ঢাকা ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ নিয়ে নতুন রোডম্যাপ পাকিস্তানের

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ০২:৪১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
  • / 278

১৯৭১ সাল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিরা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হয়। এই যুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙালি প্রাণ হারান, যা পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের গভীর ক্ষত তৈরি করে।

মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম কয়েক বছর, বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিল শীতল। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর, বাংলাদেশে সামরিক শাসনের উত্থান ঘটে। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হতে শুরু করে।

১৯৯০-এর দশকে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ পুনরায় জোরদার হয়। তখনও রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপি। তাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাণিজ্য ও কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো হয়।

২০১০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসে একটি জটিল ও তীব্র পর্যায় শুরু হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ বছরের শাসনামলে এই সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ও কূটনৈতিকভাবে দূরত্বপূর্ণ ছিল।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক পুনরায় আলোচনায় এসেছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নতুন ভিসা নীতিমালার ঘোষণা, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা এই সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুননির্মাণের উদ্যোগ নেয় পাকিস্তান। ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের নতুন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ও সম্পর্ক পুন:স্থাপনের কৌশল তৈরি করতে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আমন্ত্রণ জানান সাবেক হাইকমিশনার ও কূটনীতিকদের।

এই বৈঠকের ফলাফল স্বরূপ, ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূতসহ পাকিস্তানের কূটনীতিকরা বাংলাদেশের জন্য একটি রোডম্যাপ ও কৌশলপত্র প্রস্তুত করেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়, সেই পরিকল্পনা নিয়েই এই কৌশলপত্রটি তৈরি করা হয়।

সম্পর্ক উন্নয়নের এই নতুন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, পাকিস্তান ঘোষণা করেছে যে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভিসা ফি ছাড়াই পাকিস্তানে যাতায়াত করতে পারবে। এটি কেবল সম্পর্ক উন্নয়নের একটি কৌশল নয় বরং দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি প্রয়াস।

সচিবালয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনার আহমদ মারুফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের কথা বলা হয়। এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বন্যা পুনর্বাসন, পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, সরাসরি ফ্লাইট চালু, কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা এবং মানব পাচার প্রতিরোধসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।

শুধু তাই নয়; সম্প্রতি পাকিস্তানে এক আন্দোলনে দেশটিতে পাকিস্তানি নাগরিকরা বাংলাদেশের পতাকা উড়ায় এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।

পাকিস্তানের হাইকমিশনার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শুধু তাই না; ৫৩ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা প্রদর্শণ করা হয়। যা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন

বাংলাদেশ নিয়ে নতুন রোডম্যাপ পাকিস্তানের

সময় ০২:৪১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

১৯৭১ সাল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিরা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হয়। এই যুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙালি প্রাণ হারান, যা পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের গভীর ক্ষত তৈরি করে।

মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম কয়েক বছর, বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিল শীতল। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর, বাংলাদেশে সামরিক শাসনের উত্থান ঘটে। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হতে শুরু করে।

১৯৯০-এর দশকে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ পুনরায় জোরদার হয়। তখনও রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপি। তাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাণিজ্য ও কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো হয়।

২০১০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসে একটি জটিল ও তীব্র পর্যায় শুরু হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ বছরের শাসনামলে এই সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ও কূটনৈতিকভাবে দূরত্বপূর্ণ ছিল।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক পুনরায় আলোচনায় এসেছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নতুন ভিসা নীতিমালার ঘোষণা, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা এই সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুননির্মাণের উদ্যোগ নেয় পাকিস্তান। ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের নতুন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ও সম্পর্ক পুন:স্থাপনের কৌশল তৈরি করতে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আমন্ত্রণ জানান সাবেক হাইকমিশনার ও কূটনীতিকদের।

এই বৈঠকের ফলাফল স্বরূপ, ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূতসহ পাকিস্তানের কূটনীতিকরা বাংলাদেশের জন্য একটি রোডম্যাপ ও কৌশলপত্র প্রস্তুত করেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়, সেই পরিকল্পনা নিয়েই এই কৌশলপত্রটি তৈরি করা হয়।

সম্পর্ক উন্নয়নের এই নতুন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, পাকিস্তান ঘোষণা করেছে যে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভিসা ফি ছাড়াই পাকিস্তানে যাতায়াত করতে পারবে। এটি কেবল সম্পর্ক উন্নয়নের একটি কৌশল নয় বরং দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি প্রয়াস।

সচিবালয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনার আহমদ মারুফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের কথা বলা হয়। এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বন্যা পুনর্বাসন, পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, সরাসরি ফ্লাইট চালু, কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা এবং মানব পাচার প্রতিরোধসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।

শুধু তাই নয়; সম্প্রতি পাকিস্তানে এক আন্দোলনে দেশটিতে পাকিস্তানি নাগরিকরা বাংলাদেশের পতাকা উড়ায় এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।

পাকিস্তানের হাইকমিশনার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শুধু তাই না; ৫৩ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা প্রদর্শণ করা হয়। যা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।