ঢাকা ১০:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ থেকে রেল ট্যানজিট চায় ভারত

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১০:২৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪
  • / 258

ভারত বাংলাদেশের সড়ক পথে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি, বাংলাদেশের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশ থেকে নানা সুবিধা পাচ্ছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ি প্রতিবেশি এ দেশটি এবার বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করতে চায়। মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমাতে চায় দেশটি।

ভারত সরকার চাচ্ছে, তাদের ট্রেন বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে প্রবেশ করে নীলফামারীর চিলাহাটি বন্দর হয়ে বের হয়ে যাবে। আপাতত পণ্য পরিবহনের জন্য রুটটি ব্যবহার করার কথা বলেছে তারা। এজন্য পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর অনুমতিও চেয়েছে ভারত সরকার। বর্তমানে প্রস্তাবটি বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ‘সিগনাল’র অপেক্ষায় রয়েছে।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে ১৪টি নতুন রেলপথে সংযুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তারা। যার মধ্যে সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ৮৬১ কিলোমিটার নতুন পথ তৈরি করতে চায় তারা।

বাংলাদেশের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং যশোর সীমান্তে এসব নতুন সংযোগের পাশাপাশি পুরনো রেলপথ সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। এর আওতায় পদ্মা সেতুও ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।

ভারতের নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা সব্যসাচী দে এক বিবৃতিতে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ও কুচ বিহার জেলার গিতলদাহা থেকে বাংলাদেশের হিলি, পার্বতীপুর, কাউনিয়া, লালমনিরহাট ও মোগলহাট পর্যন্ত প্রস্তাবিত ৩২ কিলোমিটার রুটে লাইন স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ১৪ কিলোমিটার হবে নতুন রেলপথ, বাকি পথ উপযোগী করে তোলা হবে।

এছাড়া বালুরঘাট থেকে হিলি, গাইবান্ধা হয়ে মাহেন্দ্রগঞ্জ, তুরা, মেন্দিপাথার সেকশনে ২৫০ কিলোমিটার রেললাইনে স্থাপন করতে চায় ভারত।

বিহারের মাঙ্গুরজান থেকে বাংলাদেশের পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় হয়ে পশ্চিমবঙ্গের কুচ বিহারের হলদিবাড়ি পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির।

আরেকটি রুট হবে পশ্চিমবঙ্গের ডালখোলা থেকে বাংলাদেশের পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় হয়ে কুচ বিহারের হলদিবাড়ি পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য হবে ৮০ কিলোমিটার।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুর থেকে বিরল, পার্বতীপুর, কাউনিয়া হয়ে গিতলদহ পর্যন্ত হবে ৩২ কিলোমিটার রেলপথ।

দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়া থেকে ফেনী, চট্টগ্রাম রেল রুটটি হবে ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ, যার মধ্যে একেবারে নতুন করে তৈরি করা হবে ৩৮ কিলোমিটার; বাকি ৯৩ কিলোমিটার উপযোগী করতে হবে অর্থাৎ গজ পরিবর্তন করতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার গেদে থেকে বাংলাদেশের দর্শনা, ঈশ্বরদী, টঙ্গী, ভৈরব বাজার, আখাউড়া হয়ে আগরতলা পর্যন্ত ট্রেন চালাতে চায় ভারত, যেখানে এ রুটে ১০০ কিলোমিটার লাইনে গজ পরিবর্তন করতে হবে।

এ ছাড়া পেট্রাপোল থেকে বেনাপোল, যশোর, রূপদিয়া, নড়াইল, পদ্মা সেতু হয়ে আগরতলা পর্যন্ত লাইন বসাবে ভারত।

সমালোচকরা বলছেন, এসব রুটের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে। ওইসব রাজ্যে পণ্য পরিবহনে আগে যেখানে কয়েক দিন সময় লাগতো; এখন কয়েক ঘন্টায় পৌছে যাবে। বিনিময়ে বাংলাদেশ পাবে নামমাত্র শূল্ক। অথচ এসব অঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুযোগ ছিলো।

শেয়ার করুন

বাংলাদেশ থেকে রেল ট্যানজিট চায় ভারত

সময় ১০:২৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪

ভারত বাংলাদেশের সড়ক পথে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি, বাংলাদেশের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশ থেকে নানা সুবিধা পাচ্ছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ি প্রতিবেশি এ দেশটি এবার বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করতে চায়। মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমাতে চায় দেশটি।

ভারত সরকার চাচ্ছে, তাদের ট্রেন বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে প্রবেশ করে নীলফামারীর চিলাহাটি বন্দর হয়ে বের হয়ে যাবে। আপাতত পণ্য পরিবহনের জন্য রুটটি ব্যবহার করার কথা বলেছে তারা। এজন্য পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর অনুমতিও চেয়েছে ভারত সরকার। বর্তমানে প্রস্তাবটি বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ‘সিগনাল’র অপেক্ষায় রয়েছে।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে ১৪টি নতুন রেলপথে সংযুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তারা। যার মধ্যে সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ৮৬১ কিলোমিটার নতুন পথ তৈরি করতে চায় তারা।

বাংলাদেশের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং যশোর সীমান্তে এসব নতুন সংযোগের পাশাপাশি পুরনো রেলপথ সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। এর আওতায় পদ্মা সেতুও ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।

ভারতের নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা সব্যসাচী দে এক বিবৃতিতে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ও কুচ বিহার জেলার গিতলদাহা থেকে বাংলাদেশের হিলি, পার্বতীপুর, কাউনিয়া, লালমনিরহাট ও মোগলহাট পর্যন্ত প্রস্তাবিত ৩২ কিলোমিটার রুটে লাইন স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ১৪ কিলোমিটার হবে নতুন রেলপথ, বাকি পথ উপযোগী করে তোলা হবে।

এছাড়া বালুরঘাট থেকে হিলি, গাইবান্ধা হয়ে মাহেন্দ্রগঞ্জ, তুরা, মেন্দিপাথার সেকশনে ২৫০ কিলোমিটার রেললাইনে স্থাপন করতে চায় ভারত।

বিহারের মাঙ্গুরজান থেকে বাংলাদেশের পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় হয়ে পশ্চিমবঙ্গের কুচ বিহারের হলদিবাড়ি পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির।

আরেকটি রুট হবে পশ্চিমবঙ্গের ডালখোলা থেকে বাংলাদেশের পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় হয়ে কুচ বিহারের হলদিবাড়ি পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য হবে ৮০ কিলোমিটার।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুর থেকে বিরল, পার্বতীপুর, কাউনিয়া হয়ে গিতলদহ পর্যন্ত হবে ৩২ কিলোমিটার রেলপথ।

দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়া থেকে ফেনী, চট্টগ্রাম রেল রুটটি হবে ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ, যার মধ্যে একেবারে নতুন করে তৈরি করা হবে ৩৮ কিলোমিটার; বাকি ৯৩ কিলোমিটার উপযোগী করতে হবে অর্থাৎ গজ পরিবর্তন করতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার গেদে থেকে বাংলাদেশের দর্শনা, ঈশ্বরদী, টঙ্গী, ভৈরব বাজার, আখাউড়া হয়ে আগরতলা পর্যন্ত ট্রেন চালাতে চায় ভারত, যেখানে এ রুটে ১০০ কিলোমিটার লাইনে গজ পরিবর্তন করতে হবে।

এ ছাড়া পেট্রাপোল থেকে বেনাপোল, যশোর, রূপদিয়া, নড়াইল, পদ্মা সেতু হয়ে আগরতলা পর্যন্ত লাইন বসাবে ভারত।

সমালোচকরা বলছেন, এসব রুটের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে। ওইসব রাজ্যে পণ্য পরিবহনে আগে যেখানে কয়েক দিন সময় লাগতো; এখন কয়েক ঘন্টায় পৌছে যাবে। বিনিময়ে বাংলাদেশ পাবে নামমাত্র শূল্ক। অথচ এসব অঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুযোগ ছিলো।