্গায় নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। ভারতে অন্যান্য ধর্মের উপসনালয় গুড়িয়ে দিয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মদদে। অস্পৃশ্যতার কারণে নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা দেশটিতে চরমভাবে ঘৃণিত ও বৈষম্যের শিকার। মোট জনসংখ্যা একতৃতীয়াংশ ভারতীয় দারিদ্রসীমার নীচে যাপন করছে মানবেতর জীবন। তারপরও ভারত থেমে নেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির উস্কানি দেয়া থেকে। অপরদিকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যন্য নজির সৃষ্টি করেছে বিশ্বে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ঘটেনি কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের এহেন গভীর ষড়যন্ত্রের সাথে হাত মিলিয়েছে ফেরারি ফ্যাসিস্ট হাসিনা। ভারত, বাংলাদেশ ও তার জনগণ নয় সম্পর্ক রাখতে চায় বিশেষ ব্যক্তি ও দলের সাথে। এসব ঘটনা উপমহাদেশের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইতোমধ্যেই একধরনের অস্থিরতা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে ভারত। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতিভূ বাংলাদেশের জনগণ পা দেয়নি ভারতীয় চক্রান্তের ফাঁদে।
দিল্লীর সংসদ ভবনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র
ভারত সম্প্রতি নতুন করে শুরু করেছে পুরনো খেলা। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ভারতের অংশ দাবি করছে দেশটির কতিপয় সংবাদমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এনিয়ে চালানো হচ্ছে অপপ্রচার। বাংলাদেশের এই অঞ্চলটি দ্রুত দখলে নিতে উস্কানি দিচ্ছে সরকারকে। ভারতের আধিপত্যবাদী রোগ অনেক পুরনো। ১৯৪৭ সালে ভারত মানতে পারেনি মুসলিম অধ্যুষিত স্বাধীন পাকিস্তানের অস্থিত্ব। অখণ্ড বাংলা ভাগের ঘটনাটিও ঘটে তৎকালীন নেতাদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও। এখনো তারা বিশ্বাসী অখণ্ড ভারতে। দিল্লীতে ২০২৩ সালের জুনে উন্মুক্ত করা হয়েছে নতুন সংসদ ভবন। যেখানে রাখা হয়েছে ‘অখণ্ড ভারত’এর একটি মানচিত্র। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ প্রতিবেশী সব দেশকে দেখানো হয়েছে তাতে। ‘অখণ্ড ভারত’ ধারণাটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের মূল মতাদর্শগত চিন্তার ফসল। তাদের মতে ভারত হলো প্রাচীন সাংস্কৃতিক ভারতবর্ষ। একটি দেশের সংসদ ভবনে প্রতিবেশী দেশগুলোর মানচিত্র রাখা নিশ্চিতভাবেই একটা ভুল বার্তা দিয়েছে তাদেরকে। হিন্দুত্ববাদের পরিচ্ছেদে আরব সাগরের নাম বলা হয়েছে সিন্ধু সাগর। আর বঙ্গোপসাগরকে গঙ্গাসাগর। ভারতকে একটা হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরারই প্রচেষ্টা চলছে এসবের মধ্যে দিয়ে।বাংলাদেশ চায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে পারস্পরিক মর্যাদা সম্পন্ন সুসম্পর্ক। ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের প্রতি হতে হবে শ্রদ্ধাশীল। সরে আসতে হবে আধিপত্যবাদী মনোভাব থেকে। প্রতিবেশী সম্পর্কে আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্ট তার “মেনডিঙ ওয়াল” বইয়ে লিখেছেন-“গুড ফেনসেস মেইক গুড নেইবারস।” বাংলাদেশ এমন উদারনীতিতে বিশ্বাসী হলেও ভারত বাংলাদেশের গোটা সীমান্তকে ঘিরে ফেলেছে কাঁটাতারের ফেনস বা বেড়া দিয়ে।
নিউজউইক ম্যাগাজিন- ভারতের মানচিত্রে বাংলাদেশ
আমেরিকার প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন নিউজউইক ১৯৮৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারতের নির্বাচন নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপায়। নিউজউইক এর প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘এন্ড অফ এ ডাইনেস্টি’। ভারতের রাজনীতি ও নির্বাচনে কংগ্রেস এবং নেহেরু পরিবারের পতনকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয় প্রতিবেদনটি। ‘৮৯ সালের ২২ থেকে ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভারতের ৯ম লোকসভা নির্বাচনে চরম ভরাডুবি ঘটে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের। ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে ২০৭ আসনে হেরে যায় কংগ্রেস। লোকসভার দু’টি নির্বাচনের ফলাফল এবং কংগ্রেসের বিপর্যয়ের বিষয়টি তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করে নিউজউইক ম্যাগাজিন। প্রতিবেদনটির দু’টো মানচিত্রেই বাংলাদেশকে দেখানো হয় ভারতের অংশ হিসেবে। প্রতিবেদনটি পড়ে আমি খুব মর্মাহত হই। নিউজউইক কীভাবে এমন একটি বড় ভুল করতে পারে স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে। এই সময়টায় আমি লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী বেনগাজীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। সাড়ে তিন দশক আগে নিউজউইক এর প্রতিবেদনটি দেখে পরদিনই কড়া প্রতিবাদ পাঠাই নিউইয়র্কে, নিউজউইক সম্পাদক বরাবর। প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি, ১৯৯০, এশিয়া প্যাসিফিক এডিশনে ভুল সংশোধনী প্রকাশ করে নিউজউইক। আমার নিকট পর পর দু’টি চিঠি পাঠায়। এরপরও আমার কোনো অভিযোগ আছে কিনা জানতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। চিঠির কপি দু’টো এখনও আছে।
বাংলাদেশিরা কেন ভারতের অংশ হবে?
বিজয়ের ৫৪তম দিবস উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে দেশ। এখনও বিতর্ক চলছে বাংলাদেশের উপর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রভাব এবং পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী’র মতো এমন মন্তব্য করেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন। এমন মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচনা হয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম রাষ্ট্র। লাখো মানুষের আত্মত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতীয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ এ অর্জনকে রাখতে হবে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে। বাংলাদেশ কেন ভারতের অংশ হবে? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমারেখা। একটি জাতীয় পতাকা। জাতীয় সংসদ ও সংবিধান। আয়তনের দিক থেকে যতো ক্ষুদ্রই হোক না কেন, এ রাষ্ট্রের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনাময় একটি জনগোষ্ঠী। জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক ফোরাম ও সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বাংলাদেশ। নাগরিক হিসেবে আমাদের নিকট সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশের মর্যাদা, সম্মান ও ভাবমূর্তি। বাংলাদেশেকে নিয়ে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি যখন নেতিবাচক মন্তব্য করেন তখন স্বভাবতই দেশের নাগরিকদের আত্ম-সম্মান বোধে লাগে। তারা আহত হন মানসিকভাবে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে ভারতের বৈরীতা
ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাংলাদেশকে ঘিরে রেখেছে তিন দিক থেকে। বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম এই স্থল সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৫৮২ মাইল। আয়তনের দিক থেকে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ২২ গুণ বড়। বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে। জনসংখ্যাও বাংলাদেশের ৮গুণের অধিক। পারমাণবিক শক্তির অধিকারী ভারত জন্মগতভাবেই ‘বিগ ব্রাদার’সুলভ আচরণ করে আসছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে। প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের সাথেই সুসম্পর্ক নেই ভারতের। চীন ও পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছে বার কয়েক। বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে প্রভু নয়, বন্ধু-প্রতীম প্রতিবেশী হিসেবে দেখতে চায়। পারস্পরিক সম-মর্যাদার ভিত্তিতে সহ-অবস্থানে থাকতে চায় বাংলাদেশের জনগণ। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর বৃটিশ ভারতের যে সকল হিন্দু এই সিদ্ধান্ত রদ করার জন্য অসহযোগ আন্দোলন করেছে। তারাই আবার ‘৪৭-এ পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশ হলে থেকেছে নির্বিকার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া বাংলাদেশকে এখন সুযোগ নেই অন্য কোনো দেশের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। বাংলাদেশিদের বন্ধুসুলভ এ মনোভাব স্থায়ী করতে হলে ভারতকে অভ্যস্ত হতে হবে একই ধরনের আচরণে। ভারতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার বাংলাদেশ। ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশ থেকে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়। বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতের জন্য ট্রানজিট এখন অবারিত। ফারাক্কা, তিস্তা বাধসহ প্রধান নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বরাবরই বঞ্চিত করছে ভারত। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় বিপুলসংখ্যক রোগী এবং পর্যটক। এটা ছিল বড় ধরনের আয়ের উৎস ভারতের। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য ভারসাম্যহীন। ভারত সীমান্তে পাখীর মতো হত্যা করছে বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের রমরমা প্রদর্শনী চললেও বাংলাদেশি চ্যানেল প্রদর্শনের সুযোগ নেই ভারতে। সবকিছুতেই ভারতের একতরফা মুনাফা। একক অধিকার। একাত্তরে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করেনি। ভারতের টার্গেট ছিলো তার আজন্ম শত্রু পাকিস্তানকে ভেঙে দুর্বল করে দেয়া। তবে শরার্থীদের আশ্রয় এবং অন্যান্য সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। ভারত ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বললেও কার্যত একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। আর একটি বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এপার বাংলা-ওপার বাংলা বলে এখন কিছু নেই। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। আর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। একটি দেশের অঙ্গরাজ্য আরেকটি স্বাধীন দেশের সমতুল্য হতে পারে না। এপার বাংলা ওপার বাংলা অন্তরে ধারণ করার কারণেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দিল্লী বিমানবন্দরে অসম্মানিত হয়েছেন বারবার। এধরণের আচরণ বিব্রতকর। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অসম্মানের। আমরা চাই ভারত- বাংলাদেশের সম্পর্ক শক্তিমত্তা নয় নির্ণিত হোক দ্বিপাক্ষিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে।
লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ।
নিউ ইয়র্ক।