ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপে ডেঙ্গু!
- সময় ১১:৪১:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
- / 50
চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে মৃত্যুর সংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার পরেই এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ লাখেরও বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন ৫ হাজারেরও বেশি। আর্জেন্টিনায়ও ডেঙ্গুর প্রকোপে মৃত্যুর সংখ্যা শ’য়ের ওপরে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের অবস্থা কিছুটা আলাদা হলেও উদ্বেগজনক; ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে এবং এ বছরই বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে চারশ’র কাছাকাছি পৌছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে দেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস বহনকারী মশার উপদ্রব বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মশা নির্মূল ব্যবস্থার দুর্বলতা।
এখন পর্যন্ত দেশে জাপানিজ এনকেফালাইটিস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া ও জিকা ভাইরাসের বাইরেও কিছু মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে রোগ নিয়ন্ত্রণ করে মৃত্যু কমানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিকিৎসকরা বলেন, ‘এখন মৌসুম পরিবর্তনের সময়। সাধারণ জ্বর অনেকেরই হয়। সে হিসাব করে অনেকেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করান না বা সময়মতো চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন না। অধিকাংশ রোগীই শেষ সময়ে এসে ভর্তি হয়। এসব কারণেই দেশে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেশি।’
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে অনেক বেশি জটিলতা তৈরি হলে চিকিৎসা দিয়েও অনেক সময় জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া হাসপাতালে রোগী ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, রোগীর শরীরে তরল ব্যবস্থাপনা (ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট) এবং অণুচক্রিকা ব্যবস্থাপনা ঠিক হচ্ছে কিনা, বাংলাদেশে তার সঠিক চিত্র পাওয়া মুশকিল।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ‘প্রতিনিয়তই ডেঙ্গু পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখা যায়। দুই-তিনদিন ধরে দেখা যাচ্ছে যে কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বিভিন্ন এলাকা বা মহল্লায় ছোট ছোট পকেটে সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা যায়। এ পকেটগুলোকে আগে চিহ্নিত করাটা খুবই জরুরি।
ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত কারণে প্রতি বছর ৪০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
ডেঙ্গুর জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণ ও উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা রোগীকে সুস্থ করে তোলে এবং মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
বিশ্বে প্রথম ডেঙ্গু দেখা দেয় ১৭৮০ সালে। এরপর ১৯৫০ সালে এশিয়ার থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়ায়। পরে ১৯৬৩ সালে ভারতের কলকাতা ও ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেখা দেয়। সে সময় ডেঙ্গুকে ঢাকা ফিভার নামে অভিহিত করা হয়।
মূলত ২০০০ সালে বাংলাদেশে সরকারিভাবে ডেঙ্গুর উপস্থিতির স্বীকার করা হয়। সে বছরই সাড়ে পাঁচ হাজার ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।
দুই দশক ধরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, রোগী ব্যবস্থাপনা ও এডিস মশা নির্মূলে কাজ করছে সরকার। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা এবং রোগী ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির এতটা ভয়াবহ হয়ে ওঠার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। প্রথমত, দেশের অপরিকল্পিত নগরায়ণ, যেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পর্যাপ্ত নয়, তা ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে।
তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং দীর্ঘ বর্ষাকাল ডেঙ্গুর বিস্তারকে আরও উস্কে দিচ্ছে। এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে শহরগুলোতে সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনও শক্তিশালী না হওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হচ্ছে।